• শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

পর্যটকের চাপ আর অবৈধ স্থাপনায় সংকটে সেন্টমার্টিন

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ১১ জানুয়ারি ২০২০  

‌‘একসময় এই দ্বীপে কুকুর, মাছি কিছুই ছিল না। এখন তো এসবে ভরপুর, কারণ দিন দিন দ্বীপটা ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। একসময় চারপাশ অনেক সুন্দর ছিল, প্রবাল আরো বেশি দেখা যেত। সে সময় বিদেশি পর্যটকও আসতো বেশি, এখন আসেনা বললেই চলে। যারাই আসেন, তারা বিরক্তের ছাপ নিয়ে ফিরে যান।’—কথাগুলো সেন্টমার্টিনের বাসিন্দা ফয়সালের (২৭)।

সেন্টমার্টিনের আরো কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে একই ধরনের উত্তর মিললো। বাস্তবেও তাই, দূষণসহ নানা কারণে প্রতিনিয়ত সংকটের মুখে দেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ। পর্যটন মৌসুমে প্রতিদিন গড়ে প্রায় নয় হাজার পর্যটক যান এ দ্বীপে। সেন্টমার্টিনের গঠন প্রকৃতি, আকৃতি আর সার্বিক পরিবেশ কোনোভাবেই এত পর্যটকের চাপ বহন করার উপযোগী নয়।

পরিবেশ অধিদফতর দ্বীপের প্রবেশমুখেই লিখে রেখেছে- পর্যটকদের কী করা উচিত হবে না। যেমন প্রবাল, শৈবাল, শামুক, ঝিনুক ইত্যাদি সংগ্রহ করা থেকে বিরত থাকা, প্লাস্টিক-পলিথিন যত্রতত্র ফেলা থেকে বিরত থাকা, রাতে সৈকত এলাকায় আলো বা আগুন জ্বালানো থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। এছাড়া দ্বীপে মাইক বা উচ্চশব্দে গান-বাজনা না করা, মিঠা পানি ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়াসহ আরো অনেক কথা লিখা আছে বিলবোর্ডে। কিন্তু সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেল, পর্যটকরা এসবের কিছুই মানছেন না।

 

প্রতিদিন গড়ে প্রায় নয় হাজার পর্যটক যান সেন্টমার্টিনে। ছবিটি টেকনাফ জেটি থেকে তোলা

প্রতিদিন গড়ে প্রায় নয় হাজার পর্যটক যান সেন্টমার্টিনে। ছবিটি টেকনাফ জেটি থেকে তোলা

সেন্টমার্টিনের জমির পরিমাণ জোয়ার-ভাটার ওপর নির্ভর করে। ভাটার সময় আট আর জোয়ারের সময় পাঁচ বর্গকিলোমিটার। দ্বীপের রয়েছে তিনটি অংশ- উত্তরপাড়া, দক্ষিণপাড়া আর দুই অংশের মাঝখানটা গলার মতো সরু বলে গলাচিপা নামে পরিচিত। এই তিন অংশের মাঝে উত্তর অংশ মূলত জনপদ। দক্ষিণ অংশ ‘রেস্ট্রিকটেড অ্যাকসেস জোন’ হিসেবে পরিচিত। গলাচিপায় কিছু ভালো কটেজ আর কিছু স্থানীয় মানুষের বসবাস।

এই ক্ষুদ্র ভূখণ্ডেই অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে একশ’রও বেশি হোটেল-রিসোর্ট। রাস্তার একপাশ ও সৈকতের পাড় দখল করে অবৈধভাবে বসানো হয়েছে শতাধিক দোকান। এসব দোকানে বিক্রি হচ্ছে শুঁটকি, শামুক-ঝিনুকের পণ্য, কাপড় ও রকমারি খাবারদাবার। এছাড়া পর্যটকদের অসচেতনতা আর দূষণসহ নানা কারণে দ্বীপের সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য কমছে। সঙ্গে যোগ হয়েছে দ্বীপে বহুল ব্যবহৃত জেনারেটর এবং সৈকতে চলাচলরত বিভিন্ন ধরনের মোটরযান।

পরিবেশ অধিদফতরের পরিচালক সোলায়মান হায়দার বলেন, সেন্টমার্টিনের সব জায়গা পর্যটকদের জন্য নয়। ছেঁড়াদ্বীপ পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব জমি। পর্যটকদের আনাগোনায় এ দ্বীপের কোরাল দিনদিন নষ্ট হচ্ছে। দ্বীপ ও কোরাল বাঁচিয়ে রাখতে এরইমধ্যে ছেঁড়াদ্বীপ সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এছাড়া পুরো সেন্টমার্টিন নিয়ে সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে। যা পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হবে। কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা পেলে দ্বীপের সব হোটেল ভেঙে দেয়া হবে।

 

সেন্টমার্টিনে হোটেলের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে

সেন্টমার্টিনে হোটেলের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে

পরিবেশ বিষয়ক সংস্থা ইয়ুথ এনভায়রনমেন্ট সোসাইটির প্রধান নির্বাহী এম ইব্রাহিম খলিল মামুন বলেন, ছেঁড়াদ্বীপ ও সেন্টমার্টিন সংরক্ষণে সরকারের উদ্যোগ কার্যকর দেখতে চাই। নাহয় একমাত্র প্রবাল দ্বীপটি হারিয়ে যাবে।

সেন্টমার্টিনের ইউপি সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান আবদুর রহমান বলেন, পরিবেশ অধিদফতর ছেঁড়াদ্বীপে পর্যটক না যেতে নির্দেশনা দিয়েছে। দ্বীপের বাসিন্দা আবদুল মালেক বলেন, প্রতিদিন হাজারো পর্যটক সেন্টমার্টিন-ছেড়াদ্বীপ ভ্রমণে আসছে। তারা সৈকতে আবর্জনা ফেলে সৈকতে। এতে দ্বীপের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।

সেন্টমার্টিন দাঁড়িয়ে আছে প্রবাল পাথরের ভিত্তিভূমির ওপর। সাগরের নিচ থেকে উঠে উপরের দিকে ছড়িয়ে পড়েছে অনেকটা ব্যাঙের ছাতার মতো। তাই দ্বীপ থেকে কোরাল বা প্রবাল পাথর সরিয়ে নেয়া দ্বীপের অস্তিত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ। শুধু তাই নয়, দ্বীপে ইটের তৈরি কোনো ভারি স্থাপনা তৈরি করাও ঝুঁকিপূর্ণ। অধিকসংখ্যক মানুষের ভার বহনেও দ্বীপটি কতটুকু সক্ষম তাও হিসাব করে বের করা প্রয়োজন। প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এ দ্বীপের জন্য এখনই কিছু করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন পরিবেশবিদরা।