• মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ৫ ১৪৩০

  • || ০৮ রমজান ১৪৪৫

বাড়ি তৈরি টু যানবাহন, চাঁদা না পেলেই ‘হামলা’

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ৭ মার্চ ২০২১  

সাভারে বাড়ি তৈরি, ব‌্যবসা প্রতিষ্ঠান কিংবা যানবাহন কোনো কিছুই চাঁদাবাজদের হাত থেকে রেহাই পায় না। যেকোনো কাজেই গুনতে হয় চাঁদা। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, চাঁদা না দিলে হামলা চালান পাথালিয়া ইউনিয়নের স্থানীয় নেতা  কামরুল হাসান নয়ন। তিনি অনুসারীদের নিয়ে বাসা-বাড়ি, ব‌্যবসা প্রতিষ্ঠান ও যানবাহনে হামলা চালিয়ে কুপিয়ে জখম করে লুট করে নিয়ে যান মূল্যবান জিনিসপত্র ও নগদ টাকা। তার এসব কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে একাধিক বার থানায় অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি বলেও অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।

চলতি বছরের  (২০২১) ২ ফেব্রুয়ারি চাঁদাবাজির অভিযোগে নয়নের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেছেন স্থানীয় শামিম শেখ। অভিযোগে বলা হয়েছে, পানধোয়া এলাকায় বাড়ি নির্মাণ কাজ করছিলেন বাদী।  তার কাছে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন  নয়ন।  চাঁদা দিতে অস্বীকার করায়  ২ ফেব্রুয়ারি  নয়ন তার অনুসারীদের নিয়ে বাদীর বাড়িতে ঢুকে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন। এরপরও না দেওয়ায় শামিমের দুই ছেলে মো. রনি ও ফয়সালকে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করেন হামলাকারীরা।  এই ঘটনায় মামলা করলেও পুলিশ কোনো পদক্ষেপ নেয়নি বলে অভিযোগ করছেন শামিম। 

একই অভিযোগ জানালেন  চা-দোকানি নজরুল ইসলাম। তিনিও নয়নের বিরুদ্ধে ২০২০ সালের ৮ সেপ্টেম্বর আশুলিয়া থানায় মামলা দায়ের করেন। এজাহারে বলা হয়েছে, বাদীর কাছে প্রতিদিন এক প‌্যাকেট ফ্রি সিগারেট চান নয়ন। তিনি না দেওয়ায় নয়ন তাকে অফিসে  নিয়া যান। এরপর সাটার বন্ধ করে বাদীকে এলোপাতাড়ি পেটান।’ এই বিষয়ে নজরুল ইসলাম বলেন, ‘নয়ন আমার মাথায় রড দিয়া বাড়ি দেন। বহুদিন হাসপাতালে গেছি, ওষুধ খাইছি। এহনো (এখনও) আমার পায়ো (পা) ঠিক হয় নাই। মামলা করেছি।’

 নয়নের বিরুদ্ধে একই অভিযোগে ২০১৮ সালের থানায় ১৭ আগস্ট আশুলিয়া থানায় মামলা দায়ের করেন স্থানীয় স্বর্ণ ব্যবসায়ী কার্তিক চন্দ্র ঘোষ।  এজাহারে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালের ১৫ আগস্ট পানধোয়া বাজার এলাকায় পূর্ণ জুয়েলার্সে ৫০ হাজার টাকা চাঁদার জন্য দিনে দুপুরে হামলা চালান নয়ন ও তার সঙ্গেীরা।  দোকানের শোকেস ও সিন্দুক ভেঙে প্রায় সাড়ে ৭ ভরি স্বর্ণ, ২৯২ ভরি রুপা ও নগদ প্রায় সাড়ে ১০ লাখ টাকা লুট করে নিয়ে যান নয়ন ও তার সঙ্গীরা।  

পানধোয়া বাজার সমিতির সভাপতি এরশাদ হোসেন বলেন, ‘নয়ন মাঝে মধ্যে বাজারের ব্যবসায়ীদের ওপর নির্যাতন চালান। বিভিন্ন সময় তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে ভুক্তভোগী ও এলাকাবাসী মিলে মানববন্ধন করেছি। কিন্তু আমরা কোনো সুফল পাইনি। বরং বারবার তার অত্যাচারের শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ।’ 

এই অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন কামরুল হাসান নয়ন। তিনি বলেন, ‘আপনারে আমি কী বলবো? আমার ভাষা আমি হারাই ফালাইছি। এই মারামারির (শামিম শেখের অভিযোগ)  সম্বন্ধে আমি কিছুই জানি না। এখন আমার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ আছে, তারা আমাকে এই হেস্ত-নেস্ত করতেছে।’

তার বিরুদ্ধে  চাঁদাবাজির মামলা প্রসঙ্গে নয়ন বলেন, ‘আমার এলাকায় রিকশায় চাঁদা উঠাইতো। ওই চাঁদাটা আমি বন্ধ করাইছি। সেটা রিকশাওয়ালাদের ডাইকা জিজ্ঞাস কইরেন। কাঁচাবাজারের চাঁদাটাও আমি বন্ধ করেছি। আর এসব কারণে ক্ষুব্ধ হয়েই প্রতিপক্ষ আমার বিরুদ্ধে এসব মিথ্যা মামলা দিছে।’ 

নয়নের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও মারামারির অভিযোগ পাওয়া গেছে বলে স্বীকার করলেন আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ জিয়াউল ইসলাম। তিনি  বলেন, ‘পানধোয়া বাজারে চাঁদার জন্য বাড়ি নির্মাণ কাজে বাধা ও মারধর করে জখমের ঘটনায় অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত চলছে। আমি তদন্তকারী অফিসারের সঙ্গে কথা বলবো।’ অভিযোগ প্রমাণিত হলে আইনি ব‌্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও তিনি জানান।