• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

লন্ডনে তারেকের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ২৩ নভেম্বর ২০১৮  

হিসাব বহির্ভূত অস্বাভাবিক লেনদেনের অভিযোগে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমানের ব্যাংক হিসাব স্থগিত করেছে ব্রিটিশ সরকার। অস্বাভাবিক লেনদেনের কারণ অনুসন্ধান, অর্থের উৎস সম্পর্কে নিশ্চিত হতে তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে।

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক জিয়া বর্তমানে লন্ডনে বসবাস করছেন। লন্ডনের বিলাসবহুল এলাকায় তারেকের বসবাস নিয়ে বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে একাধিকার খবরও প্রকাশিত হয়েছে। বর্তমানে জ্ঞাত কোনো আয় না থাকলেও সেখানে তারেক রহমানের বিলাসবহুল জীবনযাপন নিয়ে বিএনপিসহ নানা মহলে আলোচনা-সমালোচনা, গুঞ্জন আছে। এদিকে সাজাপ্রাপ্ত তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে দিতে ও তার বিলাসবহুল জীবনযাপন নিয়ে একাধিকবার ব্রিটেন সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে সেখানে বসবাসকারী প্রবাসী বাঙ্গালিরা। তাদের দাবির প্রেক্ষিতে, তারেক রহমানের উপর গোয়েন্দা নজরদারি বাড়িয়ে দেয় ব্রিটিশ সরকার। বিএনপির নেতৃত্বাধীন দুই সরকারের আমলে তারেক রহমান বিপুল সম্পদ অর্জন ও দেশে বিদেশে নামী-বেনামী সম্পত্তির অভিযোগও জানা ব্রিটিশ গোয়েন্দাদের।

তাই বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনের আগে তারেক রহমানের জীবনযাপন, গতি-বিধি ও আয়ের উৎসের উপর কড়া নজর রাখা শুরু করে বিট্রিশ সরকারের বিভিন্ন বিভাগ। সম্প্রতি বিএনপি যুক্তরাজ্য শাখার কর্মী শামসুদ্দিন ন্যাটওয়েস্ট ব্যাংকের স্ট্রাটফোর্ড ব্রাঞ্চে তারেক জিয়ার অ্যাকাউন্টে ৪ টি আইডি কার্ড ব্যবহার করে ৩০ হাজার পাউন্ড ক্যাশ জমা দিতে গেলে সন্দেহ হয় ব্যাংক কর্মকর্তাদের। ব্যাংক কর্মকর্তারা সেই পাউণ্ড জমা নিতে ‘আপাত অস্বীকৃতি’ জানিয়ে ব্রিটিশ গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তাদের ডেকে আনে। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা উপস্থিত হয়ে শামসুদ্দিনকে ৫ হাজার পাউণ্ড ওই হিসেবে দেওয়ার কারণ ও অর্থের উৎস সম্পর্কে জানতে চাইলে বেরিয়ে আসে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য।

তদন্তে জানা গেছে, সম্প্রতি ন্যাটওয়েস্ট ব্যাংকে থাকা তারেক রহমানের ওই হিসাবে ৮/১০ মিলিয়ন পাউণ্ড লেনদেন করা হয়েছে। এর বেশিরভাগ অর্থ এসেছে দুবাই, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও বাংলাদেশ থেকে। তারেক রহমানের ব্যাংক হিসেবে আকস্মিক পাউন্ডের লেনদেন বেড়ে যাওয়ায় প্রবাসীদের অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পান তারা।

লন্ডনে থাকা একটি সূত্র জানিয়েছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে দারুণ সক্রিয় বিএনপি চেয়ারপার্সন (ভারপ্রাপ্ত) তারেক রহমান। লন্ডন থেকে তার একক সিদ্ধান্তে বিএনপি পরিচালনা করা হচ্ছে। নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার তিনি লন্ডনে বসে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নিচ্ছেন। নির্বাচনে যাতে বিএনপি ক্ষমতায় আসে সে জন্য বহির্বিশ্বে নানা জায়গায় লবিং-তদবির শুরু করেছেন। বিশেষ করে মার্কিন প্রশাসনকে বিএনপির দিকে সহানুভূতিশীল করতে ব্যাপক অর্থ খরচ করা হচ্ছে।

তদন্তে জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রের দুটি লবিং ফার্মকে নিয়োগ দিয়েছে বিএনপি। এ জন্য সব মিলিয়ে খরচ করার কথা ১ লাখ ৬০ হাজার ডলার (১ কোটি ২৮ লাখ টাকা)। এছাড়াও বিএনপির পক্ষে লন্ডনপ্রবাসী আবদুস সাত্তার এ বছরের আগস্ট থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত সময়ের জন্য ব্লুস্টার স্ট্র্যাটেজিস নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ করেছে।
চুক্তির বিবরণে দেখা যায়, এ বছরের আগস্ট মাসের জন্য ২০ হাজার ডলার বা ১৬ লাখ টাকা এবং পরের চার মাসের প্রতি মাসের জন্য ৩৫ হাজার ডলার (২৮ লাখ টাকা) করে পাবে ব্লুস্টার স্ট্র্যাটেজিস। আর ব্লুস্টার স্ট্র্যাটেজিস এই কাজের জন্য রাস্কিপার্টনার্স নামের আরেকটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে।
বিএনপির এই লবিস্ট নিয়োগ-সংক্রান্ত নথিতে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপে বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনে বিএনপির লক্ষ্যগুলো সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরির পরিকল্পনা তৈরি ও বাস্তবায়ন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে বিএনপির স্বার্থের বিষয়টি নীতিনির্ধারক ও গণমাধ্যমে তুলে ধরা এবং সরকারগুলোর সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনার কৌশল নির্ধারণ। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং নীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বিএনপির অবস্থান তুলে ধরতে ভাষ্য তৈরিও এই চুক্তির অংশ।

এ ছাড়া, করভিস কমিউনিকেশনস, এলএলসির জমা দেওয়া বিবরণী অনুযায়ী, বিএনপি যুক্তরাষ্ট্র শাখার পক্ষে ডন হক নামের এক ব্যক্তি ২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে শুধু একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রচারের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন। তবে, সেই সেবার অর্থমূল্য বিবরণীতে ঘোষণা করা হয়নি।
এর আগে ২০১৫ সালেও বিএনপির পক্ষে ব্রিটিশ আইনজীবী টোবি ক্যাডম্যান যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাকিনগাম্প স্ট্রস হাওয়ার অ্যান্ড ফেল্ড এলএলপির সঙ্গে একটি চুক্তির জন্য আলোচনা করেন। প্রকাশিত চুক্তির খসড়ায় দেখা যায়, মাসিক ৪০ হাজার ডলারে (৩২ লাখ টাকা) চুক্তিবদ্ধ হওয়ার প্রস্তাব দিলেও প্রতিষ্ঠানটি পরে মাসিক ফি ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ ডলারে (৬৪ লাখ টাকা থেকে ৮০ লাখ টাকা) নির্ধারণের অঙ্গীকার দাবি করে।

তারেক রহমানের অ্যকাউন্ট জব্দের কারণ জানতে চাইলে ন্যাটওয়েস্ট ব্যাংকের তরফ থেকে জানানো হয়, ‘তারেক রহমান বার্ষিক সেল্ফ এসেসমেন্টে তার আয়-ব্যায়ের যে হিসাব দেখিয়েছেন সেখানে হিসাববহির্ভূত অধিক লেনদেনের জন্য ইউকে এইচএম রেভিনিউ তারেকের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট স্থগিত করে দিয়েছে।’