অগ্নিঝরা ১১ই মার্চ: ইতিহাসের এই দিনে

অগ্নিঝরা প্রতিরোধের মাস মার্চ। ১৯৭১ সালের এই মাসে তীব্র হয় স্বাধীনতার আন্দোলন। ১৯৭১ এর এই মাসকে ধরা হয় মুক্তি সংগ্রামের চূড়ান্ত ক্ষণ হিসাবে। এ মাসে দেশজুড়ে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলে স্বাধীনতাকামী জনতা। নতুন পতাকা, বজ্রকন্ঠ ঘোষণা ও কালরাত- সব মিলিয়ে নানা ঘটনা প্রবাহে উত্তাল ছিল ১৯৭১ এর মার্চ।

১৯৭১ সালের ১১ই মার্চ মুক্তির আন্দোলনে আরো উত্তাল হয়ে পড়ে দেশ। গণআন্দোলনে দিশেহারা হয়ে পড়ে পাকবাহিনী। পশ্চিম পাকিস্তান থেকে সমরাস্ত্রসহ একটি জাহাজ ১০ই মার্চ চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে নোঙর করে। এদিকে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে সমরাস্ত্র আনার প্রতিবাদ জানিয়ে ১১ই মার্চ ‘স্বাধীন বাংলা সংগ্রাম পরিষদে’র চার ছাত্রনেতা জনগণকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান।

ঐদিন জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির সহকারী আবাসিক প্রতিনিধি কে উলফ বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। বঙ্গবন্ধু তার কাছে পাকিস্তানি সামরিক জান্তার সমরসজ্জায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

১১ই মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির এক সভায় মুক্তি সংগ্রামের প্রতি সমর্থন দেওয়ার জন্য বিশ্ববাসীর প্রতি আবেদন জানানো হয়। গণআন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যের জন্য ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তাদের একদিনের বেতন আওয়ামী লীগের ত্রাণ তহবিলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

অপরদিকে গণহত্যার প্রতিবাদে প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী মুর্তজা বশীর পাকিস্তান সরকারের এক চিত্রপ্রদর্শনীতে যোগদানে অস্বীকৃতি জানান। এমনকি তিনি দেশের চিত্রশিল্পীদেরও যোগদানে বিরত থাকার আহ্বান জানান।

কুমিল্লা কারাগার থেকে পালাতে গিয়ে ১১ই মার্চ পুলিশের গুলিতে নিহত হয় ৫ কয়েদি। অন্যদিকে বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগার ভেঙে ২৪ কয়েদি পালিয়ে যায়। অন্যদিকে লোকজন না থাকায় দেশের সকল আদালত ১১ই মার্চ অচল হয়ে পড়ে।

৭১ এর ১১ই মার্চ রাতে সামরিক কর্তৃপক্ষ ১১৪নং সামরিক আদেশ জারি করে নির্দেশ দেন যে, কেউ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সরকারি সম্পতির ক্ষতিসাধন করলে অথবা সশস্ত্রবাহিনীর রক্ষণাবেক্ষণের বা সেনাবাহিনীর গতিবিধিতে অন্তরায় সৃষ্টি করলে তাদের কার্যকলাপ আক্রমণাত্মক কাজের শামিল বলে গণ্য হবে, যা সংশ্লিষ্ট সামরিক বিধি অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য।

অন্যদিকে এই দিনে টাঙ্গাইলে বিন্দুবাসিনী হাইস্কুল মাঠে অনুষ্ঠিত জনসভায় ন্যাপ প্রধান মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী বঙ্গবন্ধু ঘোষিত স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ঘোষণা করে বলেন, শেখ মুজিবুর রহমান সাতকোটি বাঙালির নেতা। নেতার নির্দেশ পালন করুন। লক্ষ্য অর্জনের জন্য সবাই সাথে হয়ে ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম করুন। এ মুহূর্তে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কোন রকম বিরোধ থাকা উচিত নয়। জনগণ এখন নিজেদের অধিকার আদায়ের জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়েছে।

করাচীতে তৎকালীন গণঐক্য আন্দোলনের নেতা এয়ার মার্শাল (অব.) আসগর খান সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, খুব দ্রুত পটপরিবর্তন হচ্ছে। দেশকে বিচ্ছিন্নতার হাত থেকে রক্ষা করতে হলে শীঘ্রই ব্যবস্থা নিতে হবে। আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমানই কার্যত এখন ঢাকার সরকার। সেখানে সব সরকারি কর্মচারী এবং সচিবরা তাঁর নির্দেশ পালন করছেন। ঢাকায় কেবল সামরিক সদর দফতরে পাকিস্তানি পতাকা উড়ছে। তিনি আরো বলেন, সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের হাতে অবিলম্বে ক্ষমতা ছাড়া না হলে দেশের দু’অংশকে এক রাখা কোনোভাবেই সম্ভব হবে না।

এ রকম নানা ঘটনার সাক্ষী হয়ে থাকলো একাত্তরে মার্চ। উত্তাল সেই মার্চ একই সাথে অহংকার ও প্রেরণার।