• শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

কেরানীগঞ্জে নিয়ন্ত্রণহীন গ্যাসের অবৈধ সংযোগ, ভোগান্তিতে জনসাধারণ

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২২  

রাজধানীর কেরানীগঞ্জে গ্যাস নিয়ে দুর্ভোগে রয়েছেন উপজেলার প্রায় সবকয়টি ইউনিয়নের বাসিন্দারা। গ্যাসের সমস্যা দিন দিন তীব্র আকার ধারণ করছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। অবৈধ সংযোগগুলো তাদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অধিকাংশ বাসা-বাড়িতে দিনের বেলায় দুপুর পর্যন্ত গ্যাস থাকে না।

ফলে প্রতিদিনের খাবার রান্না করতে গিয়ে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয় জনসাধারণকে। বাধ্য হয়ে বেশিরভাগ বাসা-বাড়িতে গ্যাসের সংযোগ থাকা সত্ত্বেও রান্নাবান্নার বিকল্প আয়োজনে বাড়তি ব্যয় করতে হচ্ছে।  একদিকে গ্যাস বিল, অন্যদিকে বাড়তি ব্যয় সামলাতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তারা।  

গ্যাস না থাকার কারণ হিসাবে অবৈধ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ নিয়ে বিরক্ত এলাকাবাসী। অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, গ্যাস না থাকার অন্যতম কারণ হলো অবৈধ সংযোগ। গ্যাসের বৈধ সংযোগ কাগজে-কলমে বন্ধ থাকলেও অবৈধ সংযোগ দেওয়া থেমে নেই। এলাকাবাসী জানান, মোটা অংকের টাকা পেলে এখানকার কর্মকর্তারা অবৈধ সংযোগ দিতে দেরি করেন না। বাসা-বাড়িতে রান্নার গ্যাস না থাকলেও হোটেলে কিংবা বিভিন্ন  কারখানায় গ্যাসের কোনো অভাব নেই বলে অনেকের অভিযোগ। এছাড়া অনেক কর্মকর্তা মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন কারখানা ও বাসা-বাড়িতে কম্প্রেসারের মাধ্যমে গ্যাস দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, কেরানীগঞ্জে অবৈধ গ্যাসের রমরমা ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে গ্যাস অফিসের বিশাল এক সিন্ডিকেট। ক্ষমতাশীল দলের একাধিক নেতার ছত্রছায়ায় ও তিতাসের কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের 'ম্যানেজ' করে অফিসের কিছু অসাধু লোকজন লাগামহীন দুর্নীতি করেই চলেছে। মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে গ্যাস সেক্টরে যেকোনো অসাধ্য সাধন করতে পারেন তারা। এদের মধ্যে অনেকেই রয়েছে যাদের এক সময় কিছু না থাকলেও এখন আঙুল ফুলে কলা গাছ বনে গেছেন। শুধুমাত্র গ্যাসে সেক্টরে লাগামহীন দুর্নীতি করে রাতারাতি কোটিপতি বনে গেছে অনেকে।

অবৈধ গ্যাস ব্যবহার সুবিধা দেয়ার মাধ্যমে বিভিন্ন হোটেল ও কারখানা থেকে মাসিক ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা মাশোয়ারা নিয়ে থাকে। অফিসের নির্ধারিত কিছু মানুষ প্রতিটি হোটেল ও কারখানা থেকে মাসিক এ মাশোয়ারা নিয়ে থাকেন বলে সূত্রে জানা যায়। মাঝে মধ্যে তিতাসের পক্ষ থেকে অবৈধ সংযোগ বন্ধে অভিযান পরিচালনা করা হলেও মোটা অংকের ঘুষের বিনিময়ে সে অভিযান আটকে দেয় অবৈধ গ্যাস সংযোগ সিন্ডিকেটের হোতারা।  
এছাড়াও ২০০৯ সাল থেকে বাসা বাড়িতে গ্যাস সংযোগ বন্ধ রয়েছে। গ্যাসের এই গোলকধাঁধার কারণে ঘটছে অনেক দুর্ঘটনা। সম্প্রতি মান্দাইল এলাকায় গ্যাসের আসার অপেক্ষায় চুলা ছেড়ে রেখে দুর্ঘটনায় একই পরিবারের ছয়জন নিহত হয়েছেন।

মান্দাইল এলাকার বাসিন্দা রহিমন নেছা জানান, দিনের বেলা আমাদের এলাকা গ্যাস একেবারেই থাকে না। রাত ২টা বা ৩টার দিকে গ্যাস আসে। সকাল হলে স্বামী-সন্তানরা নাস্তা করে কাজে যাবে। তাই রাত জেগে আমাদের রান্না করতে হয়। এসময় অনেকেই গ্যাসের চুলার চাবি চালু করে রাখেন। রাতে যখন গ্যাস আসে তখন গ্যাসের সব্দ শুনে রান্না করে ঘুমাতে হয়। দুর্ঘটনা-কবলিত বাড়িতে হয়তো এমন ঘটনাই ঘটে থাকতে পারে বলে আমার মনে হয়। তা না হলে যেখানে গ্যাস থাকে না, সেখানে আবার গ্যাসের পাইপ লিকেজ হয় কীভাবে।

আগানগর ইউনিয়নের বাসিন্দা মো: শহিদ জানান, প্রতি মাসে মোটা অংকের ঘুষের বিনিময়ে আগানগরের বিভিন্ন কারখানা আর হোটেলে কম্প্রেসারের মাধ্যমে গ্যাসের সুবিধা দেন অসাধু কর্মকর্তা। অথচ আমরা বাসা-বাড়িতে রান্নার গ্যাস পাই না। আমাদের দুর্ভোগ দেখার কি কেউ নেই? 

গোলামবাজার বাসিন্দা কামরুন নাহার জানান, সারাদিন গ্যাস থাকে না। রান্না করার জন্য সেই রাত ২টায় উঠতে হয়। আমাদের এলাকার সাংসদের কাছে আকুল আবেদন গ্যাস সেক্টরে কেরানীগঞ্জের বিভিন্ন দুর্নীতি বন্ধ করা হোক।শুভাড্যা ইউনিয়নের জাকির হোসেন বলেন, সকালে কাজের উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হই,  তখনো বাড়িতে অশান্তি থাকে। কারণ গ্যাস নেই। আবার যখন কাজ শেষে বাড়িতে ফিরে আসি তখনো নিজেদের পরিবারে অশান্তি লাগে এই গ্যাসের কারণে। ঠিকমত রান্না করতে পারে না আমাদের পরিবার, গ্যাসের অপেক্ষায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হয় কখন একটু গ্যাস আসবে। গ্যাসের এই সমস্যার কারণে ভোর ৪টা বাজতেই উঠতে হয় মা-বোনদের।  

গত বছর কেরানীগঞ্জের অবৈধ সকল ওয়াশিং ও ডাইং কারখানার গ্যাস বিচ্ছিন্ন করে দেন  পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। কিছু দিন বন্ধ থাকার পর রহস্যজনকভাবে পুনরায় চালু হয় সবগুলো কারখানার বিচ্ছিন্ন গ্যাস সংযোগ। এটা কীভাবে চালু করলেন- এমন প্রশ্নে বেশ কয়েকজন ডাইং কারখানার মালিক বলেন, সবাই যেমনে চালাচ্ছে, আমরাও ওইভাবেই চালাচ্ছি। এ বিষয়ে তিতাসের কেরানীগঞ্জ জোনাল অফিসের ব্যবস্থাপক বিধান চন্দ্র সাহা বলেন, কেরানীগঞ্জে অবৈধ গ্যাস সংযোগ নেই। যা ছিল পূর্বেই বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। সেগুলো আমরা মাঝে মধ্যে মনিটরিং করে দেখি যে আবার সংযোগ দেওয়া হয়েছে কিনা। মাঝে মধ্যে দু'-একটি অবৈধ লাইনের খবর পেলে সাথে সাথে মনিটরিংয়ের মাধ্যমে আমরা বিচ্ছিন্ন এবং জরিমানা করে থাকি। তাছাড়া স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যান ও স্থানীয় সাংসদ আমাদের ফোন দিয়ে অবৈধ লাইন মনিটরিংয়ের বিষয়ে মাঝে-মধ্যেই খোঁজ-খবর দেন। অবৈধ সংযোগের বিষয়ে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।