• শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

গ্রামীণ অ্যাম্বুলেন্স ও একজন ইউএনওর স্বপ্নপূরণ

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ২০ জানুয়ারি ২০২১  

রোগী পরিবহনে সাধারণত যে অ্যাম্বুলেন্স পাওয়া যায় তা সরু রাস্তায় অথবা গ্রামীণ সড়কে চলাচল করতে পারে না। তুলনামূলক ভাড়া বেশি থাকায় এর সেবাও নিতে পারেন না দরিদ্র মানুষ। এজন্য কম খরচে কীভাবে অ্যাম্বুলেন্স সেবা চালু করা যায় তারই চিন্তা করেছিলেন মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুল আলম।

অবশেষে তার সেই স্বপ্নপূরণ হলো। সিএনজি ইঞ্জিনের সাথে কাস্টমাইজড বডি দিয়ে তৈরি করা দুটি অ্যাম্বুলেন্স সেবা চালু করেছেন তার উপজেলায়। নাম দেয়া হয়েছে- গ্রামীণ অ্যাম্বুলেন্স।


উপজেলার যেকোনো এলাকা থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসতে মাত্র ৪০০ টাকায় মিলবে এই অ্যাম্বুলেন্স সেবা। নিজ ইউনিয়নের কমিউনিটি ক্লিনিক ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রে যেতে ২০০ টাকা এবং জেলা সদর হাসপাতালে রোগী পরিবহনে ৬০০ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে।

গাড়ি নির্মাণ প্রতিষ্ঠান উত্তরা মোর্টস উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার আইডিয়াকে কাজে লাগিয়ে অ্যাম্বুলেন্স দুটি তৈরি করে। ওই প্রতিষ্ঠানের তৈরি প্রথম দুটি অ্যাম্বুলেন্স সাটুরিয়া উপজেলায় দেয়া হলেও, বাণিজ্যিকভাবেও তারা এই অ্যাম্বুলেন্স সরবরাহ করবে বলে জানা গেছে।

সিএনজি গাড়ি হলেও প্রচলিত অ্যাম্বুলেন্সের মতোই রোগী পরিবহনে সব সুযোগ-সুবিধা রাখা হয়েছে যানটিতে। গাড়িটি ৪৫০ সিসির। প্রতিটি অ্যাম্বুলেন্স তৈরিতে খরচ পড়েছে সাত লাখ টাকা। উপজেলা পরিচালনা ও উন্নয়ন প্রকল্প থেকে এই অ্যাম্বুলেন্সের খরচ বহন করা হয়।

কীভাবে ইউএনও আশরাফুল আলমের স্বপ্নপূরণ হলো তা তিনি নিজেই জানিয়েছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ফেসবুকে তার এই পোস্ট মুহূর্তেই ব্যাপক সাড়া ফেলে। অনেকেই শেয়ার করে তার উপজেলায়ও এই অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস চালু করতে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

ইউএনওর পোস্টটি তুলে ধরা হলো-

‘গ্রামীণ অ্যাম্বুলেন্স: একটা স্বপ্নপূরণ

তখন সদ্যই যোগদান করেছি সাটুরিয়া উপজেলার ইউএনও হিসেবে। ঢাকার কাছের উপজেলা হিসেবে কল্পনায় যতটা উন্নত হিসেবে উপজেলাকে কল্পনা করেছিলাম বাস্তবে সেরকম দেখিনি। বিশেষ করে ইউনিয়নগুলো থেকে উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা কিছুটা পিছিয়ে পড়া মনে হয়েছে, রাস্তাগুলোও সরু। তখনই চিন্তা হচ্ছিল এসব জায়গা থেকে মানুষ কীভাবে অসুস্থ রোগীকে বিশেষ করে প্রসূতি মায়েদের হাসপাতালে নেবে। এরকম একটা সমস্যা থেকেই মাথায় ভাবনা কাজ করছিল কীভাবে সেবা প্রাপ্তি আরো সহজ করা যায়।

চিন্তা ছিল সিএনজি ইঞ্জিনের সঙ্গে কাস্টমাইজড বডি দিয়ে অ্যাম্বুলেন্স বানানোর কিন্তু যারা সিএনজি গাড়ি আমদানি করে এমন কয়েকটা জায়গা নক করে মন খারাপই হয়েছিল। সবশেষে নক করলাম উত্তরা মোটর্সে। একদিন ঢাকায় উত্তরা মোটর্সের হেড অফিসেই চলে গেলাম চেয়ারম্যান মহোদয়ের সাথে সাক্ষাতে। আলাপে জানলাম আমি যেটা চাই এরকম একটা সার্ভিস উনি সারাদেশের জন্য ভাবছেন। দুইয়ে দুইয়ে চার মিলে গেল। এরপর অনেক কিছু…।

অবশেষে উপজেলা উন্নয়ন ও পরিচালনা প্রকল্পের মাধ্যমে দুটি অ্যাম্বুলেন্স কেনা হয়। গ্রামীণ সরু রাস্তায় চলবে বলে নাম রাখলাম ‘গ্রামীণ অ্যাম্বুলেন্স’।

সেবা পাবেন কীভাবেঃ উপজেলার যেকোনো ইউনিয়ন থেকে ফোন করলেই এ সার্ভিস নিতে পারবেন।

যোগাযোগঃ ০১৭০৬০৭৭১০০, ০১৭০৬০০৪৯৪৫

খরচঃ সাটুরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগী নিতে ৪০০ টাকা এবং মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিতে ৬০০ টাকা নিজ ইউনিয়নের কমিউনিটি ক্লিনিক কিংবা পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রে নিতে ২০০ টাকা।

কৃতজ্ঞতাঃ মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জনাব জাহিদ মালেক মহোদয়ের প্রতি, জেলা প্রশাসক মানিকগঞ্জ জনাব এস এম ফেরদৌস স্যারের প্রতি, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ ফটো মহোদয় এবং সকল ইউপি চেয়ারম্যানসহ সাটুরিয়ার জনসাধারণের প্রতি। এছাড়া কৃতজ্ঞতা উত্তরা মোটর্সের প্রতিও।

ধন্যবাদান্তে,
উপজেলা নির্বাহী অফিসার
সাটুরিয়া, মানিকগঞ্জ

(আপনারা সাটুরিয়ার সব মানুষের কাছে এই সেবা সম্পর্কিত বার্তাটি পৌঁছে দিন যেন বেশি সংখ্যক মানুষ এই সেবা সম্পর্কে জানতে এবং সহজে সেবা পেতে পারেন)’

ব্যতিক্রমী অ্যাম্বুলেন্স সেবা চালুর বিষয়ে সাটুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুল আলম বলেন, স্বপ্নপূরণের অনুভূতি অন্যরকম। অনেক চ্যালেঞ্জ ছিল কাজটি বাস্তবায়ন করতে। এ উদ্যোগের তখনই পূর্ণতা পাবে যখন মানুষ এই সার্ভিস ব্যবহার করবেন।