• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

উপস্থিতি নিশ্চিতের লক্ষ্যে হাসপাতালে বায়োমেট্রিক হাজিরা

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ২৯ জানুয়ারি ২০১৯  

টানা তিন মেয়াদে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এসেছে আওয়ামী লীগ সরকার। যেখানে টানা তিনবারসহ মোট চারবার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন দলটির প্রধান শেখ হাসিনা। নতুন মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথমবারের মতো গত শুক্রবার জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়েছিলেন তিনি। যেখানে অন্যান্য বিষয়ের সাথেই চিকিৎসা খাতে চলমান দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্টদের যথাযথ সময়ের মধ্যে তা সমাধানের ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। এর আগে নির্বাচনের জয়ের পর থেকেই ঘুষ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রীর এমন নির্দেশনার পরপরই দুর্নীতি দমন কমিশনের পক্ষ থেকে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চালানো অভিযানে শতকরা প্রায় ৪০ শতাংশ ডাক্তারকেই অনুপস্থিত পাওয়া যায়।
যদিও দুদকের অভিযানের পরপরই হাসপাতালে ফিরে ডাক্তাররা। তবে আসছে সময়গুলোতে চিকিৎসা খাতে ডাক্তার-নার্সের অনুপস্থিতিসহ তাদের বিরুদ্ধে কোনও ধরনের নালিশ শুনতে নারাজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এক বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে ডাক্তার থাকে না, নার্স থাকে না- এটা অনবরত একটা নালিশ। এক্ষেত্রে আমি বলব, এখন ডিজিটাল সিস্টেম। আইডি কার্ডও করা আছে। বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে উপস্থিতি-অনুপস্থিতির হিসাবটা নেওয়া যায়। প্রত্যেকটা সরকারি হাসপাতালে মনে হয় এই ব্যবস্থাটা করে দেওয়া উচিত। পাশাপাশি ডাক্তারদের নিরাপত্তা ও উপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য প্রতিটি হাসপাতালে সিসি ক্যামেরা থাকা উচিত।’

পাশাপাশি যেসব চিকিৎসক জেলা হাসপাতালে রোগী দেখতে চাইবেন না, তাদের ওএসডি করে নতুন নিয়োগ দিতে বলেছেন তিনি। ডাক্তারদের সেখানে বদলি করা হবে। তারা যদি কাজ না করে, সবগুলোকে ওএসডি করে রেখে দিতে হবে। তাদের দরকার নেই। নতুন ডাক্তার দিতে হবে। নার্সরা যদি সেবা দিতে না চান, তাহলে তাদেরও চাকরি ছেড়ে দিতে বলেছেন তিনি। তিনি আরও বলেছেন, ‘নার্সদের ব্যাপারে, আমি তাদের সম্মান দিয়েছি ঠিক। কিন্তু রোগীর সেবাটা তাদের করতে হবে, এটা বাধ্যতামূলক। না করলে সে চাকরিতে থাকবে না, চলে যাবে। অনেক প্রাইভেট জায়গা আছে। কাজের অসুবিধা নেই। লোকেরও অসুবিধা নেই। আমরা ট্রেইনিং করিয়ে নিয়ে আসবো।’

মুমূর্ষু রোগীদের দ্রুত চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতে করার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি জানি, অনেক বেসরকারি নামী দামী হাসপাতাল আছে যারা মুমূর্ষু রোগী নেয় না, যেতে হয় সরকারি হাসপাতালে। ডাক্তার নার্সদের বলবো, যখনই একটা রোগী আছে, তার গুরুত্বটা বুঝে বা আত্মীয় স্বজনের মানসিক উদ্বেগটা বুঝে সাথে সাথে যেন তারা চিকিৎসার ব্যবস্থা নেয়। ফেলে না রাখে।’ এসময় রোগীর সঠিক চিকিৎসা নির্ণয়ে তার পুরো বৃত্তান্ত একসঙ্গে পাওয়ার জন্য হেলথ কার্ডটি ডিজিটাল করার জন্য সংশ্লিষ্টজনদের পরামর্শ দেন তিনি।

সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে যেন রোগী দেখতে না হয় সেজন্য সরকারি হাসপাতালগুলোতেই ‘বিশেষ ধরনের সেবা’ চালুর নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের ডাক্তাররা সবসময় প্রাইভেট চিকিৎসা দিতেই পছন্দ করে। পৃথিবীর বহু দেশ আছে, সরকারি চাকরি যতদিন করে, ততদিন কিন্তু প্রাইভেট চাকরি করতে পারে না। এমনকি সিঙ্গাপুরেও যাবেন, এনইউএইচের ডাক্তাররা প্রাইভেট চিকিৎসা করতে গেলে ওই হাসপাতালের মধ্যেই আলাদা ব্যবস্থা আছে।’

বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বহিঃবিভাগে এ ধরনের একটি ব্যবস্থা চালু থাকার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এটা কিন্তু আমরা অন্যান্য জেলা হাসপাতালেও করে দিতে পারি, যেন তাদের বাইরে না যেতে হয়। সন্ধ্যার পরে বা ছুটির সময় ওখানেই একটা প্রাইভেট প্র্যাকটিসের ব্যবস্থা বা আলাদা একটা উইং করে দেওয়া যেতে পারে।’

মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে সরকার প্রধান বলেন, “সবার আগে প্রত্যেকটা জেলায় সার্ভে করে দেখবেন। এটা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে করতে হবে। হাসপাতালগুলোতে কত রোগী যাচ্ছে, ডাক্তাররা সেখানে থাকছে না কেন?

পাশাপাশি বেসরকারি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে কী ধরনের পড়াশোনা হচ্ছে, সে বিষয়ে তদারকি বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন সরকার প্রধান। সারাদেশে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার পাশাপাশি ডাক্তার তৈরি করা এবং তাদের উচ্চ শিক্ষার প্রয়োজনে প্রতিটি বিভাগে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করে দেওয়া কথাও তিনি বলেন।

‘মেডিকেল কলেজগুলো তৈরি হচ্ছে। অনেকগুলো সরকারি আছে, বেসরকারি আছে। বেসরকারিগুলোর দিকে আমাদের আরও নজর বাড়াতে হবে এবং চিকিৎসা সেবাটাও যাতে মানসম্মত হয় সে ব্যবস্থাটা করতে হবে। ডাক্তারের সংখ্যা আমাদের অপর্যাপ্ত, কারণ আমাদের জনসংখ্যা যত বেশি, তার তুলনায় ডাক্তার আমাদের কম। সেজন্য ইতোমধ্যে মেডিকেল কলেজ করা হচ্ছে।

ডাক্তারদের ইন্টার্নি সিস্টেম দুই বছরের করেছিল সরকার। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বেলন, ‘সেটা কার্যকর হয়েছে কী না জানি না, সেটা জানতে চাইব ’।