• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

ব্যারিস্টারের জুতা চুরির মামলায় ৮ দিনের জেল

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ২৮ মে ২০২৩  

চলতি বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারির বিকেল। রাজধানীর নিউ এলিফ্যান্ট রোডের একটি বাসায় কাঁধে ব্যাগ নিয়ে ফোনে কথা বলতে বলতে গেট দিয়ে প্রবেশ করেন মো. শাকিল মাহমুদ। গেটে থাকা দারোয়ান মো. সজল ইসলাম ওই ব্যক্তির পরিচয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, পার্সেল নিয়ে ভবনের ছয় তলায় যাবেন। একথা বলে ওপরে যাওয়ার ২০ মিনিট পর নিচে নামেন শাকিল। গেট দিয়ে যাওয়ার সময় সন্দেহ হয় দারোয়ান সজলের। এরপর শাকিলের ব্যাগ তল্লাশি করেন। এসময় তার ব্যাগের ভিতরে মেলে তিন জোড়া পুরাতন জুতা।

একসঙ্গে এত জুতা কার এবং কোথা থেকে এনেছেন জানতে চাইলে এ বিষয়ে সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারেননি শাকিল। শেষে জুতা চুরির কথা স্বীকার করেন। বাড়িটির মালিক ব্যারিস্টার মোশারফ হোসেন ও কাজী মাইনুল হাসান।

শাকিলের স্বীকারোক্তির পর ব্যারিস্টার মোশারফ হোসেনকে ফোন করে ঘটনা জানান সজল। পরে দেখা যায়, বাসার ছয় তলার ফ্ল্যাটের দরজার সামনে থেকে এক জোড়া ও পাঁচতলা থেকে দুই জোড়া পুরাতন জুতা চুরি করেছেন শাকিল। পরে কাঁধের ব্যাগ থেকে চুরি করা জুতাসহ চোর মো. শাকিল মাহমুদকে নিউমার্কেট থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। দেওয়া হয় চুরির মামলা।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক মো. শফিউল আলম  বলেন, শাকিল এর আগেও ওই বাসায় ঢুকেছিলেন। তখন সেখান থেকে কিছু জিনিস চুরি হয়ে যায়। সেসময় তাকে চিহ্নিত করতে পারেনি। দ্বিতীয়বার যখন ঢুকেছে তখন বাসার নিরাপত্তারক্ষী তাকে দেখে চিনতে পারেন। তাকে তখন জিজ্ঞাস করেন কোথায় যাবেন। কুরিয়ারের পার্সেলের কথা বলে ছয় তলায় যাওয়ার কথা বললে নিরাপত্তারক্ষী তা ব্যারিস্টার সাহেবকে জানান। পরে শাকিল নিচে নেমে এলে ব্যারিস্টারের এক জোড়া ও অন্য একটি ফ্ল্যাটের আরও দুই জোড়া জুতা তার ব্যাগে পাওয়া যায়। পরে আটক করে তাকে থানায় নিয়ে আসেন।

তিনি বলেন, বাসাটির ছয় তলায় থাকা ব্যারিস্টার মোশারফ হোসেন চোরসহ থানায় এসে নিরাপত্তারক্ষীকে দিয়ে মামলা করান। এরই মধ্যে আমরা মামলার চার্জশিট দিয়েছি। এখন আদালতে বিচারাধীন। জুতা চুরির ওই মামলায় গ্রেফতার শাকিলকে‌ প্রথম পাঠানো হয় জেলে। আটদিন জেল খেটে জামিনে মুক্ত হন তিনি।

আসামিপক্ষের আইনজীবী শেখ সাইফুর রহমান সুমন  বলেন, ক্রিমিনাল যে কোনো বিষয়ে মামলা হতে পারে। তবে গরিব মানুষ যা পেয়েছে তা ব্যাগে করে নিয়েছে। এ মামলাটির আসলে চার্জশিট বা ফাইনাল রিপোর্ট দিয়ে দেওয়া উচিত।

আদালত সূত্রে জানা যায়, রোববার (২৮ মে) মামলাটির শুনানি হয়েছে। এ মামলা ছাড়াও আসামি শাকিলের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় আরও একটি মামলা রয়েছে। শুনানির বিষয়ে আইনজীবী শেখ সাইফুর রহমান সুমন বলেন, আজ মামলাটির শুনানি হয়েছে। আদালতে মামলার অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। এখন সাক্ষ্যপ্রমাণ নিয়ে বিচার কাজ চলবে।

মামলাটির বিষয়ে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) নির্বাহী পরিচালক মো. নূর খান  বলেন, যে কোনো চুরিই চুরি, সেটার আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ থাকলে নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলো বাংলাদেশে অনেকে বড় বড় চুরি, লুট করছেন অথচ সেগুলোর মামলা নিতে গেলে পুলিশ মামলা গ্রহণ করতে চায় না। আদালতে গেলে এক ধরনের অনীহা প্রকাশ করা হয়। জুতা চুরির ক্ষেত্রে মামলা এত দ্রুত নেওয়া ও গ্রেফতার করা বিরল।

তিনি আরও বলেন, দেশে যদি এরকম একটা অবস্থা থাকতো যে মানুষ বিচার চাইতে গেলে বিচার পায়, তাহলে এটা স্বাভাবিকই ছিল। অনেক বড় বড় চুরি-ডাকাতির ক্ষেত্রেও তো মামলা নিতে চায় না। পুলিশ হয়তো এখানে পদ-পদবির কারণে মামলাটা নিয়েছে। কিন্তু এমনটা সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রেও হওয়া উচিত।