• বুধবার ০৮ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২৫ ১৪৩১

  • || ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫

শিবালয়ে বেড়েছে কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ৩১ জানুয়ারি ২০২০  

মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলায় দিন দিন কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত বেড়ে চলেছে। উপজেলার আরিচা নদী বন্দর, পাটুরিয়া ফেরি ঘাট, হাট- বাজার, স্কুল- কলেজ, গ্রাম অঞ্চলের ফাঁকা মাঠ, পরিত্যক্ত ব্রীজ – কালভার্ট ও পরিত্যক্ত ভবনে প্রতিদিন সকাল থেকে মধ্যরাত অবদি চলে কিশোর গ্যাংদের আনাগোনা।

পশ্চিমা স্টাইলে চুলের কাটিংয়ের পাশাপাশি বাহারি রং লাগিয়ে পাশ্চিমা সংস্কৃতির আদলে পোশাক পরে সংবদ্ধভাবে চলাফেরা তাদের। কোথাও ৫-১০ জন, আবার কোথাও ১৫-২০ জন এমনকি ৩০ জনের মতো বখাটেরা সংবদ্ধ হয়ে চলাফেরা করে থাকে।

স্কুল-কলেজ ফাঁকি দিলেও অর্থের বিনিময়ে রাজনৈতিক সভা-সমাবেশে এদের উপস্থিতি থাকে চোখে পড়ার মতো। অনেক সময় নিজেদের প্রভাব জানাতে অথবা বড় ভাইদের প্রভাব বিস্তারের হাতিয়ার হয়ে এরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।

এখানেই শেষ নয়, এসব কিশোররা স্কুল- কলেজ পড়ুয়া মেয়েদের রাস্তাঘাটে নানাভাবে উত্ত্যক্ত করে আসছে। কিন্তু মান- সম্মানের ভয়ে উত্ত্যক্তের শিকার হলেও মেয়ে ও তার পরিবারের অভিভাবকরা প্রতিবাদ না করেই নিশ্চুপ থাকেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, গ্যাংয়ের অধিকাংশ কিশোরই নিয়মিত ধুমপান ও মাদক সেবন করে। এসব দলের লিডাররা অনেকেই আবার মাদক ব্যবসার সাথেও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত।

এসব কিশোর গ্যাংদের দমন ও মাদক নিয়ন্ত্রনে পুলিশ এবং উপজেলা প্রশাসন বিভিন্ন সময়ে নিয়মিত অভিযান ও জেল জরিমানা করে আসছে। তবুও থামানো যাচ্ছেনা কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত।

তাদের অপকর্ম নিয়ে এলাকার উঠতি বয়সী তরুণ-তরুণীর অভিভাবকরা যেমন উদ্বিগ্ন থাকেন, ঠিক তেমনি এলাকাবাসীও এসব গ্যাংয়ের নানা অপকর্মের কারণে অতিষ্ঠ হয়ে পড়ছেন।

কিশোর গ্যাংয়ের অধিকাংশই সদ্য প্রাথমিক শেষ করা অথবা মাধ্যমিকের শিক্ষার্থী। যাদের বয়স ১২ থেকে ১৬ বছরের মধ্যে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, উপজেলার আরপাড়া,ইছাইল, উথলী,গহেরপুর, গোয়ালজান,কালীবাড়ি টেপড়া, কাতরাশিন,বারাদিয়া, নয়াবাড়ি, জাফরগঞ্জ, তেওতা,  ডাক্তারখানা, অণ্ব্যয়পুর, এলাচিপুর, দাশকান্দি, নালী, রুপসা, নয়াকান্দি, মালুচী, কয়েরা, আমডালা, দশচিড়া, চারিপাড়া, ভাকলা, উলাইল, নতুন বাজার শাকরাইল, দিয়ারচর শাকরাইল, তারাইল, রঘুনাথপুর, ঢাকাইজোড়া, ফলসেটিয়া, শিমুলিয়া, মহাদেবপুর, বরংগাইল  এলাকায়  বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের স্থানীয় প্রভাবশালী নেতা- কর্মীদের ছত্রছায়ায় গড়ে উঠেছে এসব কিশোর গ্যাং।

স্থানীয় প্রবীণেরা উঠতি বয়সী এসব কিশোরদের মাঝে অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধির কারন হিসেবে ভারতীয় মিডিয়ার আগ্রাসন এবং ফেসবুক ও ইন্টানেটের অপব্যবহারকেই দায়ি করছেন।

আর বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে কিশোর গ্যাংয়ের উত্থান ও এদের মাঝে অপরাধ প্রবণতার বৃদ্ধির হার এখনই নিয়ন্ত্রণ না করা গেলে দেশের গ্রামাঞ্চলে আইন-শৃঙ্খলার যেমন অবনতি ঘটবে, ঠিক তেমনি ভাবে ইভটিজিং, ধর্ষন, খুন-গুম, ছিনতাই, রাহাজানি, মাদকদ্রব্য বিস্তারের মতো ভয়াবহ অপরাধমূলক কর্মকান্ডের মাত্রা বেড়ে যাবে।

শিবালয় উপজেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ- সম্পাদক সাংবাদিক শহীদুল ইসলাম জানান, উঠতি বয়সের তরুণ-তরুণী ও স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদেরকে সচেতন হতে হবে। সন্তান কখন কোথায় যাচ্ছে, কি করছে এ সম্পর্কে পিতা-মাতাকে খোঁজ-খবর রাখতে হবে সব সময়।

এসব শিশু কিশোদের পিতা-মাতা সচেতন না হলে কখনোই কিশোর অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আনা যেমন সম্ভব হবে না, ঠিক তেমনি কিশোর গ্যাংয়ের উত্থান রোধ করা সম্ভব নয়।

এ বিষয়ে শিবালয় উপজেলা নির্বাহী অফিসার(ইউএনও) এ এফ এম ফিরোজ মাহমুদ জানান, ইতিমধ্যে উপজেলার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকদের এ বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। স্কুল চলাকালীন কোন শিক্ষার্থী যদি স্কুল ফাঁকি দিয়ে সংবদ্ধভাবে কোন অপরাধমুলক কর্মকান্ড ঘটায় তবে কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই ব্যবস্থা নিতে হবে।

তিনি আরও জানান, কোনো কিশোর বখাটেপনা, ইভটিজিং ও মাদকের সাথে জড়িত হওয়ার প্রমাণ মিললে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। আগামীতেও এদের নিয়ন্ত্রণে অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।