• শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

গাজীপুরে চার ছিনতাইকারী গ্রেপ্তার, স্বীকারোক্তি

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ৩০ এপ্রিল ২০১৯  

সাইফুল মোল্লা ঢাকায় রিকশা চালাতেন। আর হারুন মিয়া ছিলেন সিকিউরিটি গার্ড। টিকিটের টাকা বাঁচাতে তারা উঠেছিলেন ট্রেনের ছাদে। কিন্তু স্বজনের জন্য বহু কষ্টে জমানো সামান্য অর্থটুকুও তারা বাড়ি নিয়ে যেতে পারেননি। ছিনতাইকারী খুনি কেড়ে নিয়েছে তাদের জীবনও। জয়দেবপুরের ধীরাশ্রম এলাকায় গত মঙ্গলবার রাতের এই ঘটনায় চার তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে রেলওয়ে পুলিশ।

রেলওয়ে থানার ওসি ইয়াসিন ফারুক মজুমদার জানান, পুলিশ তদন্তে নেমে ধীরাশ্রম এলাকার বাসিন্দা মোশারফ হোসেনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অন্য তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা হলো রিংকন আকন্দ ওরফে রানা আকন্দ, রবিন নয়ন মিয়া। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা এই হত্যাকাণ্ডের লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছে। তাদের ১০ দিন রিমান্ডের আবেদন করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

রেলওয়ে থানা-পুলিশ জানায়, গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ধীরাশ্রম রেলস্টেশনের দক্ষিণ পাশে মোল্লাপাড়া লেভেলক্রসিংয়ের পশ্চিম পাশে ৩৫ বছর বয়সী এক ব্যক্তির লাশ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় লোকজন। খবর পেয়ে জয়দেবপুর রেলওয়ে পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই সুব্রত দাস ঘটনাস্থলে গিয়ে সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠান। পরদিন বুধবার  সকালে একই এলাকায় আরেকটি লাশ পাওয়া যায়। কাছাকাছি স্থানে দুজনের লাশ পাওয়ার পর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) দুই লাশের আঙুলের ছাপ নিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পরিচয় জানতে পারে। নিহতদের একজন সাইফুল মোল্লার (৩৮) বাড়ি পাবনার চাটমোহর থানার শিবপুর গ্রামে। অন্যজন হারুন মিয়ার (২৫) বাড়ি টাঙ্গাইলের ঘাটাইলের আনেহলা গ্রামে। খবর পেয়ে নিহত সাইফুল মোল্লার ভাই মফিজুল মোল্লা গত রবিবার ঢাকা রেলওয়ে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

গ্রেপ্তার হওয়া চারজন জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, গত মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে টঙ্গী রেলওয়ে স্টেশনে রানা, নয়ন, শাহীন, মোশারফ, সাগর, সাইফুল, রবিন, চিকু হূদয় ছিনতাইয়ের উদ্দেশে জড়ো হয়। সন্ধ্যা ৭টার দিকে তারা টঙ্গী থেকে অন্য একটি ট্রেনে চড়ে ঢাকা বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনে আসে। রাত ৯টার দিকে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা চিত্রা ট্রেনটি বিমানবন্দর স্টেশনে পৌঁছার পর তারা পেছনের বগির ছাদে ওঠে। ট্রেনটি টঙ্গী স্টেশন পার হওয়ার পর তারা দেখতে পায় একটি বগির ছাদের ওপর চারজন লোক বসে আছে। তারা তাদের কাছে গিয়ে ছোরা দেখিয়ে যা কিছু আছে দিয়ে দিতে বলে। চারজনের মধ্যে দুজন দৌড়ে অন্য বগির ছাদে চলে যায়। অন্য দুজন তাদের কাছে থাকা ৪০০ টাকা মোবাইল ফোনসেট দিতে চাননি। সময় ছিনতাইকারী মিলে তাদের মারধর করে টাকা ফোনসেট কেড়ে নেয়। এরপর রাতের অন্ধকারে তারা দুজনকে ধাক্কা দিয়ে চলন্ত ট্রেনের ছাদ থেকে লাইনের দুই দিকে ফেলে দেয়।

নিহত দুজনের কাছ থেকে ছিনতাই করা মালামালের মধ্যে রবিনকে একটি নকিয়া মোবাইল ফোনসেট ভাত খাওয়ার জন্য ১০০ টাকা দেয় এবং নয়নকে ৩০০ টাকা দেয় রানা। পরবর্তী সময়ে ট্রেনটি জয়দেবপুর রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছলে ট্রেনটি পুরোপুরি থামার আগেই ওরা আউটার সিগন্যালে নেমে যায়।