• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

যেসব কারণে মানুষ দ্রুত মারা যাচ্ছে

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ২০ মে ২০১৯  

১৯৫০ সালে, বিশ্বব্যাপী মানুষের গড় আয়ু ছিল মাত্র ৪৬ বছর। ২০১৫ সালের মধ্যে এটি বেড়ে ৭১ বছরে দাঁড়ায়। সারা পৃথিবী জুড়ে মানুষ গড়ে তুলনামূলক বেশি সময় বেঁচে থাকছে।

তবে বিশ্বের অনেক দেশে নানা ধরণের রোগ, মহামারী এবং অপ্রত্যাশিত ঘটনা অনেকের এই গড় আয়ুর ওপরে প্রভাব ফেলেছে।

সন্ত্রাসবাদ, যুদ্ধ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে মানুষের অকাল মৃত্যু দেখা দিতে পারে। বিশ্বে যতো মানুষের মৃত্যু হয় তার ০.৫% এর পেছনে এসব কারণ দায়ী। কিন্তু সারা বিশ্বে এখনও অল্প বয়সেই অনেকে মৃত্যুবরণ করছে। তাও আবার এমন সব কারণে যেগুলো চাইলেই প্রতিরোধ করা যেতো বলে বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়। 

বিশ্বের মানুষের মৃত্যুর কারণ হিসেবে বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে মানুষ যখন মারা যায় তখন সে আসলেই কীভাবে মারা যায় সেই গল্পটা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলাতে থাকে।

২০১৭ সালে বিশ্বের প্রায় পাঁচ কোটি ৬০ লাখ মানুষ মারা যান। ১৯৯০ সালের তুলনায় এই সংখ্যা এক কোটিরও বেশি। কারণ বিশ্বব্যাপী জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং মানুষ গড়ে বেশি সময় ধরে বাঁচছে। যারা মারা গেছেন তাদের ৭০% এরও বেশি মানুষের মৃত্যুর কারণ অসংক্রামক অথচ জটিল নানা রোগ।

এসব রোগ ব্যক্তি থেকে ব্যক্তির মধ্যে না ছড়ালেও ধীরে ধীরে বেড়েই চলছে। মানুষের এই মৃত্যুর এখন সবচেয়ে বড় একটি কারণ হল হৃদযন্ত্র-জনিত রোগ বা কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ। বর্তমানে প্রতি তিন জনের মধ্যে একজনের মৃত্যুর পেছনে হার্টের সমস্যা দায়ী।
 
হার্টের সমস্যা ক্যান্সারের ঝুঁকিও দুই গুন বাড়িয়ে দেয়, যেটা বর্তমান বিশ্বে মানুষের মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ। বর্তমানে প্রতি ছয়জনের মধ্যে একজন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী ঝুঁকিপূর্ণ রোগের তালিকায় অন্যান্য অ-সংক্রামক রোগও রয়েছে। বিশেষ করে ডায়াবেটিস, শ্বাসযন্ত্রের কয়েকটি রোগ এবং ডিমেনশিয়া অর্থাৎ স্মৃতিভ্রংশ রোগ এই তালিকার শীর্ষে রয়েছে।

অনেক বেশি হতাশার কারণ হল, এখনও অনেক মানুষ প্রতিরোধ করা যেতো এমন রোগে মারা যাচ্ছে। ২০১৭ সালের হিসাব অনুযায়ী বিশ্বের প্রায় ১৬ লাখ মানুষ ডায়রিয়া জনিত রোগে মারা গেছে। ডায়রিয়া হল বিশ্বে মৃত্যুর শীর্ষ ১০টি কারণের মধ্যে একটি। কিছু দেশে, ডায়রিয়াই মানুষের মৃত্যুর অন্যতম কারণ।

নবজাতকের নানা ধরণের অসুখের কারণে তাদের জন্মের প্রথম ২৮ দিনের মধ্যে মারা যাওয়ার হার ২০১৭ সালে ১৮ লাখে দাঁড়িয়েছে। এই মৃত্যুর হার আবার একেক দেশে একেক রকম। জাপানে, ১০০০ শিশুর মধ্যে একজনেরও কম তাদের জন্মের ২৮ দিনের মধ্যে মারা যায়। অথচ বিশ্বের অনেক দারিদ্র্য-পীড়িত দেশে প্রতি ২০০ নবজাতকের মধ্যে একজন ২৮ দিন না পেরুতেই মারা যাচ্ছে। এভাবে আরও নানা প্রতিরোধযোগ্য রোগে মানুষের মৃত্যু তালিকা বাড়ছেই।

অন্যদিকে ধনী দেশগুলোর পাশাপাশি দরিদ্র দেশগুলোতেও মানুষের মৃত্যুর আরেকটি বড় কারণ সড়ক দুর্ঘটনা। ২০১৭ সালে বিশ্বব্যাপী সড়ক দুর্ঘটনার কারণে ১২ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে গবেষণায় দাবি করা হয়। সাম্প্রতিক দশকগুলোতে উচ্চ আয়ের অনেক দেশে সড়কে মৃত্যুর হার উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। কিন্তু বিশ্বব্যাপী সড়কে মানুষের মৃত্যুর সংখ্যাটি এখনও প্রায় একই রকম।

এদিকে, বিশ্বব্যাপী অনেক মানুষ আত্মহত্যা ও হত্যার শিকার হয়ে মারা যাচ্ছে। যুক্তরাজ্যে আত্মহত্যার হার ১৬গুণ বেড়েছে। ২০ থেকে ৪০ বছর বয়সী পুরুষদের মৃত্যুর প্রধান কারণ আত্মহত্যা।

মানুষ কি কারণে মারা যায় সেটা একটি দেশের সঙ্গে সঙ্গে সময়ের পরিক্রমায় বদলে যায়। আগে সংক্রামক রোগে বহু মানুষ মারা যেত, যেটা এখন তুলনামূলক কম। ১৯৯০ সালে, তিনটি মৃত্যুর মধ্যে একটি হতো ছোঁয়াচে ও সংক্রামক রোগের কারণে। কিন্তু ২০১৭ সাল নাগাদ পাঁচটি মৃত্যুর মধ্যে একটি এই সংক্রামক রোগের কারণে হয়। বিশেষ করে শিশুরা সংক্রামক রোগে সবচেয়ে বেশি দুর্বল হয়ে যায়।

সাম্প্রতিককালে অর্থাৎ ১৯ শতকে পৃথিবীর প্রতি তিনজন শিশুর মধ্যে একজন নিজেদের বয়স পাঁচ বছর হওয়ার আগেই মারা যায় বলে জানা গেছে।