• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

মহানুভবতা নয়, দুর্নীতির কারণে অযোগ্য ড. কামাল পরিবার

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ২৯ নভেম্বর ২০১৮  

একাদশ জাতীয় নির্বাচনে গণফোরামের ১১৩ জন মনোনীত প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিলেও সেই তালিকায় নাম নেই ড. কামাল হোসেন ও তার মেয়ে সারা হোসেনের। ড. কামালের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো উপযুক্ত উত্তর না পাওয়া গেলেও দুদক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও রাজউকের বিভিন্ন নথি বিশ্লেষণ করে জানা যায়, মূলত দুর্নীতিগ্রস্থ হওয়ার কারণেই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন না ড. কামাল পারিবার।

ইতিমধ্যে ড. কামাল হোসেনের বিরুদ্ধে কর ফাঁকির অভিযোগ উঠেছে। উক্ত অভিযোগ খতিয়ে দেখছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ (এনবিআর) সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থা। এছাড়া ড. কামালের স্ত্রী হামিদা হোসেনের নামে সরকারের কাছ থেকে লিজ নেওয়া প্লটের ওপর নির্মিত বাড়ি শর্ত ভেঙে ভাড়া দিয়েছেন তার দুই মেয়ে। বিষয়টি তদন্ত করছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

ড. কামালের কর ফাঁকির বিষয়ে কথা হলে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এর চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, ড. কামাল হোসেন সার্কেল ১৬৪, ঢাকা কর অঞ্চল ৮-এর একজন করদাতা। বিভিন্ন করবর্ষে তিনি স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের মতিঝিল শাখায় দুটি, সিটি সেন্টারে দুটি (যার একটি ফরেন কারেন্সি অ্যাকাউন্ট) এবং আইএফআইসি ব্যাংকে একটি অ্যাকাউন্টসহ মোট পাঁচটি অ্যাকাউন্টে জমা টাকার ওপর কর পরিশোধ করেছেন। তবে কর গোয়েন্দারা এই আইনজীবীর নামে এমন একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের খোঁজ পান যেটিতে জমাকৃত টাকার ওপর তিনি কোনো কর পরিশোধ করেননি। এমন কি ওই অ্যাকাউন্ট সম্পর্কে এনবিআরে কোনো তথ্যও দেননি। অনুসন্ধানে জানা যায়, ওই ব্যাংক অ্যাকাউন্টটি স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের মতিঝিল শাখায় ‘ড. কামাল হোসেন অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস’ নামে করা, যার নং-০১-১৮২৫৪৪৫-০৩। এখানে তার পেশাগত ফি জমা হলেও আয়কর রিটার্নে এই আয় দেখানো হয়নি। ২০১২ সাল থেকে চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত ওই অ্যাকাউন্টে প্রায় ৫৪ কোটি ৬২ লাখ টাকা জমা হয়। শুধুমাত্র গত অর্থবছরে সেখানে প্রায় ১১ কোটি ১২ লাখ টাকা জমা হয়েছে এবং বছর শেষে নগদ স্থিতি ছিল ৫৮ লাখ ৪৬ হাজার টাকা প্রায়। অভিযোগ উঠেছে এই বিপুল পরিমাণ আয় তার পেশাগত ফি, যা আয়কর রিটার্নে প্রদর্শন করেননি এবং সেই ব্যাংক হিসাবটিও তিনি গোপন করেন বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, অপ্রদর্শিত ব্যাংক হিসাব থেকে প্রাপ্ত ব্যাংক স্থিতি ড. কামাল হোসেনের সম্পদ ও দায় বিবরণী হিসেবে বিবেচিত হবে; কিন্তু তিনি সেটি তার কর বিবরণীতে প্রদর্শন করেননি। ওই সম্পদ গোপন করে কর ফাঁকির দায়ে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের সুযোগ রয়েছে।

অপরদিকে ড. কামালের দুই মেয়ে সারা হোসেন ও দীনা হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে রাজউকের। রাজউক বলছে, রাজউক কর্তৃপক্ষ ২২/১০/২০১৮ তারিখ (এস্টেট ও ভূমি-১) সরেজমিনে পরিদর্শনে গিয়ে দেখতে পান যে, ড. কামালের স্ত্রীর নামে করা প্লটে নির্মিত দুই তলা ইমারত কুয়েত দূতাবাস এর কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। লীজ দলিলের শর্ত ভঙ্গ করে আবাসিক প্লটকে কুয়েত দূতাবাস এর কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করায় প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যা চেয়ে জমির মালিককে ২৩/১০/২০১৮ তারিখে পত্র জারি করা হয়। গুলশানের ৮০ নম্বর রোডে এনই (আই) ৯১ ব্লকে ১ বিঘা ১২ কাঠা আয়তনের ৫ নং প্লটটি ৭৭ হাজার ৭শ টাকায় ১৯৭০ সালে লিজ হস্তান্তর করা হয় ড. কামালের স্ত্রী হামিদা হোসেনের নামে। ১৯৯৮ সালে ইমারতসহ ওই প্লটটি দুই মেয়ে সারা হোসেন ও দীনা হোসেনের নামে দানসূত্রে নামজারি করা হয় বলে জানা যায়। লিজ গ্রহীতা হিসেবে সারা হোসেন ও দীনা হোসেন ওই প্লটটি কুয়েত দূতাবাসের কাছে ভাড়া দিয়েছেন।

রাজউক সূত্রগুলো আরো জানায়, শর্ত ভঙ্গ করে আবাসিক প্লট ব্যবহারের পরিবর্তে বাণিজ্যিক স্বার্থে দূতাবাসকে ভাড়া দেওয়ার বিষয়টি লিজ দলিলের ৮ ও ১৫ নং শর্তের পরিপন্থী। এ বিষয়ে তাদের (ড. কামালের দুই মেয়েকে) নোটিশও দেওয়া হয়েছে। গত ২৩ অক্টোবর রাজউক-এর সহকারী পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি) স্বাক্ষরিত নোটিশটি লিজ গ্রহীতাদের কাছে পাঠানো হয় বলে জানা গেছে।

উক্ত বিষয়াদি সম্পর্কে রাজনৈতিক বিশ্লেষক বিভুরঞ্জন সরকার বলেন, ড. কামালের বিরুদ্ধে কর ফাঁকির অভিযোগ অপরদিকে তার মেয়েদের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ। মূলত এ কারণে নির্বাচনে অংশ নিতে না পারলেও সাধারণ মানুষের সামনে বিষয়টি এমন ভাবে প্রকাশ করা হচ্ছে যেন ড. কামাল পরিবার দেশের জন্য বিরাট বিসর্জন দিচ্ছেন। এসব কাজও কিন্তু জনগণের সঙ্গে প্রতারণার শামিল। ড. কামাল হোসেনের মতো এমন বিজ্ঞ ব্যক্তির কাছে এমন প্রতারণা নিতান্তই দুঃখজনক।