• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

সাভারে বামুনি খাল দখল করে নির্মাণ কাজ চলছেই

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ১৪ অক্টোবর ২০২১  

সাভারের বলিয়ারপুরে বামুনি খাল দখল করে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ কাজ কিছুতেই থামছে না। জমজম হাউজিং কোম্পানি রাত-দিন তাদের কাজ অব্যাহত রেখেছেন। জেলা প্রশাসন, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন, পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ বিভিন্ন পর্যায়ের তদন্ত কমিটি তাদের কি প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন তাও জানা যায়নি। অপরদিকে প্রশাসনের একাধিক সংস্থা যারা মানববন্ধন করেছেন খাল দখলের প্রতিবাদ করেছেন তাদেরকে ডেকে নিয়ে আন্দোলন না করার জন্য বলছেন। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলেও খাল দখল এবং জমজম হাউজিং কোম্পানির নির্মাণ কার্যক্রম কিছুতেই থামছে না। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

জানা গেছে, সাভারের বলিয়ারপুরে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী বামুনি খাল দখল করে সম্প্রতি জমজম হাউজিং কোম্পানি নানা কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। এ খাল দিয়ে এক সময়ে নানা ধরনের নৌযান চলাচল করত। স্থানীয় বাসিন্দারা বর্ষা মৌসুমে গত বছরও খাল দিয়ে নৌকা বেয়ে চলেছেন। এ বছর বর্ষা মৌসুম শুরু হতে না হতেই জমজম হাউজিং কোম্পানির মালিক হাজী নুর মোহাম্মদ লোকজন নিয়ে খালটি ভরাট করে রাতারাতি নানা ইমারাত নির্মাণ করেন। এমনকি তার উদ্যোগে খালের জায়গায় চান্দুলিয়ার কয়েক ব্যক্তির সহযোগিতায় মসজিদ নির্মাণ হচ্ছে।

এ বিষয়টি দেখতে পেয়ে সম্প্রতি যাদুর চর, মধুর চর, মেইটকা, তেঁতুলঝোড়া, বলিয়ারপুর, চান্দুলিয়ার শত শত এলাকাবাসী একত্রিত হয়ে প্রতিবাদ করেন। তারা খালের নিকটে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশে ব্যানার ও ফেস্টুন নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে মানববন্ধনে অংশ নেন। তাদের সমর্থনে সাভার পরিবেশ ও নদী রক্ষা কমিটির সভাপতি ড. রফিকুল ইসলাম মোল্লাসহ কমিটির সদস্যগণ মানববন্ধনে অংশ নেন। পরবর্তীতে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশের পর জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন, ঢাকা জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন সংস্থা তদন্ত কমিটি গঠন করেন। জমজম হাউজিং কোম্পানি তাদের রেকর্ড পত্রে বাবুনি খাল তারা দখল করেনি এবং তাদের সীমানার ভেতরে এমন কোন খালের অস্তিত্ব নেই মর্মে কাগজপত্র প্রদর্শন করেন। এমনকি তারা আরএস নকশা এবং বিআরএস নকশায় বাবুনি খালের অস্তিত্ব নেই এমন কাগজপত্র দেখাতে পারলেও সিএস নকশায় খালটির অস্তিত্ব নেই এমনটি প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়। তবে নুর মোহাম্মদ তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে মর্মে সাংবাদিকদের জানান।

খাল দখলের প্রতিবাদকারীদের অন্যতম বামুনি খাল সংলগ্ন যাদুর চর এলাকার বাসিন্দা ও লন্ডন প্রবাসী সরকার তাসেক এ প্রসঙ্গে বলেন, সুবিধা নিয়ে চলমান ভূমি জরিপের কর্মকর্তা আকতার হোসেনসহ কয়েকজন কর্মকর্তা বিআরএস নকশায় খালের অস্তিত্ব নেই এবং ব্যক্তি মালিকানা সম্পত্তি বলে নতুন খতিয়ান খুলে জমজম হাউজিং কোম্পানিকে রেকর্ড প্রদান করেছেন। যার ফলে আক্তার হোসেনকে শাস্তিমূলক বদলি করা হয়েছে। কিন্তু খতিয়ান পরিবর্তন করা হয়নি। এসএ নকশায় জালজালিয়াতি করা হয়েছে বলে তিনি মনে করেন।

এ প্রসঙ্গে সরকার তাসেক প্রশ্ন রেখে বলেন, সিএস নকশায় ২৪৪ নং দাগে বিশাল খাল থাকলেও বিআরএস নকশায় খাল নেই, আছে পাকা রাস্তা দাগ নং ১০৭০, ১০৭৪ ও হালট। আবার সেই সরকারি হালটও দাগ নং-১০৭৫ মাটি ভরাট করে প্লট বানিয়ে বিক্রয় করছে জমজম হাউজিং, সরকারি হালট বিক্রয় করার এখতিয়ার কি কারো আছে? সরেজমিনে বিআরএস নকশায় বর্ণিত পাকারাস্তা নেই, আছে খাল। ভূমি জরিপ কর্মকর্তারা কিসের ভিত্তিতে খালকে ‘পাকা রাস্তা’ নকশায় দেখালো বা তারা এ ক্ষমতা কেমনে পেল? জমজম হাউজিং কোম্পানি সিএস দাগ ২২৭ ও ২৪০ নং দাগের তারা মালিক বটে কিন্তু আলাদা ২৪৪ নং দাগের খালের ওপর এই ২ দাগ কিভাবে আসে এবং ২৪৪ দাগ কোথায় গেলো এমন প্রশ্ন উত্তরে জমজম হাউজিং কোম্পানি কি বলবেন?

এ বিষয়ে কথা বললে জেলা প্রশাসনের পক্ষে সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাজহারুল ইসলাম বলেন, ঘটনাস্থল আমরা একাধিকবার পরিদর্শন করেছি। বিষয়টি এখনও তদন্ত পর্যায়ে রয়েছে। খাল উদ্ধারে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এদিকে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের একাধিক ব্যক্তিকে বিষয়টি নিয়ে ফোন করা হলেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।