• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

প্রশ্নফাঁস

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ২৬ জানুয়ারি ২০১৯  

প্রশ্নফাঁস, একটা ব্যাধির নাম। সেই সাথে একটি আতঙ্কের নামও। প্রশ্নফাঁসের কথা শুনলে আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে উঠে পুরো জাতি। যেখানে সবাইকে পড়ানো হয় শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড, সেখানে একটি বিশাল ‘সিন্ডিকেট’ মেরুদন্ডটা ভেঙে দেয়ার পাঁয়তারায় মগ্ন। প্রশ্নফাঁসের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মেধা ও সৃজনশীলতা ধ্বংসের বন্দোবস্ত পাকা করা হচ্ছে। মাত্র দুইশ থেকে পাঁচশ টাকার বিনিময়ে গ্যারান্টিসহ বোর্ডের প্রশ্নপত্র শিক্ষার্থীদের হাতে বুঝিয়ে দেয়ার ঘোষণা দেয়া হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ব্যবহার করছে অতি আধুনিক প্রযুক্তি। প্রশ্নফাঁসকারীরা যেন এ ব্যাপারে সরকারের উদ্দেশে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে! বোঝাই যাচ্ছে, প্রশ্নপত্র ফাঁসকারীরা কোনো কিছুই তোয়াক্কা করছে না। আইন-পুলিশ-আদালত ইত্যাদি তাদের কাছে অতি তুচ্ছ বিষয় যেন। তাই বলে বসে নেই সরকারও। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং ঢাকা শিক্ষা বোর্ড প্রশ্ন ফাঁস রোধে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

প্রশ্নফাঁস রোধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার। সেই রকমই ইঙ্গিত দিয়েছেন নতুন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। এবার অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল কাগজে বাঁধিয়ে প্রশ্নপত্র কেন্দ্রে পাঠানো হবে ও নিরাপত্তা স্টিকারযুক্ত খাম ব্যবহার করা হবে। ট্রেজারির বাইরে কোথাও প্রশ্নপত্র না রাখার (আগে ভোল্টেও রাখা হতো) সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া আগের মতো পরীক্ষার্থীদের ৩০ মিনিট আগে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে হবে। পরীক্ষা কেন্দ্রের আশপাশেও জারি থাকবে ১৪৪ ধারা। অন্যান্যবারের মতো এবারও পরীক্ষা হলে কেউ মোবাইল নিয়ে ঢুকতে পারবেনা। এটা শিক্ষক এবং আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। শুধু কেন্দ্রসচিব সাধারণ মানের একটি মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারবেন। একই সঙ্গে পরীক্ষা শুরুর ২৫ মিনিট আগে কোন সেট প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা হবে, তা লটারি করে ঠিক করাসহ পুরোনো সিদ্ধান্তগুলোও কঠোরভাবে মানা হবে। ইতোমধ্যেই দেশের সকল কোচিং সেন্টার ২৭ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম ডিভিশনকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে নজরদারি রাখার। এছাড়া ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সাইবার ইউনিট ও ডিবির সমন্বয়ে ১০টি টিম ভুয়া প্রশ্নপত্র জালিয়াতদের ধরার জন্য বিশেষ অভিযান চালাচ্ছে।

এই তো গেলো প্রশ্নফাঁস বন্ধে নেয়া পদক্ষেপের বিষয়টা। এখন কথা উঠতে পারে কেউ যদি পরীক্ষার আগে প্রশ্ন নাই চায়, তবে প্রশ্নটা ফাঁস হচ্ছে কেন? কারা চায় প্রশ্ন? উত্তরটা কিন্তু খুব সোজা। হিসাবটাও পরিষ্কার। পরীক্ষার আগে একে কেন্দ্র করে একটা বিশাল বাজার তৈরী হয়। এই বাজারে পরীক্ষার আগে প্রশ্ন পাওয়ার অনেক চাহিদা। আর এর গ্রাহক হলো কিছু অভিভাবক ও কতিপয় শিক্ষার্থী। কথাটা কিন্তু সঠিক। যতদিন পর্যন্ত গ্রাহক থাকবে ততদিন পর্যন্ত বাজার থাকবে, এটাই যুগ যুগ ধরে হয়ে আসছে। সরকার যত পদক্ষেপই নিক না কেন, অভিভাবক ও শিক্ষার্থী যদি সচেতন না হয় তবে প্রশ্নফাঁস এক কথায় অসম্ভব। এই ধরণের মানসিকতা দূর করতে পারলেই কেবল মাত্র প্রশ্নফাঁস রোধ করা যাবে। এক হাতে তালি বাজে না, কথাটা এমনি এমনি আসেনি। একটা হাত বন্ধ হলেই কেবল তালি বাজা বন্ধ হবে। আর প্রথম হাত হিসেবে এগিয়ে আসা উচিত অভিভাবকদেরই।