• শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

৭ মার্চের ভাষণ সম্মানকে বিশ্ব দরবারে অনন্য উচ্চতায় অধিষ্ঠিত করেছে

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ২ মার্চ ২০১৯  

নিউজ ডেস্ক: জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো প্যারিসে অনুষ্ঠিত দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণকে ‘বিশ্ব ঐতিহ্য দলিল’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে তা সংস্থাটির ‘মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টারে’ অন্তর্ভুক্ত করা হয়। যা বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে অনন্য উচ্চতায় অধিষ্ঠিত করেছে।

১৫ সদস্যবিশিষ্ট একটি আন্তর্জাতিক উপদেষ্টা-বিশেষজ্ঞ কমিটি দু’বছর ধরে প্রামাণ্য দালিলিক যাচাই-বাছাই শেষে ইউনেস্কোর মহাপরিচালকের সম্মতিক্রমে ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণটি সংস্থাটির নির্বাহী কমিটি কর্তৃক চূড়ান্তভাবে গৃহীত হয়। দীর্ঘ ৪৬ বছর পর হলেও জাতিসংঘের মতো বিশ্ব সংস্থার এ সিদ্ধান্তটি ছিল নিঃসন্দেহে একটি ঐতিহাসিক ঘটনা।

এর ফলে বাঙালি ইতিহাসের মহানায়ক, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাংলাদেশ সৃষ্টির প্রণোদনা সৃষ্টিকারী ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ মানবজাতির মূল্যবান ও ঐতিহ্যপূর্ণ সম্পদ হিসেবে স্বীকৃত ও গৃহীত হয়। স্বাধীনতার জন্য আত্মোৎসর্গকারী ৩০ লাখ শহীদ আর সম্ভ্রম হারানো কয়েক লাখ মা-বোনসহ আমাদের সবার জন্য এটি এক মহা-আনন্দ ও বিরল সম্মানের বিষয়।

এ স্বীকৃতির ফলে আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট, জুলিয়াস সিজার, জর্জ ওয়াশিংটন, নেপোলিয়ন বোনাপার্ট (ফ্রান্স), আব্রাহাম লিংকন (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র), উইনস্টন চার্চিল (যুক্তরাজ্য), মাও সেতুং (গণচীন) প্রমুখ নেতার বিখ্যাত ভাষণের পাশাপাশি স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণও ‘বিশ্ব ঐতিহ্য দলিল’ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়।

১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বাঙালির জাতীয় জীবনে এক অবিস্মরণীয় দিন। এদিন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাঙালির ইতিহাসের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) লাখো মানুষের সমাবেশে জাতির উদ্দেশে এক গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ প্রদান করেন। ইতিহাসখ্যাত ৭ মার্চের ওই ভাষণ স্বাধীনতার চেতনায় উদ্দীপ্ত বাঙালি জাতির জন্য ছিল পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শাসন-শোষণের শৃঙ্খল ছিন্ন করে জাতীয় মুক্তি বা স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুর চূড়ান্ত সংগ্রামের আহ্বান।

১৮ মিনিটের সংক্ষিপ্ত অথচ জগদ্বিখ্যাত ভাষণটি ছিলো সারগর্ভে ওজস্বী ও যুক্তিযুক্ত, তির্যক, তীক্ষ্ণ ও দিকনির্দেশনাপূর্ণ। অপূর্ব শব্দশৈলী, বাক্যবিন্যাস ও বাচনভঙ্গি মিশ্রিত ভাষণটি ছিলো একান্তই আপন, নিজস্ব বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। বঙ্গবন্ধু তার ভাষণে পাকিস্তানের ২৩ বছরের রাজনৈতিক ইতিহাস ও বাঙালিদের অবস্থা ব্যাখ্যা করেন, পাকিস্তান রাষ্ট্রের সঙ্গে বাঙালিদের দ্বন্দ্বের স্বরূপ তুলে ধরেন। শান্তিপূর্ণভাবে বাঙালিদের অধিকার আদায়ের চেষ্টার কথা বলেন। অসহযোগ আন্দোলনের পটভূমি ব্যাখ্যা ও বিস্তারিত কর্মসূচি ঘোষণা করেন। সারা বাংলায় প্রতিরোধ গড়ে তোলার নির্দেশ প্রদান করেন। প্রতিরোধ সংগ্রাম শেষাবধি মুক্তিযুদ্ধে রূপ নেয়ার ইঙ্গিত ছিল তার বক্তৃতায়। শত্রুর মোকাবেলায় গেরিলা যুদ্ধের কৌশল অবলম্বনের কথাও বললেও তার বক্তৃতায় যেকোনো উসকানির মুখে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। এমন বক্তব্যের পর তিনি ঘোষণা করেন : ‘… ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল। তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে … এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয় বাংলা।’

যেকোনো শ্রেষ্ঠ ভাষণমাত্রই প্রচণ্ড উদ্দীপনাময়; মুহূর্তে মানুষকে নবচেতনায় জাগিয়ে তুলে অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে তাদের প্রস্তুত করতে পারঙ্গম। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ সমগ্র বাঙালি জাতিকে নজিরবিহীনভাবে ঐক্যবদ্ধ এবং স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করেছিল। ভাষণে দৃপ্ত কণ্ঠে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেছিলেন, ‘আমরা ভাতে মারবো। আমরা পানিতে মারবো … আমরা যখন মরতে শিখেছি, তখন কেউ আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবে না। … রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দেবো। এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো, ইনশাআল্লাহ।’

প্রসঙ্গত, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিতে সারা বিশ্ব থেকে আসা প্রস্তাবগুলো দু’বছর ধরে নানা পর্যালোচনার ভিত্তিতে মনোনয়ন চূড়ান্ত করে ইউনেস্কো।