• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

ঐতিহাসিক এই জাহাজে গেলেই মৃতদের সঙ্গে সাক্ষাৎ!

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০  

টাইটানিকের চেয়েও বড়, দ্রুতগতির এবং শক্তিশালী একটি জাহাজ। সেটি এখন লং বিচ হারবারে বিশ্রামরত। নাম তার আরএমএস কুইন মেরি। বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় এই জাহাজটি আজো অন্যদের কাছে অনুকরণীয়। আর তাইতো এখনো জাহাজটি দেখতে বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষের আনাগোনা ঘটে। শুধু জাহাজটি দেখতেই নয় বরং এর ভৌতিক রহস্য উদঘাটনেও ভিড় জমায় দর্শণার্থীরা। 

৫৩ বছর ধরে জাহাজটি পরিত্যক্ত। এখনো মধ্য রাতে জাহাজটির বিভিন্ন কক্ষে আলো জ্বলে। আবার খুব ভোরবেলা ফোন বাজার শব্দও শোনা যায়। এছাড়াও বাচ্চাদের খেলার কক্ষে শিশুর কান্না প্রায়শই শোনা যায়। ধারণা করা হয়, জন্মের পরপরই হয়ত শিশুটি মারা গিয়েছিল। এ ধরনের কাহিনী প্রচলিত থাকলেও গবেষকরা মানতে নারাজ। যদিও তারা এখনো তেমন কোনো বৈজ্ঞানিক যুক্তি খাটাতে পারেননি।

 

জাহাজটি

জাহাজটি

১৯৩০ সাল থেকে এই এক হাজার ফুটের এই জাহাজের নির্মাণ কাজ শুরু হয় স্কটল্যান্ডের ক্লাইডের জন ব্রাউন শিপইয়ার্ডে। তবে ১৯৩১ থেকে ১৯৩৪ সাল পর্যন্ত এর নির্মাণকাজ বন্ধ রাখে কর্তৃপক্ষ। এরপর ১৯৩৬ সালের ২৭ মে মাসে জাহাজটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়। অতঃপর বিখ্যাত এই জাহাজটি যাত্রার জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকে।

তখনকার দিনে এ ধরনের বড় ও বিলাসবহুল জাহাজে ভ্রমণ করা বিলাসিতা এবং সৌভাগ্যের বিষয় ছিল। এমনকি এমন জাহাজে পা রাখাও সভ্য সমাজের অংশ হিসেবে ধরা হত। সেসময়টাতে আটলান্টিক মহাসাগর জুড়ে ছিল হোস্ট অব উইন্ডসর, গ্রেটা গার্বো, ক্লার্ক গ্যাবল, ডেভিড নিভেন, মেরি পিকফোর্ড, জর্জ এবং ইরা গার্সউইন এবং স্যার উইনস্টন চার্চিলসহ বিশ্বের বেশ কিছু বিখ্যাত জাহাজ। তবে এখনো পর্যন্ত আরএমএস কুইন মেরির রেকর্ড কেউ ভাঙতে পারে নি। 

১৯৪৫ সালে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার পরপরই বিলাসবহুল জাহাজে ভ্রমণ প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। এরপর কুইন মেরি জাহাজটি একটি ট্রুপশিপে (সৈন্য বহসকারী জাহাজ) রূপান্তরিত হয়। যা ‘গ্রে গ্রেস্ট’ নামে পরিচিতি লাভ করে। তখন এ জাহাজের ধারণ ক্ষমতা দুই হাজার ৪১০ থেকে পাঁচ হাজার ৫০০ তে উন্নীত করা হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে জাহাজটি আট লাখের বেশি সৈন্য নিয়ে  ছয় লাখ মাইলেরও বেশি ভ্রমণ করেছিল। এছাড়াও অনেক বড় বড় সামুদ্রিক অভিযানে জাহাজটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।  

 

এমনই অদ্ভূতরে বিষয় দেখা যায় সেখানে

এমনই অদ্ভূতরে বিষয় দেখা যায় সেখানে

সামুদ্রিক দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়াদের বহন করে রেকর্ড গড়েছিল কুইন মেরি। যুদ্ধ শেষে জাহাজটি ২২ হাজারেরও বেশি নারী এবং শিশুদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডায় পৌঁছে দিয়েছিল। যুদ্ধের পর ১৯৪৭ সালের জুলাইতে কুইন মেরির পুননির্মাণ করা হয়। এরপর সাউদাম্পটন, চেরবার্গ এবং নিউইয়র্কের মধ্যে সাপ্তাহিক পরিষেবা বজায় রেখেছিল জাহাজটি। ১৯৬০ এর দশকের গোড়ার দিকে জাহাজ ভ্রমণের বিলাসিতায় ভাটা পরতে থাকে। কারণ তখন সবে বিমান ভ্রমণ জনপ্রিয়তা লাভ করতে শুরু করেছিল এবং জনসাধারণের পক্ষে সাশ্রয়ী ছিল।

১৯৬৩ সালে জাহাজটি ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জ এবং বাহামাসে মাঝে মাঝে ভ্রমণের ধারাবাহিকতা শুরু করে। তখন জাহাজে এখনকার মতো সেন্ট্রাল এয়ার কন্ডিশনার, আউটডোর পুল বা অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাগুলো ছিল না। তবে কুইন মেরি এসব সুযোগ সুবিধা রেখেছিল তার অতিথিদের জন্য। তারপরও কুইন মেরি তার আগের অবস্থানে ভিড়তে পারছিল না। ১৯৬৭ সালে নানা কারণে কুইন মেরির এক হাজারেরও বেশি কর্মী চাকরি ছেড়ে চলে যায়। বিশেষ করে কুইন মেরির ভূতুড়ে কাণ্ড তাদেরকে চাকরি ছাড়তে বাধ্য করেছিল।  

 

অনেকেই এসব দৃশ্য দেখেছেন

অনেকেই এসব দৃশ্য দেখেছেন

বর্তমানে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ঐতিহাসিক এ ভাসমান হোটেল এবং যাদুঘরটি বেশ জনপ্রিয়। প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক এখানে ভিড় করেন। বছরের পর বছর ধরে এই নিয়ে রয়েছে নানা গল্প। তবে কুইন মেরি বেশি প্রসিদ্ধ তার ভূতুড়ে গল্পের জন্য। কেউ কেউ বলে কুইন মেরি বিশ্বের অন্যতম ভূতুড়ে জায়গা। জাহাজের উপরে লুকিয়ে রয়েছে প্রায় দেড় শতাধিক আত্মা। বিগত ৬০ বছর ধরে কুইন মেরি জাহাজে কমপক্ষে ৪৯ জন মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।     

পানির স্তর থেকে ৫০ ফুট নীচে অবস্থিত হলো কুইন মেরির ইঞ্জিন রুম। এটিকেই অলৌকিক ক্রিয়াকলাপের আস্তানা বলা হয়। ১৯৬৬ সালে ১৮ বছর বয়সী জাহাজের এক ক্রুর সেখানে আকস্মিকভাবে মৃত্যু হয়। এরপর থেকেই নীল কভলভার্ডস পরা এবং দাড়ি বাতাসে উড়ছে, এমন যুবকটিকে প্রায়শই সেখানে হাঁটতে দেখা যায়। এরপর হঠাৎই দরজা দিয়ে অদৃশ্য হয়ে যায় সে।     

কুইন মেরির অন্যান্য পার্থিব অতিথিদের জন্য আরো দু’টি জনপ্রিয় স্পট হলো, এর প্রথম এবং দ্বিতীয় শ্রেণির সুইমিং পুল। তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ থাকা প্রথম শ্রেণির সুইমিংপুলে এটি। ১৯৩০ সালে সুইমিং স্যুট পরা নারীদেরকে প্রায়শই পুলের ডেকে ঘুরে দেখা যায়। তারা ডেক থেকে অন্য কক্ষগুলোতেও যায়। এমনকি তাদের ভেজা পায়ে চলার শব্দ এবং ছাপও খুঁজে পাওয়া যায়। কেউ কেউ পুলে একটি বাচ্চা মেয়েকে টেডি বিয়ার কোলে নিয়ে বসে থাকতেও দেখেছে বলে দাবি করেন।    

 

রাতে আলো জ্বলে জাহাজটিতে

রাতে আলো জ্বলে জাহাজটিতে

দ্বিতীয় শ্রেণির পুলরুমে, জ্যাকি নামের আরেকটি ছোট মেয়ের আত্মা প্রায়শই দেখা যায়। জানা যায়, দুর্ভাগ্যক্রমে মেয়েটি জাহাজে থাকার সময় পুলটিতে ডুবে মারা যায়। অনেকেই বলেন বাচ্চাটির কথার পাশাপাশি তার হাসির শব্দও শোনা যায়। জাহাজটির সেলুন রয়েছে প্রথম শ্রেণির লাউঞ্জে। সেই ঘরের কোণায় গাউন পরা এক সুন্দরী নারীর ছায়াকে একা নাচতে দেখা গেছে।  

এছাড়াও শোনা যায়, মধ্য রাতে জাহাজের বিভিন্ন কক্ষে আলো জ্বলে ওঠে। আবার খুব ভোরে ভোরবেলা ফোন বাজার শব্দও শোনা যায়। এছাড়াও বাচ্চাদের খেলার কক্ষে শিশুর কান্না প্রায়শই শোনা যায়। ধারণা করা হয়, জন্মের পরেই শিশুটি মারা গিয়েছিল। এ ধরণের কাহিনী প্রচলিত থাকলেও অনেক গবেষক বলছেন, জাহাজে এমন ঘটনা অন্য অনেক কারণে ঘটে থাকতে পারে। যদিও তারা তেমন কোনো বৈজ্ঞানিক যুক্তি খাটাতে পারেননি।

বর্তমানে কুইন মেরি, একটি ঐতিহাসিক স্থান হিসেবে বিবেচিত। ১৯৬৭ সালে কুইন মেরি সামুদ্রিক যাদুঘর এবং হোটেল হিসেবে পরিচিতি পায়। ক্যালিফোর্নিয়ার লং বিচ শহর কর্তৃপক্ষ তিন দশমিক সাড়ে চার মিলিয়ন ডলারে জাহাজটি কিনেছিল। সে বছরেরই ৯ ডিসেম্বর কুইন মেরি সর্বশেষ ভ্রমণ করেছিল। এক হাজার একটি সফল ভ্রমণের পর অবশেষে আজো বিশ্রামরত।