• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

সাভার উপজেলা প্রশাসনের খাল উদ্ধার অভিযান

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ১৬ মে ২০২১  

২৮২ বর্গ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে একসময়ের সাভার ছিলো বংশী, ধলেশ্বরী আর তুরাগ নদী দ্বারা বেষ্ঠিত এক সমৃদ্ধ জনপদ। এই এলাকার টোপোগ্রাফি  বলে দেয় রাজধানীর প্রবেশ মুখ এই জনপদ কতটা সমৃদ্ধ ছিলো। তিন দিকেই প্রবাহিত নদীগুলোর সাথে অসংখ্য খাল, বিল, সমতল জমির পাশাপাশি বন্যামুক্ত এলাকাও কম নয়।

একসময়ের খাদ্যে উদ্বৃত্ত, ব্যবসা বাণিজ্যে প্রসিদ্ধ আর সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে এগিয়ে থাকা সাভার এখন অপরিকল্পিত ভাবে শিল্পায়ন, নগরায়ন আর তথাকথিত আধুনিকায়নের নামে প্রায় বসবাসের অযোগ্য একটি জনপদে পরিণত হয়েছে। সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয়েছে দখলদার চক্রের অব্যাহত ভাবে এসব প্রাকৃতিক জলাশয়গুলো দখল করার কারণে।

তবে আশার কথা হলো, এইসব দখলদারদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে সাভার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম রাজীবের নেতৃত্বে সাভার উপজেলা প্রশাসন।

রবিবার  দুপুরে সাভার উপজেলার ডাকবাংলো সংলগ্ন স্থানে দীর্ঘদিন ধরে দখলে থাকা একটি খাল মাননীয় দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রীর উপস্থিতিতে এক শ্বাসরুদ্ধকর উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে দখলমুক্ত করা হয়!

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সদ্য দখলমুক্ত করা এই খালটিই ছিলো সাভার সরকারি হাসপাতাল, সাভার মডেল থানা, সাভার অধরচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়, সাভার কলেজ, সাভার গার্লস স্কুল, এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ব্যাংক কলোনি, তালবাগ, মধ্যপাড়া, দক্ষিন পাড়া এবং সাভার উপজেলা পরিষদসহ সকল স্থানের পানি প্রবাহের একমাত্র রুট। এসব এলাকার পানি এই খাল দিয়ে সরাসরি বংশী নদীতে প্রবাহিত হতো। গত ১১ মে, ২০২১ তারিখে সাভার উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় সাভার পৌরমেয়রের উত্থাপিত এই বিষয়টি নিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল আলম রাজীব হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, সাভারের সকল দখল হয়ে যাওয়া খাল ও নদী উচ্ছেদ অভিযানের মাধ্যমে দখলমুক্ত করা হবে। এরই ধারাবাহিকতায় আজ (রবিবার) এই উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হলো।

এব্যাপারে, সাভার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল আলম রাজীব বলেন, বিগত আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় এই বিষয়টি উত্থাপন করেছিলেন আমাদের সম্মানিত মেয়র মহোদয়। আমরা সেই সভায় সিদ্ধান্ত নেই সরেজমিন সেখানে যাবো। ওই সভায় আমাদের মাননীয় ত্রাণ প্রতিমন্ত্রীও উপস্থিত ছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় আজ (রবিবার) সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সাভার রাজস্ব সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি), পৌর মেয়র, উপজেলা প্রকৌশলী সহ আমরা বেদখল হয়ে যাওয়া এই খালের এখানে এসেছি। এসে দেখি আসলেই এটা শত বছরের কাজ! সাভার পৌরসভার অর্ধেক এলাকার পানিই এই খাল দিয়ে বংশী নদীতে পড়ে। তাই এই খালটা যদি ভরে যায়, তবে সাভারের অর্ধেক এলাকা পানিতে তলিয়ে যাবে এবং ভয়াবহ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হবে। এজন্যই সাভার উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই খাল দখলমুক্ত করতে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে।

মঞ্জুরুল আলম রাজীব আরও জানান, দেশরত্ন শেখ হাসিনার সরকারের নির্দেশনায় জনস্বার্থে পানির অবাধ প্রবাহ বন্ধের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সোচ্চার সাভার উপজেলা প্রশাসন। আপনারা জানেন আমরা ইতোমধ্যে ভাকুর্তা ইউনিয়নে ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ বেদখল হয়ে যাওয়া একটা খাল উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি। আরেকটি খাল উদ্ধারের প্রক্রিয়া চলছে। আসলে একদিনেও যেমন কোনো খাল ভরাট হয়না, তেমনি একদিনেই সেটা উদ্ধার করাও সম্ভব হয়না। আমরা পর্যায়ক্রমে সাভারের সকল বেদখল হয়ে যাওয়া প্রাকৃতিক খালগুলো উদ্ধার করবো। পাশাপাশি সাভারবাসীকেও অনুরোধ করবো যার যার জায়গা থেকে এব্যাপারে সচেতন হবার জন্য।

খাল উদ্ধার অভিযানে এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন- সাভার পৌর মেয়র আলহাজ্ব আব্দুল গণি, সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মাজহারুল ইসলাম, সাভার রাজস্ব সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) আব্দুল্লাহ আল মাহফুজ, সাভার উপজেলা প্রকৌশলী সালেহ হাসান প্রামাণিক, সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সফিউল্লাহ সুজন, কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য রাজু আহমেদ প্রমুখ সহ স্থানীয় কাউন্সিলর।

প্রসঙ্গত আরও উল্লেখ্য, ইতোমধ্যে মরে গেছে নয়ারহাট বাজারের উজানে সাভারের বিখ্যাত যোগী-জাঙ্গাল খাল, মৃতপ্রায় কর্নপাড়া খাল, দখল হয়ে গেছে কিংবা শিল্পকারখানার বর্জ্যের কারণে দূষিত হয়ে গেছে বিল বাঘিল, পাকুরিয়া বিল, তাতী বিল, শুকনা বিল, রইপাতা বিল, নোয়াদ্দা খাল, রক্তারপুর খাল প্রভৃতি। এদিক বিবেচনায় সম্প্রতি সাভার উপজেলা প্রশাসনের এই অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে পরিচালিত অভিযানে আশার আলো দেখছেন সাভারবাসী।