• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ যেন ‘ফুটবলরঙ্গ’

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ১৮ জানুয়ারি ২০১৯  

বাংলাদেশের পেশাদার লিগকে অনেকে বলে থাকেন 'ফুটবলরঙ্গ'। শুরুর এক যুগেও দেশের শীর্ষ লীগ দাঁড়ায়নি নির্দিষ্ট কোনো কাঠামোয়। একেক বছর একেকভাবে আয়োজন হয়ে থাকে লিগ। পেশাদারিত্বের ‘প’ না থাকা লিগ নামকা ওয়াস্তেই আয়োজন করে বাফুফের পেশাদার লিগ কমিটি।

শুরতেই আসা যাক নাম প্রসঙ্গে। ২০০৭ সালে বি. লিগ নামে যাত্রা শুরু হয়েছিল এই লিগ। দুই আসর পর বাফুফের মনে হয়েছে বি.লিগ দেশের শীর্ষ লিগ বুঝায় না। বাংলাদেশের মানুষ বুঝলেও বিদেশি কেউ মনে করতে পারেন বি.লিগ মানে দ্বিতীয় স্তরের লিগ। তাইতো তৃতীয় আসরে পেলো নতুন নাম ‘বাংলাদেশ লিগ।’

বাংলাদেশে তো অনেক লিগই হয়। তাহলে পেশাদার লিগের নাম কী ঠিক হলো? উত্তর- ‘না’। আবার বদলে গেলো পেশাদার ফুটবলের শীর্ষ লিগের নাম। ‘বাংলাদেশ লিগ’ নামে তৃতীয় ও চতুর্থ আসর চলার পর পেশাদার লিগ ‘বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ’ নাম পেলো ২০১২ সালে পঞ্চম আসরে। সর্বশেষ নামটি এখনো টিকে আছে।

পেশাদার লিগ মানেই ক্লাবের নিজস্ব ভেন্যু থাকা বাধ্যতামূলক। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বড় এই শর্তে ছাড় পাচ্ছে ক্লাবগুলো। কারণ কারোরই যে নিজস্ব মাঠ নেই। গোড়ায় যখন গলদ তখন অন্যসব ক্ষেত্রে গড়লতো থাকবেই। পেশাদার লিগ শুরু করলেও নির্ধারিত কোনো মৌসুম নেই। একেক মৌসুমে একেক মাসে লিগ শুরু করে থাকে বাফুফে।

এ পর্যন্ত লিগ হয়েছে ১০টি। বছরের ১২ মাসের ফেব্রুয়ারি, মে, জুন ও আগস্টে লিগ মাঠে গড়ায়নি কখনো। বাকি ৮ মাসেরই আছে লিগ শুরু হওয়ার অভিজ্ঞতা। কোন আসর কোন মাসে শুরু হয়েছে সে দিকে চোখ বুলানো যাক:

২০০৭ সালে প্রথম পেশাদার লিগের আসর শুরু হয়েছিল মার্চ মাসে, ২০০৮ সালে দ্বিতীয় আসর শুরু হয়েছিল সেপ্টেম্বরে, ২০০৯ সালে তৃতীয় আসর শুরু হয় অক্টোবরে, ২০১০ সালে চতুর্থ আসর মাঠে গড়ায় ডিসেম্বরে, ২০১২ সালে পঞ্চম আসর শুরু হয় জানুয়ারিতে, একই বছর ষষ্ঠ আসর শুরু হয়েছিল নভেম্বরে, ২০১৩ সালে সপ্তম আসর শুরু হয়েছিল ডিসেম্বরে, ২০১৫ সালে অষ্টম আসর শুরু হয়েছিল এপ্রিলে, ২০১৬ সালে নবম আসর মাঠে গড়িয়েছিল জুলাইয়ে, ২০১৭ সালে সর্বশেষ আসর শুরু হয়েছিল জুলাইয়ে এবং এবার শুরু হচ্ছে জানুয়ারিতে।

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ কয়টা ক্লাব নিয়ে হয়? এর উত্তর দিতে পারবেন না দীর্ঘদিন ধরে পেশাদার লিগ কমিটির চেয়ারম্যানের পদে জাঁকিয়ে বসে থাকা বাফুফের সিনিয়র সহ-সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদীও। অন্যদের পারার তো কোনো প্রশ্নই আসে না। কারণ লিগের দলেরও তো কোনো নির্দিষ্ট সংখ্যা নেই।

প্রথম পেশাদার লিগে দল ছিল ১১ টি। দ্বিতীয় আসরেও তাই। শুরুতেই অদ্ভুত সিদ্ধান্ত বাফুফের- কোনো রেলিগেশন নেই। তাই তো প্রথম দুই আসরে চাপহীন খেললো মিডিওকার দলগুলো। তৃতীয় আসরে দল বেড়ে হয় ১৩ টি, চতুর্থ আসরে ১২ আবার পঞ্চম আসরে নামে ১১তে। দল সংকটে ষষ্ঠ আসরে ক্লাব মাত্র ৯টি! সপ্তম আসরে দল একটি বেড়ে দাঁড়ালো ১০'এ। অষ্টম আসরে ১১ দল, নবম ও দশম আসরে ১২টি।

এবার লিগ হবে ১৩ দল নিয়ে। আগামী আসর হওয়ার কথা ছিল ১২ দলের। কিন্তু এবারের লিগ শুরুর ৭২ ঘন্টা আগে প্রফেশনাল লিগ কমিটির সিদ্ধান্ত দ্বাদশ আসরে দল থাকবে ১৩ টি। এ সিদ্ধান্ত আগামী লিগের আগে কতবার বদলায় সেটাই দেখার বিষয়।

পেশাদার লিগে খেলার কোনো ক্রাইটেরিয়াও নির্দিষ্ট নেই। এখন প্রিমিয়ার লিগে উঠতে হয় চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে খেলে। এক সময় প্রথম বিভাগ থেকে উঠতো। আবার কোনো লিগ না খেলে সরাসারি প্রিমিয়ারে ওঠার নজিরও আছে। শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব ও বিজেএমসিকে প্রিমিয়ার লিগে উঠতে কোনো পরীক্ষা দিতে হয়নি। দুই দলই অটোপাস। একইভাবে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লিগেও খেয়াল খুশিমতো দল নিয়ে থাকে পেশাদার লিগ কমিটি।

লিগে বিদেশি খেলোয়াড়ের কোটাও একেক বছর একেক রকম। ক্লাবগুলোর দাবিই এ ক্ষেত্রে বেশি কার্যকর হয়। বাফুফে পরিচালনা করতে গিয়ে কর্মকর্তারা ভোটের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারেই মাথায় রাখেন। তাই তো ক্লাবগুলোকে না চটিয়ে যা বলে তাই শুনে যান সুবোধ বালকের মতো।

লিগ আসে লিগ যায়। দল আসে দল যায়। ভেন্যু বাড়ে-কমে। কখনো ঢাকার বাইরে, কখনো পুরোটাই ঢাকায় বন্দী। সব বদলালেও পেশাদার লিগটা নির্দিষ্ট কাঠামোয় দাঁড় করাতে না পারা কমিটির কর্মকর্তারা থাকেন বহাল তবিয়তে। বাফুফেও পারে না তাদের গড়া স্ট্যান্ডিং কমিটির টিকিটি ছুঁতে। তাই বাংলাদেশের পেশাদার লিগটা তো এক প্রকার রঙ্গ-ই।