• শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

৭০ বছর পেরিয়েও পাননি ভাতার কার্ড, বৃদ্ধার জীবন বাঁচে ভিক্ষায়

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ১৩ মার্চ ২০২২  

হাজেরা বেগম। বয়স ৭০ বছর ছাড়িয়ে। তার নেই কোনো বাড়িঘর। নেই স্থায়ী ঠিকানা। স্বামী নেই ৪০ বছর ধরে। তিন সন্তানের মধ্যে সবাই বিকলাঙ্গ। দুই ছেলে মারা গেছে ছোটবেলায়। মেয়েটি বেঁচে থাকলেও ভিক্ষা করে কোনোমতে জীবন চালায়। কোথাও আশ্রয় না পেয়ে হাজেরা থাকেন সিংগাইর উপজেলার বলধারা ইউনিয়নের পারিল হযরত গাজীউলমূলক ইকরাম ইব্রাহীম বোগদাদী শাহ (রহ.)-এর মাজারে।

কখনো হাটবাজারে। কখনো মানুষের ঘরের বারান্দায়। আবার কখনো আশ্রয়ণ প্রকল্পের কারো ঘরে। দুই পা বিকলাঙ্গ। তাই মাটিতে দুই হাতে ভর করে চলেন হামাগুড়ি দিয়ে। সেজন্য হাতের আঙুলে কর পড়ে গেছে। হামাগুড়ি দিয়ে এই বয়সে কতটুকুই বা যাওয়া যায়। ফলে কখনো বৃষ্টিতে ভেজেন, কখনো রোদে পোড়েন। শারীরিক বিকলাঙ্গ এবং অভাব-অনটনে জর্জরিত হাজেরার আত্মীয়-স্বজনরা যেমন খোঁজ রাখেন না, তেমনি খোঁজ রাখেন না জনপ্রতিনিধিরা।

হাজেরা জানান, বলধারা গ্রামের বাসিন্দা স্বামী মনা পাগলাও তার মতোই পঙ্গু ছিলেন। সন্তানরাও তাই। স্বামী মারা যাওয়ার পর যেটুকু সম্পত্তি ছিল তা তার চাচাতো ভাইয়েরা লিখে নিয়ে গেছে। বিকলাঙ্গ শরীর নিয়ে এখন তার দুর্বিষহ কষ্টের জীবন। দেখার কেউ নেই। দেওয়া হয়নি তাকে কোনো বিধবা কিংবা প্রতিবন্ধী কার্ড। জাতীয় পরিচয়পত্র নেই এবং ভোটার না বলেই তাকে এসব কার্ড দেওয়া হয়নি। পান না কোনো সরকারি সাহায্য। হাজেরার দেখা মেলে বলধারা আশ্রয়ণ প্রকল্পে। বছর দুই ধরে মাজার থেকে তিনি আশ্রয় পেয়েছেন ছানু মিয়া নামে বরাদ্দকৃত সরকারি ঘরে।

এখানকার বাসিন্দা নিলুফার বেগম বলেন, দুই বছর ধরে হাজেরাকে এখানে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। তিনি খুবই অসহায়। কেউ তার খোঁজ নেয় না। তাই প্রতিবেশী হিসেবে তিনিই হাজেরার দেখাশোনা করেন। হাজেরা যে ঘরে থাকেন তা দিয়ে পানি পড়ে। তিনি ভিক্ষা করে একটি চৌকি কিনে অন্ধকার ঘরের এক কোনায় থাকেন। ঘর থেকে হামাগুড়ি দিয়ে বাইরে আসা এখন সম্ভব না বলে ভিক্ষাও করতে পারেন না। ঈদ এলে এলাকার লোকজন সাহায্য-সহযোগিতা করে। এছাড়া অন্য কোনো স্থান থেকে তিনি কোনো সাহায্য পান না।

নিলুফা আরও জানান, তিনিও অন্যের বাড়িতে কাজ করেন। বৃদ্ধ স্বামী কাজ করতে না পারায় তারও কষ্টের জীবন। নিজেদেরই খাবার জোটে না এরপর আবার চোখের সামনে হাজেরা না খেয়ে থাকলে মাঝেমধ্যে খাওয়াতে হয়। হাতের ব্যথায় তিনি প্রায়ই চিৎকার করেন। টাকার অভাবে হয় না চিকিৎসা। তার দাবি হাজেরাকে যদি পাঁচখানা ঢেউটিন আর ছয়টি খুঁটির ব্যবস্থা কেউ করেন তাহলে রাস্তার ধারে একটি ঘর তুলে থাকতে পারতেন।

বলধরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মাজেদ খান বলেন, ‘হাজেরা বেগমের বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি তাকে দেখি নাই। আমার কাছে পাঠিয়ে দিলে আমি তাকে সাহায্য করব।’