• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপরাধ শুধু বেড়েই চলেছে

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ১৯ জুন ২০২১  

করোনাকালে দেশে তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহারের সঙ্গে সমান্তরাল হারে বেড়েছে সাইবার অপরাধ। দেশে ফেসবুক, ইউটিউব, লাইকি, টিকটক, বিগো লাইভের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে অপরাধ শুধুই বেড়ে চলেছে। যৌন হয়রানিমূলক একান্ত ব্যক্তিগত মুহূর্তের ছবি বা ভিডিও (পর্নোগ্রাফি) ব্যবহার করে হয়রানি বেড়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ অন্যান্য অনলাইন অ্যাকাউন্ট হ্যাকিংয়ের ঘটনাও বেড়েছে। নতুন যুক্ত হয়েছে এটিএম হ্যাকিং। এ ছাড়া ই-কমার্সে পণ্য কিনতে গিয়ে প্রতারণার ঘটনাও বেড়ে চলেছে।

সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস (সিসিএ) ফাউন্ডেশনের ‘সাইবার ক্রাইম ট্রেন্ড ইন বাংলাদেশ-২০২০’ শীর্ষক বার্ষিক গবেষণা প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনটি গতকাল শুক্রবার আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়েছে। সিসিএএফের সভাপতি কাজী মুস্তাফিজের সভাপতিত্বে ভার্চুয়াল এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।

প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য মতে, ২০১৯-২০২০ সালে দেশে সাইবার অপরাধের মধ্যে আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে সামাজিক মাধ্যমসহ অন্যান্য অনলাইন অ্যাকাউন্ট হ্যাকিং বা তথ্য চুরি। গবেষণায় এটিএম কার্ড হ্যাকিংয়ের মতো একটি নতুন অপরাধ শনাক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে অনলাইনে কেনাকাটা বৃদ্ধি পাওয়ায় মানুষ অনলাইনে পণ্য কিনতে গিয়ে প্রতারণার শিকার হচ্ছে। এ ধরনের অপরাধের মাত্রা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১.০৮ শতাংশ, যা গতবার ছিল ৭.৪৪ শতাংশ।  

গবেষণা প্রতিবেদনটি মোট ১১টি ট্যাবে তৈরি করা হয়। সেখানে সামগ্রিক ফলাফলে দেখা গেছে, দেশে চার ধরনের অপরাধের মাত্রা কমেছে। অন্যদিকে ছয় ধরনের অপরাধের মাত্রা বেড়েছে। তার পরও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কাছে ভুক্তভোগীদের অভিযোগের হার হতাশাজনক। অপরাধের বিশ্লেষণে বলা হয়, দেশে সাইবার সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি সাইবার লিটারেসিও বাড়াতে হবে।

গবেষণায় সাইবার অপরাধের তুলনামূলক পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, প্রথম স্থানে রয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ অন্যান্য অনলাইন অ্যাকাউন্ট হ্যাকিং, ২৮.৩১ শতাংশ। ২০১৯ সালের প্রতিবেদনে এই হার ছিল ১৫.৩৫ শতাংশ। আবার অপপ্রচারের ঘটনা ২২.৩৩ থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ১৬.৩১ শতাংশ।

যৌন হয়রানিমূলক একান্ত ব্যক্তিগত মুহূর্তের ছবি বা ভিডিও ব্যবহার করে হয়রানি আগের ৬.০৫ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ৭.৬৯ শতাংশ। তবে ফটোশপে ভুক্তভোগীর ছবি বিকৃত করে হয়রানি কমে দাঁড়িয়েছে ৫.৮৫ শতাংশ।

এদিকে অপরাধের মাত্রায় অনলাইনে মেসেজ পাঠিয়ে হুমকি দেওয়ার ঘটনা এবার তৃতীয় শীর্ষ অবস্থানে উঠে এসেছে। তবে এই অপরাধের মাত্রা গতবারের প্রতিবেদনের তুলনায় প্রায় ৩ শতাংশ কমে হয়েছে ১৪.১৬ শতাংশ।

ওয়েবিনারে প্যানেল আলোচক ছিলেন দৈনিক প্রথম আলোর যুব কর্মসূচি বিভাগের প্রধান মুনির হাসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারপারসন খন্দকার ফারজানা রহমান, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ফরেনসিক) মোস্তফা কামাল রাশেদ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কাজী আনিছ, বাংলাদেশ ইন্টারনেট গভর্ন্যান্স ফোরামের মহাসচিব মোহাম্মদ আব্দুল হক অনু ও শিশুদের সাইবার সুরক্ষাবিষয়ক যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা প্রটেক্ট আস কিডসের বাংলাদেশ প্রতিনিধি শারমিন নাহার লিনা। গবেষণা প্রতিবেদনের বিস্তারিত তুলে ধরেন সিসিএ ফাউন্ডেশনের রিসার্চ সেলের আহ্বায়ক এবং ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সিনিয়র লেকচারার মনিরা নাজমী জাহান।

ওয়েবিনারে মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, দেশে সুস্থ সাইবার সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করতে সরকারি উদ্যোগ যথেষ্ট নয়। এর জন্য সরকারি-বেসরকারি অংশীজনসহ সবাইকে নিজ নিজ জায়গা থেকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। তৃণমূল পর্যায় থেকে অভিভাবকদের মধ্যে সন্তানের প্রযুক্তি ব্যবহারের বিষয়গুলো নিয়ে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। গত কয়েক বছরে কেন্দ্রীয়ভাবে পুলিশের সক্ষমতা বেড়েছে। তবে এই অপরাধের বিস্তার এখন গ্রামে পৌঁছে গেছে। তাই প্রতিটি থানায় অপরাধ শনাক্তে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে।

প্যানেল আলোচনায় অংশ নিয়ে ডিজিটাল সংস্কৃতিতে নীতিবোধ জাগ্রত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন মুনির হাসান। খন্দকার ফারজানা রহমান বলেন, সাইবার অপরাধের শিকার হয়ে মানুষ পুলিশের কাছে যেতে ভয় পায়। পুলিশের কাছে গিয়েও ভুক্তভোগীরা কেন প্রতিকার পাচ্ছে না বা সন্তুষ্ট নয়, তার কারণগুলো খতিয়ে দেখতে হবে।

কাজী আনিছ বলেন, সরকারের দিক থেকে প্রতিরোধ বা দমনমূলক প্রক্রিয়া থেকে বেরিয়ে এসে সাইবার সচেতনতামূলক মডেল তৈরি করা দরকার। তাহলে সচেতনতা বাড়বে এবং অপরাধপ্রবণতা কমবে।

সাইবার ক্রাইম নিয়ন্ত্রণে ২০১৬ সাল থেকে পুলিশের প্রতিটি বিভাগ কাজ করছে বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তা মো. মোস্তফা কামাল রাশেদ।

ডিজিটাল দুনিয়ায় সুস্থ সংস্কৃতি গড়ে তুলতে পারিবারিক শিক্ষার পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় প্রচার বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন মোহাম্মদ আব্দুল হক অনু। প্রান্তিক পর্যায়ে শিশুদের ডিজিটাল আসক্তি কাটাতে ভালোর জাগরণ গড়ে তোলার আহ্বান জানান শারমিন নাহার লিনা। গবেষণায় সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সাইবার স্কোয়াড গঠন, ই-কমার্স নীতিমালা ও রাজনৈতিক জনশক্তিকে সচেতনতামূলক কাজে নিয়োজিত করাসহ ৯ দফা সুপারিশ তুলে ধরা হয়।