• রোববার ২৮ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৫ ১৪৩১

  • || ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

সিঙ্গাইরে ভূমি জরিপের নামে চলছে টাকার খেলা!

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ২৯ জুলাই ২০১৯  

মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর পৌরসভার আজিমপুর মহল্লার বাসিন্দা নুরুল হক চর সিঙ্গাইর মৌজার ৫নং সিটে নুরুল হক ও তার ভাই-বোনের দেড় একর জমি রয়েছে নুরুল হক জানান, জমির দখল ও মালিকানা সংক্রান্ত সব কাগজপত্রে কোনো সমস্যা নেই জমি রেকর্ডভুক্ত করতে গেলে ১০ হাজার টাকা দাবি করেন দিয়ারা অপারেশন নরসিংদী উপ-আঞ্চলিক (ক্যাম্প) কার্যালয়ের সার্ভেয়ার জানে আলম টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে জমি রেকর্ডভুক্ত করতে নানা টালবাহানা শুরু করে জরিপকর্মীরা পরে ৪ হাজার টাকা দেওয়ার পর জমি রেকর্ডভুক্ত করতে রাজি হন সার্ভেয়ার জানে আলম এরপর কয়েকদিন পেরিয়ে গেলেও এখনো মাঠ পর্চা হাতে পায়নি বলে জানান নুরুল হক সদর ইউনিয়নের আজিমপুর গ্রামের কৃষক আওলাদ হোসেন জানান, ১৪ শতাংশ জমির জরিপ কাজের জন্য চার হাজার টাকা দাবি করে ৯নং সিটের সার্ভেয়ার হারুন অর রশিদ পরে বাধ্য হয়ে দুই হাজার টাকা দিলে জমি রেকর্ডভুক্ত করে আমাকে মাঠ পর্চা দেন জরিপকর্মীরা

এলকাবাসীর অভিযোগ, শুধু তারা দুইজনই নন, ডিজিটাল ভূমি জরিপের নামে উপজেলার চর সিঙ্গাইর, রিফায়েতপুর, দক্ষিণ জামশা, বায়রা ও বিনোদপুর ছোট খন্ড মৌজায় জমির মালিকদের কাছ থেকে নানা অজুহাতে খতিয়ান প্রতি এক হাজার টাকা থেকে শুরু করে লাখ টাকা পর্যন্ত আদায় করছেন উপজেলা সেটেলমেন্ট অফিস ও দিয়ারা অপারেশন নরসিংদী উপ-আঞ্চলিক (ক্যাম্প) কার্যালয়ের জরিপকর্মীরা জমির পরিমাণ, দাগ খতিয়ান ঠিক রাখতে ও ছোটখাটো ভুলত্রুটি সংশোধন করতে জরিপকর্মীদের চাহিদা মোতাবেক টাকা দিতে বাধ্য হচ্ছেন জমির মালিকরা টাকা দিয়েও ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কায় মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেনা না কেউ এ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের এপ্রিল মাস থেকে উপজেলার রিফায়েতপুর, দক্ষিণ জামশা, বায়রা ও বিনোদপুর ছোট খন্ড মৌজা ও জুন মাস থেকে উপজেলার চর সিঙ্গাইর মৌজায় ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভূমি জরিপের কাজ শুরু হয় চর সিঙ্গাইর মৌজায় দিয়ারা অপারেশন নরসিংদী উপ-আঞ্চলিক (ক্যাম্প) কার্যালয় ও বাকি ৪টি মৌজায় উপজেলা সেটেলম্যান্ট অফিসের জরিপকর্মীরা ভূমি জরিপ করছেন চর সিঙ্গাইর মৌজাকে ৯টি, রিফায়েতপুর মৌজাকে ৯টি, দক্ষিণ জামশা মৌজাকে ৮টি, বায়রা মৌজাকে ১০টি ও বিনোদপুর ছোট খন্ড মৌজাকে ৩টি সিটে ভাগ করা হয়েছে প্রতিটি সিটে একজন সার্ভেয়ারের নেতৃত্বে একজন সর্দার আমিন, একজন বদর আমিন ও একজন চেইনম্যানসহ ৫টি মৌজায় মোট ১৫৬ জন জরিপকর্মী ভূমি জরিপকাজে নিয়োজিত রয়েছে জরিপকাজ তদারকি করছেন দিয়ারা অপারেশন নরসিংদী উপ-আঞ্চলিক ক্যাম্পের রাজস্ব অফিসার মুহাম্মদ আবু তাহের ও উপজেলা সহাকারী সেটেলমেন্ট অফিসার মো. আব্দুল কুদ্দুস

এলাকাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে সরেজমিনে গিয়ে কথা হয়, সিঙ্গাইর পৌরসভার গোলড়া গ্রামের ছোবান মিয়ার সঙ্গে তিনি জানান, চর সিঙ্গাইর মৌজার ১নং সিটে আমার ছেলের নামে ৯ শতাংশ জমি রয়েছে দখল ও মালিকনা সংক্রান্ত সব কাগজপত্র সঠিক থাকলেও জমি রেকর্ডভুক্ত করার জন্য ৫ হাজার টাকা দাবি করেন সার্ভেয়ার শফিকুর রহমান ও তার সহকর্মীরা পরে দুই হাজার টাকা দেওয়ার পর জমির জরিপকাজ সম্পন্ন করে মাঠ পর্চা দেওয়া হয় একই গ্রামের গৃহবধূ মাবিয়া বেগম জানান, তার স্বামী ফজল মিয়া ক্রয় ও পৈতৃক সূত্রে সাড়ে ২৬ শতাংশ জমির মালিক মালিকানা সংক্রান্ত সব কাগজপত্র সঠিক থাকার পরও জমি রেকর্ডভুক্ত করতে ১৫ হাজার টাকা দাবি করেন সার্ভেয়ার শফিকুর রহমান দাবিকৃত টাকা না দেওয়ায় এখনো তার স্বামীর জমি রেকর্ডভুক্ত করা হয়নি

এমন অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে সার্ভেয়ার শফিকুর রহমান ও জানে আলম বলেন, জমি রেকর্ডভুক্ত করতে কোনো টাকা পয়সা নেওয়া হয় না কাজ শেষে কেউ যদি খুশি হয়ে কিছু দেন, তাহলে সেটা নেই টাকা ছাড়া কোনো কাজ হয় না এমন অভিযোগ সত্য নয় তবে এই প্রতিবেককে আর্থিক সুবিধা দেওয়ার বিনিময়ে তারা এ বিষয়ে পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য অনুরোধ করেন

গত এক সপ্তাহে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় অন্তত ৫০ জন জমির মালিকের তারা জানান, জমির রেকর্ডভুক্ত করতে তাদের সবারই কমবেশি টাকা খরচ হয়েছে কারো টাকা ছাড়া কাজ হয়নি এদের মধ্যে আজিমপুর গ্রামের নুরুল হকের কাছ থেকে ৫ হাজার, আওলাদ হোসেনের কাছ থেকে ২ হাজার, ফজল মিয়ার কাছ থেকে ৩ হাজার, হযরত আলীর কাছ থেকে ৩ হাজার, আজিমপুর গ্রামের কাজী আলী হোসেন ও তার ভাতিজা আব্দুস সালামের কাছ থেকে ৮ হাজার, গোলাড়া গ্রামের রুহুল আমীনের কাছ থেকে ২ হাজার ৫০০, শাহীনুর রহমানের কাছ থেকে ১ হাজার, মোক্তার খানের কাছ থেকে ১ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন জরিপকর্মীরা

 

হয়রানির ভয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক জমির মালিক জানান, খতিয়ান প্রতি নিম্নে ১ হাজার থেকে শুরু করে লাখ টাকা পর্যন্ত আদায় করছেন জরিপকর্মীরা কারো কাছ থেকে আরো বেশি টাকা নেওয়া হচ্ছে এ পর্যন্ত  উপজেলার ৫টি মৌজায় ডিজিটাল ভূমি জরিপের নামে জমির মালিকদের কাছ থেকে আনুমানিক ৩ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে জরিপদলের লোকজন

দিয়ারা অপারেশন নরসিংদী উপ-আঞ্চলিক ক্যাম্পের রাজস্ব অফিসার মুহাম্মদ আবু তাহের বলেন, জরিপকর্মীদের বিরুদ্ধে ঘুষ নেয়ার ঢালাও অভিযোগ সঠিক নয় স্থানীয় দালাল চক্র আমাদের কথা বলে টাকা নিয়ে থাকতে পারে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করলে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে

উপজেলা সহকারি সেটেলমেন্ট অফিসার আব্দুল কুদ্দুস জানান, ডিজিটাল ভূমি জরিপ কাজের জন্য টাকা পয়সা নেওয়ার কোনো বিধান নাই জরিপকাজের জন্য কারো বিরুদ্ধে টাকা নেওয়ার সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাহেলা রহমত উল্লাহ জানান, ভূমি জরিপে কিছু অনিয়মের কথা লোকমুখে শুনেছি কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি অভিযোগ পেলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে