• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

সিংগাইরে ইটভাটার মাটি পরিবহণে ড্রামট্রাক, ক্ষতি হচ্ছে গ্রামীণ সড়ক

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ১৫ এপ্রিল ২০২২  

মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার প্রায় ৬০টি ইটভাটায় মাটির যোগান দিতে কাটা হচ্ছে তিন ফসলি জমি। আর ওই মাটি পরিবহণে ব্যবহৃত হচ্ছে ১০ চাকার ড্রাম ট্রাক। যন্ত্রদানব নামের এ ট্রাকের অবাধ চলাচলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে হেমায়েতপুর-সিংগাইর-মানিকগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কসহ অভ্যন্তরীণ  রাস্তা-ঘাটগুলো। 
স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মাত্রাতিরিক্ত লোড নিয়ে দিনে-রাতে ড্রামট্রাকগুলো অবাধে চলাচল করছে। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর থেকে ভোর রাত পর্যন্ত এদের চলাচল ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। মাঝে-মধ্যে থানা পুলিশ দু’চারটি আটক করলেও রফা-দফার মাধ্যমে ছেড়ে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। পুলিশের দাবি, এ থানা এলাকায় ট্রাকগুলো না চালানোর শর্তে মুচলেকায় ছেড়ে দেয়া হয়।

ড্রামট্রাক চালক জনৈক হৃদয় হোসেন বলেন, এ গাড়ীর অধিকাংশ মালিকই সাভারস্থ আমিনবাজার এলাকার । তারা পুলিশ ও প্রশাসনের সাথে লিঁয়াজো করেই সিংগাইরে অবাধে এগুলো চালাচ্ছেন। তিনি আরো বলেন, যে সব মালিকেরা পুলিশ ও প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ রাখেন না তাদের গাড়িগুলো মাঝে মধ্যে আটক করা হয়। 

সরেজমিন দেখা গেছে,  হেমায়েতপুর-সিংগাইর-মানিকগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ক , বাস্তা- মানিকনগর সড়ক, গোবিন্দল-চারিগ্রাম সড়ক, ঋষিপাড়া-বলধারা সড়ক ও সিংগাইর-মানিকনগর-সিরাজপুর সড়কসহ অভ্যন্তরীণ গ্রামীণ রাস্তা-ঘাটগুলোতে ড্রামট্রাকের চলাচলব্যাপক আকার ধারন করেছে। দিনের পাশাপাশি সারারাত ওভার লোড নিয়ে মাটি পরিবহণের কারণে সড়কগুলোর বিভিন্নস্থানে মাটি পড়ে যায়। পরে সেগুলো রোদ ও অন্যান্য যানবাহনের চাকায় পিষ্ট হয়ে ধূলা বালুতে পরিবেশ দূষণ করছে। অতিরিক্ত লোডের কারণে হেমায়েতপুর-সিংগাইর-মানিকগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের বিভিন্নস্থান দেবে যাচ্ছে। জামির্ত্তা ইউনিয়নের হাতনি চকের ৪ টি ইটভাটার সংযোগ সড়কে ট্রাক উঠা নামার কারণে মূল সড়কের অর্ধেকই ভেঙ্গে গেছে। আর এসবের মূলে রয়েছে ইটভাটার মালিক ও মাটি সরবরাহকারী ব্যবসায়ীরা।

বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী ,চান্দহর ইউনিয়নের রিফায়েতপুর চকে মাটি ব্যবসায়ী আব্দুল মালেক ৩ ফসলি জমির মাটি কেটে সাবাড় করে দিচ্ছে। অভিযুক্ত মালেককে গত বছর মাটি কাটার দায়ে ভ্রাম্যমান আদালত  ৩ মাসের কারাদন্ড দিয়েছিলেন। এ বছরও তিনি এলাকার নিরীহ কৃষকদের জিম্মি করে অবাধে মাটি ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া ওই চকে আলিমুদ্দিন , কুদ্দুস , মনির , নাসির ও হায়াত আলী  ফসলি জমির মাটি কেটে ইট ভাটায় বিক্রি করছেন। জামির্ত্তা-হাতনি এলাকায় মোতালেব মেম্বার, আয়নাল, সাইফুল, দানেজ,খোকন, সাহানুর, ইয়াসিন, রউফ, সুলতান, বাচ্চু ও রাশেদ মাটির ব্যবসা করছেন। বলধারায় কুদ্দুস কোম্পানী ও নুরু কোম্পানীর মালিকানাধীন ইটভাটাগুলোতে ৩ ফসলি জমি কেটে মাটির যোগান দেয়া হচ্ছে। এছাড়া চারিগ্রামের আব্দুল করিম, শহীদুল , ফরশেদ প্রকাশ্যে মাটির  ব্যবসা করছেন। জেলা পরিষদ সদস্য আব্দুল আলীম তার এএইচএম ইটভাটায় মাটির যোগান দিতে ফসলি জমির টপসয়েল কেটে নিচ্ছে।

এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে মানিকগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন , আঞ্চলিক মহাসড়কটিতে সর্বোচ্চ ১০ টন পন্যবাহী যানবাহন চলাচল করার কথা। সেখানে মাটি ও কয়লাবাহী  ট্রাক-ড্রাম ট্রাকগুলো ৩০- ৪০ টন লোড নিয়ে চলাচল করছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মহাসড়কটি। আমরা বার বার বলার পরেও পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না।

উপজেলা প্রকৌশলী মোহাম্মদ রুবাইয়াত জামান বলেন, এ সমস্ত ভারী যানবাহনের চাকার বিটের ঘর্ষণে গ্রামীণ সড়কগুলোর কাপেটিং দ্রুত ওঠে যায়।  সকলের সমন্বয়ে এগুলো বন্ধ করা জরুরী। 

সিংগাইর থানার অফিসার ইনচার্জ সফিকুল ইসলাম মোল্যা বলেন,  ড্রাম ট্রাকের ব্যাপারে জিরো টলারেন্স।  মাঝে-মধ্যে আটক করা ড্রাম ট্রাকগুলো রাষ্ট্রীয় সম্পদ বিবেচনায় না চালানোর শর্তে মুচলেকায় ছেড়ে দেয়া হয়। এসব বন্ধে উপজেলা প্রশাসন কার্যকর ব্যবস্থা নিলে পুলিশি সহায়তা দেয়া হবে।

এ ব্যাপারে সিংগাইর উপজেলা নির্বাাহী অফিসার দিপন দেবনাথ বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত হয়েছি। ইতিমধ্যে সকল ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদেরকে মাটিবাহী ড্রামট্রাক চলাচল বন্ধ করার জন্য বলা হয়েছে। তারপরও বন্ধ না হলে পুলিশি সহায়তায় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।