• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

যেমন ছিল ফাতিমা (রা.)-এর বিয়ে

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ২৯ জানুয়ারি ২০২২  

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সন্তানদের মধ্যে ফাতিমা (রা.) ছিলেন সবচেয়ে আদরের। নবুয়তের পাঁচ বছর আগে তিনি খাদিজা (রা.)-এর ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। দ্বিতীয় হিজরিতে বদরযুদ্ধের পর আলী (রা.)-এর সঙ্গে বিয়ে হয় এবং তাদের পাঁচটি সন্তান জন্মগ্রহণ করে। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ইন্তেকালের ছয় মাস পর তাঁরও মৃত্যু হয়। হাদিসের ভাষায় তিনি জান্নাতি নারীদের সরদার।

বিয়ের প্রস্তাব : আলী (রা.) নিজেই রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে ফাতিমা (রা.)-কে বিয়ের প্রস্তাব দেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) জিজ্ঞেস করেন, তোমার কাছে মহর দেওয়ার মতো কিছু আছে? তিনি না উত্তর দিলে মহানবী (সা.) আলী (রা.)-এর লৌহবর্মটি বিক্রি করে মোহর দিতে বলেন। যার মূল্য ছিল চার শ দিরহাম।

বিয়ের প্রস্তুতি : বিয়ের দিন সকালে মহানবী (সা.) উম্মে আইমান (রা.)-এর মাধ্যমে প্রথমে আলী (রা.)-কে ডেকে পাঠান এবং তাঁর গায়ে পানি ছিটিয়ে দোয়া করেন। এরপর ফাতিমা (রা.)-কে ডেকে পাঠান। তিনি লজ্জা-সংকোচ নিয়ে উপস্থিত হলে নবীজি (সা.) তাঁকে বলেন, আমি আমার পরিবারের সবচেয়ে প্রিয় পাত্রের সঙ্গে তোমাকে বিয়ে দিচ্ছি। এরপর তার গায়েও পানি ছিটিয়ে দেন এবং দোয়া করেন। বিয়ের আয়োজনে অংশগ্রহণ করায় উম্মে আইমান (রা.)-এর জন্যও দোয়া করেন।

আকদ : মসজিদে নববীতে অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিয়ে সম্পন্ন হয় এবং উপস্থিত লোকদের খেজুর দ্বারা আপ্যায়ন করা হয়। মহানবী (সা.) নিজেই বিয়ের খুতবা পাঠ করেন এবং আকদ সম্পন্ন করেন।

নবীজি (সা.)-এর উপহার : তিনি নব দম্পতিকে একটি খাঁট, দুটি তোশক, একটি কম্বল, ইয়েমেনি চাদর, একটি বালিশ, পানির মশক, একটি কলস, একটি জাঁতা উপহার হিসেবে দেন।

অলিমা : ফাতিমা (রা.)-এর বাগদান সম্পন্ন হলে রাসুলুল্লাহ (সা.) আলী (রা.)-কে বললেন, বরের জন্য ওলিমা করা আবশ্যক। তখন সাদ ইবনে মুয়াজ (রা.) বলেন, আমি একটি মেষ দেব এবং আনসার সাহাবিরা এক বস্তা ভুট্টা একত্র করেন। এটা দিয়েই তাদের বিয়ের ওলিমা হয়।

মোহরে ফাতেমি : মোহরে ফাতেমির পরিমাণ হলো সাড়ে ১২ উকিয়া বা পাঁচ শ দিরহাম। আধুনিক হিসাবে হয় ১৩১.২৫ তোলা বা ১.৫৩০৯ কিলোগ্রাম রুপা। আর এক দিরহামের ওজন হলো ৩.০৬১৮ গ্রাম।

মোট কথা হলো, মোহরে ফাতেমি এক কেজি ৫৩০.৯০০ গ্রাম খাঁটি রুপা অথবা এর বাজারমূল্য। তবে এটা নিয়ে আলেমদের কিছুটা মতপার্থক্য আছে। তাই সতর্কতামূলক ১৫০ তোলা খাঁটি রুপা মোহরে ফাতেমি হিসেবে ধার্য করা উত্তম। (মুস্তাদরাকে হাকিম, হাদিস : ২৭৪২; ফতোয়ায়ে মাহমুদিয়া : ৩/২১৫; ফতোয়ায়ে রহিমিয়া : ৮/২৩১)

বর্তমান বাজারে প্রতি তোলা রুপার মূল্য ১০০০ টাকা হলে মোহরে ফাতেমির পরিমাণ হবে এক লাখ ৩১ হাজার ৫০০ টাকা।

উল্লেখ্য যে বিভিন্ন সময় রুপার দাম উঠানামা করে। তাই অবশ্যই রুপার বর্তমান বাজারদর জেনে নিতে হবে।

নবীজি (সা.)-এর বিশেষ দোয়া : আলী ও ফাতিমা (রা.)-এর বাসর রাতে নবীজি (সা.) বলেন, আলী, আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ না করে তুমি কিছু বোলো না। অতঃপর নবীজি (সা.) পানি চাইলেন। তা দিয়ে তিনি অজু করলেন এবং অবশিষ্ট পানি আলী (রা.)-এর ওপর ঢেলে দিলেন। তিনি দোয়া করলেন, ‘হে আল্লাহ, আপনি তাদের ভেতর বরকত দিন, তাদের ওপর বরকত দিন এবং তাদের সন্তান-সন্ততিতে বরকত দিন। ’

দাম্পত্য জীবন : ফাতিমা (রা.) মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আলী (রা.)-এর সংসার করেন। তাঁদের দাম্পত্য জীবন ছিল প্রায় ৯ বছরের। এই সময়ে তাঁরা ভালোবাসা ও মমত্বের সঙ্গে, ধৈর্য-সহনশীলতার সঙ্গে জীবন যাপন করেন। তাঁদের সংসারে অভাব থাকলেও কোনো অভিযোগ ছিল না। পারস্পরিক ভালোবাসায় ভরপুর ছিল তাদের দাম্পত্য জীবন। আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, একটি হাদিসে তাঁদের সংসারজীবনের সংগ্রামের একটি খণ্ডচিত্র দেখা যায়। যেখানে আলী (রা.) বলছেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে কিছু বন্দি এসেছে। তুমি গিয়ে বলো, তিনি যেন আমাদের একজন সেবক দেন। কেননা পানি আনতে আনতে আমার বুকে ব্যথা হয়ে গেছে। উত্তরে ফাতেমা (রা.) বললেন, আটা পিষতে পিষতে আমারও হাত ব্যথা হয়ে গেছে। ফাতেমা (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে গেলেন, কিন্তু সংকোচে কিছু বলতে পারলেন না। তিনি ফিরে এলেন। অতঃপর তাঁরা দুজন মিলে যখন গেলেন, তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁদের কথা শুনলেন। সেবকের পরিবর্তে তাঁদের তাসবিহ ফাতিমি শিক্ষা দিলেন এবং তাঁরাও সন্তুষ্টচিত্তে ফিরে এলেন। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ৮৩৮)

আল্লাহ তাআলা তাঁদের পাঁচটি সন্তান দান করেন। হাসান, হুসাইন, মুহসিন, উম্মে কুলসুম ও জয়নব (রা.)। তাঁদের মধ্যে মুহসিন খুব অল্প বয়সে মারা যান। হাসান ও হুসাইন (রা.)-এর মাধ্যমে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর বংশধারার বিস্তার ঘটে। মহানবী (সা.)-এর ইন্তেকালের ছয় মাস পর ফাতিমা (রা.)-এর ইন্তেকাল হয়।

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ভালোবাসা : ফাতিমা (রা.) ছিলেন মহানবী (সা.)-এর সবচেয়ে আদরের সন্তান। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে শারীরিক গঠন, চাল-চলন, চরিত্র, আলাপচারিতা ও কথাবার্তায় ফাতিমা (রা.)-এর চেয়ে এত মিল আর কারো দেখিনি। ফাতিমা (রা.) যখন রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে আসতেন, তিনি উঠে তাঁর দিকে এগিয়ে যেতেন, তাঁর হাত ধরে চুমু খেতেন এবং তাঁর আসনে তাঁকে বসাতেন। আর রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন ফাতিমার কাছে যেতেন, তথন তিনিও তাঁর জন্য উঠে আসতেন, তাঁর হাতে ধরে চুমু খেতেন এবং তাঁর আসনে তাঁকে বসাতেন। ’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৫২১৭)।