• শনিবার ০৪ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২১ ১৪৩১

  • || ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫

বৈশাখি হাতি-ঘোড়া নিয়ে ব্যস্ত সাটুরিয়ার বণ

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ৮ এপ্রিল ২০১৯  

আর কয়েকদিন পরেই পহেলা বৈশাখ। বাংলা বছরের প্রথম মাসের প্রথম দিন। বাঙ্গা‌লির প্রা‌ণের উৎসব পহেলা বৈশাখ মা‌নেই গ্রা‌মে গ্রা‌মে মেলা। পহেলা বৈশাখের মেলায় বিক্রির জন্য হাতি, ঘোড়া, মুকুট, নৌকা, পাখির সাজ তৈরি‌তে মা‌নিকগ‌ঞ্জের সাটু‌রিয়ার বণিক পরিবারের সদস্যরা এখন অনেক ব্যস্ত। তাদের তৈরি সাজ ( সাচে ফেলে চিনি দিয়ে তৈরি খাবার) আসছে পহেলা বৈশাখের মেলায় বিক্রি হবে।

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ার উপজেলার বালিয়াটি ইউনিয়নের ভাটারা গ্রামের কয়েকটি পরিবার সাজ তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করে। পরিবারগুলো বাপ দাদার পেশা হিসেবে এ পেশাকে আঁকড়ে ধরে আছে। প্রায় দেড়শ বছরের পুরনো ঐতিহ্য ধরে রেখেছে তারা। বিশেষ করে বৈশাখী মেলায় তাদের কদর বেশি হয়। বৈশাখী মেলায় বিক্রির জন্য রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকাররা এসে ফরমায়েশ (অগ্রিম অর্ডার) দেন হাতি, ঘোড়া, মুকুট, নৌকা, পাখিসহ বাহারি রঙের সাজের। ব‌নিক প‌রিবা‌রের ব্যস্ত সময় পার করছে সাঁজ শিল্পীরা।

সরেজমিন ‌গি‌য়ে দেখা যায়, উপ‌জেলার ভাটারা গ্রামের যে কয়টি বণিক পরিবার রয়েছে তারা সবাই ব্যস্ত সাজ তৈরি করতে। পহেলা বৈশাখের কাজ নিয়ে দিনরাত ব্যস্ত সময় পার করছে বনিক পরিবারগুলোর ছোট বড় সবাই। সকালের সূর্যোদয়ের সঙ্গে শুরু হয় বিভিন্ন ধরনের সাজ তৈরি এবং তা প্রক্রিয়া করার কাজ। গুড় ও চিনি পানিতে মিশিয়ে জাল করে রস বানিয়ে তৈরি করা হয় সুস্বাদু নানা রকমের সাজ। কেউ তৈরি করছেন গুড়ের তৈরি বাতাসা আবার কেউ তৈরি করছেন চিনির সাদা হাতি, ঘোড়া, মুকুট, নৌকা, পাখি, কদমা, মাছসহ নানা ধরনের সাজ। কে কার থেকে বেশি সাজ তৈরি করতে পারে এ নিয়ে চলে তাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা। এ সাজ তৈ‌রির খেলা চলে মধ্যরাত পযর্ন্ত।

ভাটারা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ননী গোপাল বনিক গুড়ের বাতাসা তৈরি করছেন। সঙ্গে যোগান দিচ্ছেন স্ত্রী আলো রাণী বনিক। চুলার মধ্যে আখের গুড় জাল করে একটি ছিদ্র পাত্র দিয়ে ঢেলে বড় বড় বাতাসা সাজ তৈরি করছে। এ বাতাসা বিন্নি দিয়ে খেতে খুবই মজার। প্রায় ৭০ বছর ধরে এ পেশায় জড়িত সে। ননী বনিক আরও জানায়, খাটি আখের গুড় ছাড়া এ সাঁজ বানানো যায় না। রাজশাহী থেকে ১ মণ খাটি গুড় কিনতে ২ হাজার ৭শ টাকা লাগে। আর একমণ গুড় দিয়ে ৩৫ থেকে ৩৬ কেজি বাতাসা তৈরি হয়। তবে এলাকার হাট বাজারে ‌বি‌ক্রি হওয়া আখের গুড়ে চিনি মেশানো থাকায় এ গুড় দিয়ে সাঁজ তৈরি করা যায় না।

মানিকগঞ্জ ছাড়াও এ সাজ টাঙ্গাইল, নারায়ণগঞ্জ, মির্জাপুর, নাগরপুর ও উত্তরাঞ্চলে পাইকারি বিক্রি করা হয়। এক মণ (৪০ কেজি) এই সাজ তৈরি করতে খরচ হয় দুই হাজার ৮০০ টাকা। বিক্রি করা হয় তিন হাজার ২০০ টাকা।