• শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

পিত্তথলিতে পাথর; ডাক্তারের ভুল চিকিৎসা

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ১২ মে ২০২২  

পেটে ব্যথা নিয়ে চিকিৎসা করাতে সদর উপজেলার গড়পাড়া ইউনিয়নের বিশ্বনাথপুর গ্রামের মনোয়ার হোসেনের স্ত্রী রেবেকা (৪৫) ভর্তি হন মানিকগঞ্জ ২৫০ শস্যা জেনারেল হাসপাতালে। তিন দিন ভর্তি থেকে ভালো চিকিৎসা না পেয়ে ক্লিনিকের দালালের মাধ্যমে প্রাইভেট নিউ স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন।

ওই হাসপাতালের ডাক্তার প্রয়োজনীয় অপ্রয়োজনীয় ৯ টি পরীক্ষা নিরিক্ষা করে রেবেকার। পরীক্ষার রিপোর্ট দেখে ডাক্তার এমদাদুল হক (ইমন) রেবেকার এ্যাপেনডিসাইটের অপারেশন করেন। ওই ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় রেবেকার পেটে এখন প্রচন্ড যন্ত্রণা।


 
মানিকগঞ্জ ২৫০ শস্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি থাকাকালীন অবস্থায় ওই সময়ের আলট্রাসোনগ্রামে রেবেকার পেটে হালকা পানি রয়েছে এমন রিপোর্ট দিয়েছে সরকারি হাসপাতালের ডাক্তার। নিউ স্কয়ার হাসপাতালের ডাক্তার এমদাদুল হক রেবেকার এ্যাপেনডিসাইট অপারেশন করার পরে পেটে যন্ত্রণা আরো বেড়ে গেলে গত ৮ মে মানিকগঞ্জ ইউনাইটেট প্রাইভেট হাসপাতালের সার্জারী ডাক্তার জিয়াউর রহমানের কাছে চিকিৎসা নিতে আসে রেবেকা।

এ ডাক্তার তাকে পুনরায় আলট্রাসোনগ্রামসহ কিছু পরীক্ষা করান। এখানে আলট্রাসোনগ্রাম করার পর দেখা যায় রেবেকার পিত্তথলীতে পাথর হয়েছে। এ অবস্থায় ডাক্তার এমদাদুলের ভুল অপারেশনের কারণে অসহায় ভুক্তভোগী রেবেকার জীবন এখন বিপন্ন অবস্থায় কাটছে। ভুল অপারেশনে একদিকে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত অন্যদিকে পেটে প্রচন্ড যন্ত্রণা পোহাতে হচ্ছে রেবেকার।

এঅবস্থায় ভুল অপারেশনের ক্ষতিপূরণ দিতে নিউ স্কয়ার হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ ও ডাক্তার এমদাদুল হক রেবেকার আত্বীয় স্বজনকে ম্যানেজ করার পায়তারা চালাচ্ছে। ক্ষতিপূরণ হিসেবে রেবেকার পিত্তথলীর পাথর অপারেশন করে দিবে বলে আশস্ত করা হয়েছে।


 
নিউ স্কয়ার হাসপাতালের পরীক্ষার রিপোর্টে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কোনো স্বাক্ষর সীল নেই। তাদের মনগড়া রিপোর্টে রেবেকার এ্যাপেনডিসাইট অপারেশন করা হয়।


 
জানা গেছে, ডাক্তার এমদাদুল হক এমবিবিএস শেষ করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল হাসপাতালে সার্জারী কোর্সে চলমান অবস্থায় রয়েছে। সার্জারী কোর্স শেষ না করেই মানিকগঞ্জের বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতালে জটিল জটিল অপারেশন করছে। অভিজ্ঞ সার্জন না হওয়ার ফলে চিকিৎসা সেবার নামে প্রতিনিয়তই ঘটছে দুর্ঘটনা। এরআগে কামুনী রাজবংশী নামের এক রোগীকে সিজার করার সময় পেটের ভিতরে গজ রেখেই সেলাই করে দেয়।

ভুক্তভোগী রেবেকার স্বামী মনোয়ার হোসেন বলেন, বিপদে পড়ে মানুষ ডাক্তারের কাছে যায়। আর সেই ডাক্তার যদি মানুষের জীবন নিয়ে খেলা করে তাহলে সাধারণ মানুষ কার কাছে গিয়ে চিকিৎসা নিবে? আমার স্ত্রীকে পেটে ব্যাথার জন্য নিউ স্কয়ার হাসপাতালে ডাক্তার এমদাদুল হকের কাছে গেলে তিনি একবোঝা রিপোর্ট করিয়েও ভুল অপারেশন করে আমাকে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। এবং ভুল অপারেশন করে আমার স্ত্রীকে মেরে ফেলার অবস্থা করেছে। আমি এই ডাক্তারের শাস্তি ও ন্যায় বিচার চাই।


 
এবিষয়ে ডাক্তার এমদাদুল হক বলেন, নিউ স্কয়ার হাসপাতালে যে আলট্রা করা হয়েছে সে আলট্রা ডাক্তার মমিন করেছে। আমি আলট্রা রিপোর্ট দেখে অপারেশন করি নাই। ক্লিনিক্যাল হিসেবে আমি রোগীর অপারেশন করেছি। আর আমি সার্জারী কোর্সের ক্লিনিক্যাল পাঠ শেষ করেছি। এখন ফিজিক্যালি করবো।

এ প্রসঙ্গে নিউ স্কয়ার হাসপাতালের ব্যবস্থপনা পরিচালক. মো: বাছেদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এবিষয়ে কোন নিউজ করতে নিষেধ করে বলেন, আমার পেট আছে কেন আপনারা আমার ক্ষতি করবেন।

এব্যাপারে মানিকগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ডাক্তার মোয়াজ্জেম আলী খান চৌধুরী বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত আছি। রোগীর অপারেশনের আগের এবং পরের রিপোর্ট দেখলে বুঝতে পারবো কি সমস্যা ছিলো। যদি রোগীর লোক লিখিত অভিযোগ করে তাহলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।