• শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

পাক সেনাদের হাত থেকে বেঁচে এসেছিলেন নায়েব আলী

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ১০ ডিসেম্বর ২০১৮  

পাক সেনারা নির্যাতন চালিয়ে গলায় কুড়ালের কোপ মেরে গর্তে যাকে ফেলে দিয়েছিলো সেই  যুবক এখন বৃদ্ধ নায়েব আলী (৭০) নাম চলাচল করতে কষ্ট হয়, বয়স হয়েছে তাই চোখেও দেখে না তেমন একটা  স্বাধীনতার ৪৮ বছর পেরিয়েও  সে দিনের স্মৃতি মনে হলে আজও আঁতকে ওঠেন তিনি

পাক সেনাদের নির্মম নির্যাতনের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে দেশের অন্যান্য স্থানের মতো টাঙ্গাইলেও চলে হত্যাযজ্ঞ আর এ জন্য পাক সেনারা বেছে নেয় টাঙ্গাইল শহরের পাড়দিঘুলীয়া গ্রাম

পাগলাদেওয়ানে একটি কংক্রিট বাঙ্কার নির্মাণ করে পাক সেনারা ১৯৭১ সালের (বাংলা ৭ আষাঢ়) দিনটি ছিল শুক্রবার জুম্মার নামাজ পড়ার জন্য যখন মুসল্লীরা  মসজিদে সমবেত ঠিক তখনই পাক সেনারা ৩০/৩২ জনকে ধরে নিয়ে যায়।

 আক্রোশের কারণ ছিলো এর কয়েকদিন পূর্বে পাগলাদেওয়ান রাস্তায় নিজেদের পুঁতে রাখা  মাইন বিস্ফোরণে ৪ পাক সেনা নিহত হয় এই ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে পাক সেনারা অমানুষিক নির্যাতন শুরু করে ওই এলাকার মানুষের ওপর মসজিদ থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া ৩০/৩২ জনের মধ্যে ছিলেন সে দিনের ২৩ বছরের টগবগে যুবক চিরলা গ্রামের এই নায়েব আলী

তিনি আরো বলেন, ‘প্রথমে দুই হাত পেছনে বেঁধে বাংকারে রাখা হয় তাকে পরে পাশের সাহেব আলী নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয় সেখানে হাত-পা বাঁধা আরো ৩৫/৪০ জন মানুষ ছিলো এক সঙ্গে লাইন করে গুলি করার প্রস্তুতি শেষ হতেই খবর আসে বাংকারে ফিরে নেওয়ার  জন্য

বাংকারের পাশের বাড়িতে রেখে একটু দূরে কয়েকজনকে দিয়ে একটি গর্ত তৈরি করে নেয় পাক সেনারা এরপর দু’জন করে হাত বেঁধে নির্যাতন করতে করতে গর্তের পাশে নিয়ে যায় সেখানে কুড়াল দিয়ে মাথায় কোপ দেয় আর পা দিয়ে ঠেলে গর্তে ফেলা হয় লাশগুলো অন্যদের মতো একই ভাগ্য বরণ করতে হয় নায়েব আলীকে

তাকেও কোপ দিয়ে ফেলে দেওয়া হয় গর্তে একটু একটু বৃষ্টি হচ্ছে, অনেক রাতে জ্ঞান ফিরে দেখেন তিনি গর্তে পড়ে আছেন শরীর রক্তে মাখা না খাওয়া শরীরে দুর্বল হয়ে পড়া নায়েব আলী  ধীরে ধীরে সেখান থেকে উঠে পাশে এক আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নেন

সেখান থেকে পরের দিন হাসপাতালে চিকিৎসা নেন গলায় কোপ মারার সেই স্মৃতি চিহ্ন আজও জ্বল জ্বল করছে ‘ 

ক্ষোভ প্রকাশ করে নায়েব আলী বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সরকার ক্ষমতায় আসার পর ১৯৭১ সালে নির্যাতনের শিকার হওয়া লোকজনের জন্য অনেক কিছু সহযোগিতা করছেন শুনেছি কিন্তু আমার ভাগ্যে কিছুই জোটেনি কেউ খোঁজ রাখেনা