• বৃহস্পতিবার ০৯ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২৬ ১৪৩১

  • || ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫

একযুগ ধরে ইঁদুরের সঙ্গে যুদ্ধ!

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ১৩ এপ্রিল ২০১৯  

‘ইঁদুর দেশ ও জাতির শত্রু, ইঁদুর নিধন করুন দেশের জাতীয় সম্পদ রক্ষা করুন’ এ স্লোগান নিয়ে মাগুরা সদরের মঘী ইউপির বড়খড়ি গ্রামের হান্নান মোল্লা রীতিমত ইঁদুরের সঙ্গে যুদ্ধ করে চলেছেন একযুগ ধরে। 

ইঁদুর নিধনে জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত হান্নান মোল্লা ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, ২০০৭ সালে ২৩ শতক ক্ষেতের ফসল ইঁদুর নষ্ট করে। এতে তার অনেক আর্থিক ক্ষতি সাধিত হয়। ফলে সে নিজ খরচে ইঁদুরের বিভিন্ন ওষুধ কিনে ইঁদুরের সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। এক বছরে সে নিজ ক্ষেতের প্রায় ৫০ হাজার ইঁদুর মেরে সাফল্য অর্জন করেন। 

ইঁদুর মারার জন্য সে হাট-বাজার থেকে ইঁদুর মারার যন্ত্র ও ওষুধ কিনে তা ব্যবহার শুরু করেন। কিন্তু ইঁদুর মারার যন্ত্র ও ওষুধ তার ভাল  না হওয়ায় সে কৃষি বিভাগের পরামর্শ নিতে থাকেন। পরে দীর্ঘ গবেষণার পর সে ইঁদুর মারার জন্য বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে নিজেই তৈরি করেন ১১ প্রকার যন্ত্র ও লিকুইড ওষুধ। তার উদ্ভাবিন যন্ত্র ও ওষুধ হাটে বাজারে বিক্রি হচ্ছে।  

হান্নান মোল্লা বলেন, ভ্যান গাড়ি মেকার হিসেবে ভ্যান তৈরি করে তা বেঁচে জীবিকা অর্জন করি । ইঁদুর নিধনে ৪-৫ লাখ টাকা খরচ করেছি। নিজ জেলার পাশাপাশি বিভিন্ন জেলায় ইঁদুর মারার জন্য কাজ করি। ২০১৩ থেকে ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রীর দফতরের ৫২টি ইঁদুর, কৃষি মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন দফতরের ইঁদুর নিধন কার্যক্রম পরিচালনা করেছি। 

তিনি বলেন, ইঁদুর নিধনের উদ্দেশ্য হলো কৃষকের খাদ্য রক্ষা করা। একজন কৃষক দেশ জাতির সম্পদ । কৃষক বাঁচলে দেশ বাচঁবে। ইঁদুর বছরে ৮০ থেকে ৯০ হাজার কোটি  টাকার রাষ্ট্রীয় সম্পদ নষ্ট করে। একটি ইঁদুর বছরে ৪০ থেকে ৪৫কেজি খাবার নষ্ট করে ফেলে । 

এছাড়া ইদুরে প্লেগ, ভাইরাস, জন্ডিসসহ ৩৩ প্রকার মারাত্বক রোগ ছড়ায়। ধান, গম, ফল-ফলাদি, বৈদ্যুতিক তার, গুরুত্বপূর্ণ কাগজ ও আসবাবপত্র নষ্ট করে ইঁদুর। একজোড়া ইঁদুর বছরে দুই হাজার থেকে তিন হাজার জন্ম বিস্তার করতে পারে। তাই ইঁদুর নিধন করা  জরুরি। 

হান্নান মোল্লার ইঁদুর নিধনের সাফল্যে সাবেক তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ ২০০৯ সালে, ২০১০ সালে সাবেক ভূমিমন্ত্রী রেজভি  হীরা ও ২০১১ সালে নৌ যোগাযোগ মন্ত্রী শাহাজান সিরাজ জাতীয় পুরস্কার ও সনদপত্র প্রদান করেন। 

২০০৭ ও ২০০৮ সালে উদ্ভিদ সংরক্ষণ উইং বিভাগের পরিচালক সাইদ আলী ও ২০১৪ সালে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক আব্বাস আলী তাকে পুরস্কার প্রদান করেন । 

জেলা পর্যায়ে মাগুরা কৃষি সম্প্রসারণের সাবেক উপ-পরিচালক শাহাদত হোসেন, মোখলেছুর  রহমান, সাবেক উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুব্রত কুমারসহ সাবেক মাগুরা-১ আসনের এমপি ও রেড ক্রিসেট চেয়ারম্যান  অধ্যাপক ডা. সিরাজুল আকবরও তাকে পুরস্কার প্রদান করেন। 

পুরস্কার, খ্যাতি, অর্জন পাওয়া সত্ত্বেও হান্নান আক্ষেপ করে বলেন, এখন পর্যন্ত সরকারি কোনো  সাহায্য সহযোগিতা না পাওয়ায় তার কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।  

মঘী ইউপির কৃষক কোরবান, রাজ্জাক, জামির আলী বলেন, ক্ষেতের ফসল যখন ইঁদুরে বিনষ্ট করতে শুরু করে তখন দিশেহারা হয়ে পড়ি। হান্নানের সহযোগিতায় ফসল রক্ষা হয়েছে। এখন ইঁদুরকে ভয় পাই না। বরং ইঁদুরই আমাদের  ভয় পায়। তার উদ্ভাবিত ইঁদুর মারার যন্ত্র ও ওষুধ ব্যবহার করে অনেক উপকার পেয়েছি।

মঘী ইউপি আওয়ামী লীগের সাধারণ পিলটন মাহমুদ বলেন, আমাদের ইউপি এখন ইঁদুরমুক্ত। সদরের বাকী ইউপিগুলোতেও তার ইঁদুর নিধনের সাফল্য রয়েছে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে সে অনেক দূর যেতে পারবে ।