• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

পায়রা থেকে বিদ্যুৎ আসবে ঢাকায়

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ২৮ জুন ২০২২  

বাগেরহাটের রামপাল ও পটুয়াখালীর পায়রা কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্র এবং পাবনার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে পাঁচ হাজার মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে। এসব কেন্দ্র থেকে জাতীয় গ্রিডের মাধ্যমে ঢাকায় বিদ্যুৎ আনতে সঞ্চালন লাইন করা হচ্ছে। পদ্মা নদীর ওপর দিয়ে এ লাইন নেওয়ার কাজটি সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। তবে পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষের সহায়তায় দেশের একমাত্র বিদ্যুৎ সঞ্চালন সংস্থা পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) জন্য কাজটি সহজ হয়েছে।

পিজিসিবি ও সেতু বিভাগ সূত্র জানায়, পদ্মার ওপর দিয়ে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন নিতে মোট ১১টি টাওয়ার বসাতে হচ্ছে। এর মধ্যে ৭টি টাওয়ার বসছে নদীর মধ্যে। নিজস্ব অর্থায়নে সাতটি টাওয়ারের পাইলিং করে দিয়েছে পদ্মা সেতু প্রকল্প।

পিজিসিবি সূত্রে জানা গেছে, সঞ্চালন টাওয়ারের পাইলিংয়ের কাজ শেষে ১০ জুন এগুলো হস্তান্তর করা হয়েছে। শিগগিরই পাইলিংয়ের ওপর টাওয়ার বসানোর কাজ শুরু হবে। পাইলিংয়ের কাজে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা খরচ করেছে পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষ। পিজিসিবির প্রকল্প থেকে এ অর্থ পদ্মা সেতু প্রকল্পে স্থানান্তর করা হবে।

পিজিসিবি সূত্র জানায়, শুরুতে পদ্মা সেতু ঘেঁষেই সঞ্চালন লাইন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ৪০০ কিলোভল্টের (কেভি) লাইন হাই ভোল্টেজের বলে সেতুর ওপর ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। তাই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে সেতুর দেড় থেকে দুই কিলোমিটার দূরে বসানো হচ্ছে টাওয়ার। নদীর পানির ওপরে একেকটি টাওয়ারের উচ্চতা ১২৬ মিটার। সেতু থেকেই এগুলো দেখা যাবে।

দক্ষিণাঞ্চলের ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র ইতিমধ্যে উৎপাদনে এসেছে। এই কেন্দ্র থেকে দেড় বছর ধরে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। তবে সঞ্চালন লাইন না থাকায় ঢাকায় আনা যাচ্ছে না। বাগেরহাটের রামপালে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্র শিগগিরই উৎপাদনে আসার কথা। ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ২০২৫ সালের মধ্যে পুরো মাত্রায় উৎপাদনে আসার কথা। পদ্মার ওপারে বিভিন্ন এলাকায় আরও কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ চলছে।

বিদ্যুতের সবচেয়ে বেশি চাহিদা ঢাকায়। তাই উৎপাদন কেন্দ্র থেকে ঢাকায় বিদ্যুৎ আনতে ২০১৬ সালে আমিনবাজার-মাওয়া-মোংলা ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। ১৬৪ দশমিক ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই লাইনে পদ্মার ওপর দিয়ে যাবে ৯ দশমিক ৪ কিলোমিটার। আমিনবাজারে ৪০০ কেভি সাবস্টেশন করা হচ্ছে।
উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) অনুসারে, এই সঞ্চালন লাইনের জন্য প্রথমে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৩৫৬ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। ২০২০ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে কয়েক দফায় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। এতে ৮৪ দশমিক ৬৮ শতাংশ ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৫০৫ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। আর পদ্মা পারাপারে টাওয়ারের পাইলিংয়ের কাজটি হয়েছে পদ্মা সেতু প্রকল্পের টাকায়।

পিজিসিবি বলছে, আগামী বছরের জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা রয়েছে। ঠিকাদার পরিবর্তন, পদ্মা নদী পারাপারের জন্য জায়গা চূড়ান্ত করা এবং করোনা মহামারির কারণে প্রকল্পের কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ করা যায়নি।

তবে পিজিসিবির প্রকল্প পরিচালক মোরশেদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করার সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে। মোংলা থেকে গোপালগঞ্জ পর্যন্ত কাজ শেষ হয়ে গেছে। জুনের মধ্যে মাওয়া থেকে আমিনবাজারের কাজ শেষ হবে। জুন-জুলাই বর্ষার মৌসুম, এ সময় পদ্মায় কাজ করা খুব কঠিন। তবু কাজ থেমে থাকবে না।

সঞ্চালন লাইনের কাজ এখন পর্যন্ত ৯৭ দশমিক ৬১ শতাংশ শেষ হয়েছে বলে পিজিসিবির প্রকল্প সূত্র দাবি করেছে। তারা বলছে, প্রকল্পে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সহায়তা ১ হাজার ২৭০ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। পিজিসিবির বিনিয়োগ ৩৩৭ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। বাকিটা আসছে সরকারি তহবিল থেকে। এখন পর্যন্ত আর্থিক অগ্রগতি ৭৩ দশমিক ৮৭ শতাংশ।

পিজিসিবির নির্বাহী পরিচালক মো. গোলাম কিবরিয়া প্রথম আলোকে বলেন, পিজিসিবির সব লাইন স্থলভাগে। পদ্মা বেশ খরস্রোতা নদী। এই নদী দিয়ে লাইন নিতে টাওয়ার করার জন্য অনেক ভারী যন্ত্রপাতির প্রয়োজন ছিল। নদীর মধ্যে কাজ করা জটিল ও সময়সাপেক্ষ। পদ্মা সেতুর কাজ চলায় সুবিধা হয়েছে। সেতু কর্তৃপক্ষ সহজে ও দ্রুত কাজটি করে দিয়েছে।