• শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

ধানক্ষেতে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষের প্রতিবাদে কৃষকের বিক্ষোভ

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ১৯ জানুয়ারি ২০১৯  

কালিয়াকৈর উপজেলার ফুলবাড়িয়া ইউনিয়নের খইলশাজানি এলাকায় কৃষকদের ধানক্ষেতে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষের চেষ্টা করায় কৃষক শুক্রবার ( ১৮ জানুয়ারি) বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে। গত কয়েকদিন ধরে ফসলের জমিতে বাঁধ দেওয়ার জন্য দুটি ভেকু দিয়ে বেড়িবাঁধ দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ব্যাপারে কৃষকরা কালিয়াকৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে কৃষকের জমিতে অবৈধ মৎস্য খামার নির্মাণ বন্ধের জন্য একটি আবেদন করেছেন।

কৃষক ও এলাকাবাসী জানান, ওই এলাকায় চাকিদিয়া ও চরক বিলে ৪-৫টি গ্রামের প্রায় শতাধিক কৃষকের তিন শতাধিক নিচু কৃষি জমি রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে ওই সব ধানের জমি চাষ করে কৃষকরা শতশত মন ধান উৎপাদন করত। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে দু'দিকে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষের পরিকল্পনা নেয় বোয়ালী ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফরিদ উদ্দিন।

এলাকার বেশি জমির মালিকরা মাছ চাষ করতে মুচলেকা না দিলেও ওই দুটি বিলের দক্ষিণ পাশে ভেকু দিয়ে বাঁধ দিতে শুরু করেন। ওই সময় উত্তর পাশেও কৃষকের অনুমতি না নিয়েই বাঁধ দিতে চেষ্টা করলে একটি ভেকু ও মাটি কাটার গাড়ি আটকিয়ে দেন খইলশাজানি গ্রামের শত শত কৃষক।

ওই এলাকার হাবলু মিয়া, বাবুল মিয়া, লিয়াকত, শামছুল হক, আব্দুল হালিমসহ প্রায় অর্ধশতাধিক কৃষক জানান, উপজেলার ফুলবাড়িয়া ইউনিয়নের খইলসাজানি এলাকায় বাসিন্দারা ওই এলাকায় পৈতৃক সূত্রে প্রাপ্ত ও ক্রয়কৃত ধানের জমিতে দীর্ঘ দিন ধরে শান্তিপূর্ণভাবে ভোগ দখল করে ফসল উৎপাদন করে আসছে।

খইলশাজানি মৌজাস্থিত চাকিদিয়া ও চরক বিলের ব্যক্তি মালিকানায় প্রায় তিনশ' বিঘা জমিতে ইরিবোরো ধান রোপণ করেছে। ওই বিলে যৌথভাবে কিছু বহিরাগত ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা শরিফুল ইসলাম, ফরিদ উদ্দিন, নবীন হোসেন, আবু নাসির, হাবিববুর রহমান পরস্পর যোগসাজশে জোরপূর্বক ভয়ভীতি দেখিয়ে চাকিদিয়া ও চরক বিলে অবৈধ মৎস্য খামার তৈরি করার জন্য বিল দখল করছে। তারা জমির মালিকদেরসহ কারো কোনো বাধা নিষেধ মানছে না। তাদের এ সব কর্মকাণ্ডের জন্য প্রকৃত জমির মালিকরা জমি বেদখলের ভয়ে আতঙ্কে রয়েছে। প্রভাবশালী ব্যক্তিদের দ্বারা অবৈধ মৎস্য খামার করলে ব্যক্তি লাভবান হলেও সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। দিকে ভেকু দিয়ে মাটি কাটার ফলে জমির মালিকরা জমির সীমানা নির্ধারণ করতে পারবে না বলে ভেকু দিয়ে বাঁধ দেওয়া একটা অংশ বন্ধ করলেও বিলের দক্ষিণ পাশে ভেকু দিয়ে জোরপূর্বক বাঁধ নির্মাণের অভিযোগ করেন কৃষকরা।

ওই এলাকার নাবির বহর, ফুলবাড়িয়া দক্ষিণপাড়া, বহেরাতলী পাগলনাথ চালা, আমগাইছাচালা, বাঘাইরসহ আশপাশের এলাকার অনেক কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ সময় এলাকার শত শত কৃষক তাদের জমি হারানোর ভয়ে হতাশ।

ওই এলাকার রহমান মাস্টার বলেন, ধানের জমিতে মাটি কেটে নিয়ে গভীর করে মাছ চাষ করলে জমির সীমানা থাকবে না। কৃষকরা ফসল উৎপাদন করতে পারবে না। বর্ষা মৌসুমে কৃষক তাদের জমিতে যে মাছ পেত তা আর পাওয়া যাবে না। এ ছাড়া অনেক কৃষককে কোনো টাকা দেওয়া হয়নি।

অভিযুক্ত আওয়ামী লীগের নেতা ফরিদ উদ্দিন জানান, ওই জমিতে মাছ চাষ করার জন্য ৯৭ কৃষককে টাকা দেওয়া হয়েছে। কোনো জমি জোরপূর্বক নেওয়া হচ্ছে না। কাউকে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে না। ওই এলাকার বেশির ভাগ লোক মাছ চাষের পক্ষে রয়েছে।

কালিয়াকৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, কৃষকদের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়ার পর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও মৎস্য কর্মকর্তাকে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ওই জমিতে মাছ চাষ ও কৃষি ফসলের জন্য পক্ষে-বিপক্ষে জমির মালিকরা রয়েছে। ফলে যাচাই-বাছাই করে ব্যবস্থা নিতে হবে।