• শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

শিমের থোকায় কৃষকের স্বপ্ন

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ২১ নভেম্বর ২০১৮  

ছোট ছোট ফুল আর থোকা থোকা শিমে ভরে উঠেছে সীমান্তবর্তী জেলা লালমনিরহাটের সবজি চাষিদের শিমের বাগান। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর বাম্পার ফলন হয়েছে শিমের। আর এই শিমের থোকাতেই স্বপ্ন বুনছেন চাষিরা।

সামান্য জমিতে স্বল্প পুঁজি দিয়েই শিমের চাষ করা যায়। আর একটু পরিচর্যা করলেই বেশ মুনাফা অর্জন করা সম্ভব। আষাঢ় মাসের শেষদিকে সারিবদ্ধভাবে গর্ত খুঁড়ে কিছু গোবর সার প্রয়োগ করে শিমের বীজ বপন করতে হয়।

এরপর কিছুদিন সার সেচ ও কীটনাশক প্রয়োগের মাধ্যমে পরিচর্যা করে চারা গাছ একটু বড় হলে মাচাং বানিয়ে দিলে মাত্র আড়াই/তিন মাসের মধ্যেই বিক্রি করার মতো হয়ে যায় শিম।

স্বল্প পুঁজিতে শিম চাষ করে লালমনিরহাটের অনেকেই নিজেদের ভাগ্য বদল করতে সক্ষম হয়েছেন।

জেলার আদিতমারী উপজেলার বড় কমলাবাড়ি গ্রামের চাষি ফেরদৌস আলম। তিনি গত বছর ৬ হাজার টাকা খরচ করে মাত্র ২০ শতাংশ জমিতে শিম চাষ করে প্রায় অর্ধ লাখ টাকা আয় করেছিলেন।

সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে চলতি মৌসুমে ১৮/২০ হাজার টাকা খরচ করে ৬৫ শতাংশ জমিতে উচ্চ ফলনশীল শিমের চাষ করেছেন। এরই মধ্যে ৩০ শতাংশ শুধু বীজ উৎপাদনের জন্য রেখে এবং বাকি ৩৫ শতাংশ জমির শিম সবজি হিসেবে গত এক মাস ধরে বাজারে বিক্রি করছেন।

চাষি ফেরদৌস ৩৫ শতাংশের বাগান থেকে প্রতি তিনদিন পরপর তিন থেকে চার মণ শিম তুলছেন তিনি। প্রথমদিকে প্রতি মণ চার হাজার টাকা দরে বিক্রি হলেও এখন বিক্রি করছেন প্রতিমণ এক থেকে দেড় হাজার টাকা।

প্রথম দুই সপ্তাহের উৎপাদিত শিমে তার উৎপাদন খরচ উঠে গেছে। মন্দা বাজারেও এখন প্রতি সপ্তাহে অাট থেকে ১০ হাজার টাকার শিম বিক্রি করছেন তিনি। এভাবে আরো এক থেকে দেড় মাস শিম আসবে তার বাগান থেকে।

আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ওই ৩৫ শতাংশ জমি থেকে লক্ষাধিক টাকা আয় করার আশা করছেন তিনি। এছাড়াও বাকি ৩০ শতাংশের বীজ বিক্রি করেও অর্ধ লাখ টাকা আয়ের স্বপ্ন দেখছেন তিনি। সব মিলে ৬৫ শতাংশ জমি থেকে চলতি মৌসুমে দেড় লাখ টাকা আয়ের স্বপ্ন তার।

পাশের গ্রামের চাষি সৈয়দ আলীর সম্বল বলতে মাত্র ২০ শতাংশ জমি। যেখানে অন্য ফসলের সঙ্গে শীত মৌসুমে কয়েক বছর ধরে শিম চাষ করছেন তিনি। গত বছরও ৬০ হাজার টাকা আয় করেছেন শিম বিক্রি করে।

তিনি জানান, শীতকালে শিমের বেশ চাহিদা থাকে তাই বাজারে এর কদরের মত বেড়ে যায় বাজার মূল্যও। বিক্রি করতে ঝামেলা নেই। পাইকাররা ক্ষেত থেকে শিম কিনে নেয় ন্যায্য মূল্যে। অল্প জমিতে বেশি মুনাফা পেতে শিম চাষের বিকল্প নেই বলেও জানান তিনি।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার বড়বাড়ি এলাকার চাষি নজরুল ইসলাম জানান, উঁচু জমিতে ধান চাষ করে তেমন মুনাফা না আসায় চাষাবাদ ছেড়ে দেয়ার চিন্তা করেছিলেন। হঠাৎ এক আত্মীয়ের পরামর্শে ৫ বছর আগে পরীক্ষামূলকভাবে মাত্র ১০ শতাংশ জমিতে শিমের চাষ করে বেশ লাভবান হন তিনি।

সেই থেকে শিম চাষে আগ্রহ বাড়ে তার। চলতি মৌসুমে প্রায় ৮০ শতাংশ জমিতে শিমের চাষ করে এ পর্যন্ত প্রায় ৩০ হাজার টাকা আয় করেছেন। উৎপাদন খরচ উঠে গিয়ে লাভের অংশে পড়েছেন তিনি। আবহাওয়া আর বাজার অনুকূলে থাকলে দুই লাখ টাকা আয় করার আশা করছেন তিনি।

শিম চাষ করে সেই টাকায় সংসার চালিয়ে ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ মেটানোর পরেও প্রতি বছর জমি বন্দক নিচ্ছেন তিনি। অভাব নামক দানবকে বিদায় দিয়েছেন। তার অনুকরণে ওই গ্রামের অনেক চাষি এখন বাণিজ্যিকভাবে শিম চাষ শুরু করেছেন।

লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ পরিচালক বিদু ভূষন রায় বাংলানিউজকে জানান, শিম প্রোটিন সমৃদ্ধ একটি সবজি। এর বিচিও সবজি হিসেবে খাওয়া যায়। তাই দেশে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় শিমের বাম্পার ফলন হয়েছে। শিম চাষিরা বেশ লাভবান হবেন বলেও আশা করেন তিনি।