• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

বড় ধরনের স্বস্তি এসেছে ধানের বাম্পার ফলনে

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ২৯ মে ২০১৯  

খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ বাংলাদেশ নিয়ে গর্ব করার বিষয় আছে। কৃষি খাতে দেওয়া প্রণোদনা ও সরকারের বিশেষ নজর দেশের কৃষি খাতকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। বাড়ছে উৎপাদন। এবারে বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে। পক্ষান্তরে আমদানিও হয়েছে অনেক। যা শক্তিশালী মজুদ গড়ে তুলতে সহায়ক হয়েছে। সংকট আর নেই। সংকটের আশঙ্কাও নেই। পর্যাপ্ত সরবরাহ ব্যবস্থা থাকায় কেউ সিন্ডিকেট করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করার সুযোগ পাচ্ছে না। ফলে, বাজারে দাম উসকে দেওয়ার মতো ঘটনাও নেই। 
কৃষকের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তির বিষয়টি বরাবরই আলোচনায় থাকে। উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় ইদানীং এই আলোচনা বেশি। সেজন্য সরকারের পক্ষ থেকে ধান-চাল সংগ্রহ প্রক্রিয়া চালু রয়েছে। সেখানেও মধ্যস্বত্বভোগীদের কথা উঠেছে। আসলে মধ্যস্বত্বভোগী নেই কোথায়? আধুনিক বাজার ব্যবস্থায় এই সত্যকে অস্বীকার করার জো নেই। তাহলে কৃষকের রক্ষা কি হবে না? সম্ভবত, সে প্রশ্নেই চাল রপ্তানির বিষয়টি এসেছে। অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল বলেছেন, প্রয়োজনে ভর্তুকি দিয়ে হলেও চাল রপ্তানি করা হবে। পরোক্ষভাবে কৃষককে সুবিধা দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় চলে এসেছে। চাল আমদানির ওপর আমদানি শুল্ক বাড়িয়ে ইতিমধ্যে ৫২ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে। এই সময়ে আমদানি নিরুত্সাহিত করাই সরকারের উদ্দেশ্য।
বাংলাদেশে খাদ্য সংকটের বিরূপ অভিজ্ঞতা রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে বন্যা, খরার কারণে উৎপাদন বিঘ্নিত হওয়ায় সরবরাহ কম হয়েছে। তাতে বাজারে দাম চড়েছে কয়েকগুণ। ২০১৭ সালে সুনামগঞ্জের হাওরে বাঁধ ভেঙে ফসলহানি ঘটেছে। তখনো আশঙ্কা ছিল বাজারে ধান চালের সংকট হতে পারে। ইতিহাসের পাতা থেকে তথ্য নিলে দেখা যাবে, এখানে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে খাদ্য চাহিদার সংকুলানে বিঘ্ন ঘটানো হয়েছিল। ৭৪ সালের দুর্ভিক্ষও কৃত্রিম বা মনুষ্যসৃষ্ট ছিল বলে পরবর্তীতে বিভিন্ন গবেষণায় দেখানো হয়েছে। বলা হয়, সরবরাহ অব্যবস্থাপনার কারণে প্রত্যন্ত অঞ্চলে খাদ্যশস্য পৌঁছেনি তখন। নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন বলেছেন, ঐ সময়ে দেশে খাদ্য ছিল। কিন্তু ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে ছিল না।
আরো পরে সংঘটিত বড় বড় বন্যার ধাক্কা সামাল দিতে বিদেশ থেকে খাদ্য সাহায্য নিয়েছিল বাংলাদেশ। আজকের বাংলাদেশে সেসব শুধুই ইতিহাস। দেশে খাবারের জন্য হাহাকার নেই। কৃষক যদি কিছুটা মূল্য কমও পেয়ে থাকে, তা বিকল্প ব্যবস্থায় পুষিয়ে নেওয়া যেতে পারে। কৃষকের ভর্তুকি ব্যবস্থাও এখানে চালু রয়েছে। সেচ, যান্ত্রিকীকরণ কিংবা অন্য উপায়েও প্রণোদনা দেওয়া সম্ভব। কিন্তু উৎপাদন বেশি না হলে, পর্যাপ্ত মজুদ যদি না থাকতো, তবে কি মূল্য ব্যবস্থায় ভারসাম্য রক্ষা করা যেত? দাম না হয় বেড়ে যেত, সবার চাহিদা যদি না মেটানো যেত— তাহলে পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াতো? বরং ‘আমার অঢেল’ রয়েছে, তাতে খুশি থাকাই উত্তম। অর্থনীতিবিদ ড. মুহম্মদ মাহবুব আলীর মতে, স্বাধীনতার পর ‘তলাবিহিন ঝুঁড়ি’র অপবাদ ঘুচিয়ে বাংলাদেশ মধ্য আয়ের দেশের তালিকায় নাম লিখিয়েছে। মাথাপিছু আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯শ ৯ ডলারে। গড়ে সাত শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করে যাচ্ছে দেশটি। অনেকের কাছেই তা আজ ‘মিরাকল’। এ কী বাংলাদেশিদের গর্বের বিষয় নয়?