• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

হারিয়ে যাওয়া মেয়েকে ২৩ বছর পর ফিরে পেলেন বাবা

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯  

৭ বছর বয়সে হারিয়ে যাওয়া একমাত্র মেয়েকে সাংবাদিকের সহযোগিতায় ২৩ বছর পর ফিরে পেলেন দেলদুয়ার উপজেলার ডুবাইল ইউনিয়নের প্রয়াগজানী গ্রামের প্রতিবন্ধী আকবর তার মেয়ে আছিয়া (৩০) কে।  গত ২১/০২/২০১৯ ইং তারিখ দেলদুয়ার উপজেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার প্রতিনিধি অপু তালুকদার শিপলুর দেলদুয়ার হাসপাতাল সংলগ্ন শাপলা ফার্মেসীর সামনে এসে এক ব্যক্তি মটর সাইকেল ব্রেক করেন।

মটর সাইকেলে বসা মেয়েটি সাংবাদিককে জিজ্ঞেস করেন ভাই পুরাতন বাসস্ট্যান্ড কোথায়। সাংবাদিক বলেন সামনে। এর পর মেয়েটি বললেন ২০ বছর পূর্বে ট্যাম্পু চলতো এবং ছোট একটি হাসপাতাল হলুদ রঙ্গের বিল্ডিং  পাশে পাকা রাস্তা এমন জায়গা দেলদুয়ারের  কোথায় আছে। তখন সাংবাদিক তাকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কাউকে খুঁজছেন ? তখন মেয়েটি মটর সাইকেল থেকে নেমে সাংবাদিকের দোকানের সামনে এসে দাঁড়ালে সাংবাদিক বসতে বললেন এবং পরিচয় জানতে চাইলেন। তখন ওনারা পরিচয় দিলেন স্বামী-স্ত্রী। ঢাকা মীরপুর-১১ নম্বর থেকে এসেছি বলেই মেয়েটি কাঁদতে শুরু করলেন। কাঁদতে কাঁদতে মেয়েটি বললেন আমার যখন ৭ বছর মা তখন অসুস্থ্য সংসারে অভাবের তাড়নায় খাবার যোগাতে বিভিন্ন বাড়ি ঘুরতে ঘুরতে হারিয়ে যাই। ঢাকায় এক বাসায় কাজ করি। সেখানে বিভিন্ন অত্যাচারের কারণে  অতিষ্ঠ হয়ে পাশ্ববর্তী এক বাসায় কাজ নেই। সে বাসার মালিক জানেন যে, আমার বাবা মা নেই। যার দরুন তার মেয়ে ইতালী প্রবাসী তার কাছে আমাকে নিয়ে যায়। সেখানে ১০ বছর থাকার পর আমি খালি হাতে দেশে পাঠিয়ে দেয়। তারপর নিজের ঠিকানা খুজার জন্য বিভিন্ন জেলায় ঘুরে বেড়িয়েছি। কোথাও ঠিকানা না পেয়ে গার্মেন্টেস এ চাকুরী নেই। সেই সুবাদে মিরপুরে মেহেদী হাসানের সাথে পরিচয় হয় এবং তাকে বিয়ে করি। শুধু বাবার নাম আকবর পায়ে সমস্যা আছে ঠিকমত হাটতে পারেন না, বাড়ির পার্শ্বে স্কুল এটুকুই মনে আছে। সাংবাদিক তখন তাকে বললেন, এভাবে কি কাউকে খুঁজে পাওয়া সম্ভব। এরপর সাংবাদিক ফোনের মাধ্যমে উপজেলার পরিচিত অনেককেই ফোন দিয়ে খোঁজ খরব নেন। আকবর নামের এরকম কোন লোক আছে কিনা ? কেউ কোন খবর দিতে না পারায় আবার মেয়েটিকে সাংবাদিক জিজ্ঞেস করেন, আপনার বাবা কি কাজ করতেন মনে আছে কি ? তখন মেয়েটি বললো বাঁশের কাজ। তখন সাংবাদিকের বাঁশ শিল্পে বিখ্যাত দেলদুয়ার উপজেলার ডুবাইল ইউনিয়নের বর্ণী/প্রয়াগজানী গ্রামের কথা মনে পড়ে যায়। তাৎক্ষনিক ওই এলাকার আজিজুল নামের এক ব্যবসায়ীকে ফোন দিয়ে সাংবাদিক জানতে চান আকবর নামের কেউ তোমাদের এলাকায় আছে। যার পায়ে  সমস্যা, বাঁশের কাজ করেন। তখন আজিজুল বললেন, ভাই আছে কি হয়েছে ? সাংবাদিক বললেন কিছ্ইু হয় নাই। বলো উনার ছেলে মেয়ে কয়জন। তখন ওই ব্যক্তি বললেন আকবরের স্ত্রী মারা গেছে। এক মেয়ে ছিল সেও ছোট বেলায় হারিয়ে গেছে। মেয়ের নাম কি জিজ্ঞাসা করলে তখন বললেন আছিয়া। সব মিলে যাওয়ায় তখন মেয়েটি হাসতে হাসতে কেঁদে দিলেন। মেয়েটিকে সাথে নিয়ে প্রয়াগজানী তার নিজ বাড়িতে পৌছে দেন সাংবাদিক। বাবা মেয়ে ও মেয়ের জামাইকে পেয়ে আনন্দে বুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকেন বাবা ও আত্মীয় স্বজনরা
এ ব্যাপারে আছিয়ার পিতা আকবর মিয়া জানান, মেয়েকে হারিয়ে দীর্ঘ ২৩ বছর পাগলের মত ঘুরেছি। কোথাও খুঁজে পাই নি। হঠাৎ করে যখন  গত বৃহস্পতিবার শুনলাম মেয়েকে পাওয়া গেছে খুশিতে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। মেয়ে এবং মেয়ের জামাইকে পেয়ে আমি খুব আনন্দিত এবং সাংবাদিকের নিকট চির কৃতজ্ঞ।
ডুবাইল ইউপি চেয়ারম্যান ইলিয়াস মিয়া জানান, দীর্ঘ ২৩ বছর পূর্বে হারিয়ে যাওয়া প্রতিবন্ধী ও অসহায় আকবরের একমাত্র মেয়েকে পেয়ে খুব খুশি হন আকবর ও এলাকাবাসী। মেয়ে এবং মেয়ের জামাই আমার বাসায় এসে সাক্ষাৎ  করেছেন। এলাকাবাসী ও অসহায় পরিবারের পক্ষ থেকে এমন একটি মহৎ কাজের জন্য সাংবাদিককে ধন্যবাদ জানাই।