• মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৭ ১৪৩১

  • || ২০ শাওয়াল ১৪৪৫

আইন মন্ত্রণালয়ে আটকা ‘ওয়ান ম্যান কোম্পানি’ আইন

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ২৫ জুন ২০১৯  

‘ওয়ান ম্যান কোম্পানি’ গঠনের অনুমতির বিধান রেখে কোম্পানি (সংশোধনী) আইন- ২০১৮ এর খসড়া গত ২৭ নভেম্বর নীতিগতভাবে অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। মন্ত্রিসভার নির্দেশনায় কিছু সংযোজন-বিয়োজন করে গত মার্চে আইনটি ভেটিং বা পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। কিন্তু আজ পর্যন্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্ন করতে পারেনি আইন মন্ত্রণালয়। এজন্য ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাগো নিউজকে বলেন, বিশ্বব্যাংকের সহজ ব্যবসা সূচক বা ডুয়িং বিজনেস ইনডেক্সে বর্তমানে বাংলাদেশের অবস্থান ১৮৯টি দেশের মধ্যে ১৭৭তম। সূচকটি বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্টের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বলে গণ্য করা হয়। সরকার ২০২১ সালের মধ্যে এ সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান দুই অংকে বা কমপক্ষে ৯৯তম অবস্থানে নিয়ে আসার লক্ষ্য ঠিক করেছে

তিনি বলেন, বিদ্যমান কোম্পানি আইন অনুযায়ী বাংলাদেশে ব্যবসা শুরু করতে বেশকিছু জটিলতার সম্মুখীন হতে হয়। এসব ক্ষেত্রে ‘ওয়ান ম্যান কোম্পানি’ তথা ‘একজনের মালিকানায় প্রতিষ্ঠান’ গঠনের অনুমতির বিধান রেখে কোম্পানি (সংশোধনী) আইন- ২০১৮ এর খসড়া চূড়ান্ত করে ভেটিংয়ের জন্য গত মার্চ মাসে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। ওই সময় দ্রুত ভেটিং শেষ করার অনুরোধও জানানো হয়েছিল। কারণ এ আইনের সঙ্গে সহজ ব্যবসা সূচক উন্নয়নেরও সুযোগ ছিল।

‘কিন্তু শেষ পর্যন্ত হলো না। কারণ গত বৃহস্পতিবার (২০ জুন) পর্যন্ত আইন মন্ত্রণালয় ভেটিং কার্যক্রম শেষ করতে পারেনি। যদি মার্চেই ভেটিং কার্যক্রম শেষে এপ্রিলের মধ্যে কোম্পানি আইনটি চূড়ান্ত করা যেত তাহলে ডুয়িং বিজনেস ইনডেক্স- ২০১৯ এ কয়েক ধাপ এগোনো যেত। কারণ চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত সময় গণনা করে সূচকটি নির্ণয় করা হয়।’

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, সব মন্ত্রণালয় যদি সমন্বিতভাবে কাজ না করে তাহলে সরকার যে ২০২১ সালের মধ্যে ডুয়িং বিজনেস সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান দুই অংকে বা কমপক্ষে ৯৯তম অবস্থানে উন্নীতকরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল, সেটি ব্যাহত হবে।

‘ওয়ান ম্যান কোম্পানি’ গঠনের উপকারিতা সম্পর্কে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, বর্তমানে অনেকের কাছে অর্থ থাকা সত্ত্বেও কোম্পানি গঠন করতে পারছে না। কোম্পানি গঠন করতে না পারায় তাদের প্রোপাইটারশিপে ব্যবসা করতে হয়। এতে তারা ব্যাংক ঋণের ক্ষেত্রে চরম সমস্যায় পড়েন।

সূত্র বলছে, একজন উদ্যোক্তা যখন লিমিটেড কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন তখন তিনি কোম্পানি আইনের মাধ্যমে ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারেন। ঋণে তার দায়টাও থাকবে লিমিটেড। অর্থাৎ কোনো কারণে যদি ওই উদ্যোক্তা ব্যবসায় ফেল করেন তাহলে তার দায় থাকবে কোম্পানি পর্যন্তই। তার আর অন্যান্য সম্পত্তি বা ছেলে-মেয়ে বা পরিবারের অন্যদের ওপর ঋণের দায় পড়বে না।

কিন্তু কোনো উদ্যোক্তা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে যদি প্রোপাইটারশিপে ব্যবসা পরিচালনা করেন সেক্ষেত্রে ঋণের দায় হবে আনলিমিটেড। অর্থাৎ এ ঋণের দায়ভার তার অন্যান্য স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তিসহ ছেলে-মেয়ে ও পরিবারের অন্যান্যদেরও নিতে হবে। এজন্য একক ব্যক্তি দিয়ে কোম্পানি গঠন করে ব্যবসার সুযোগ থাকলে এতে রিক্স কমে যাবে।

সূত্র আরও জানায়, চূড়ান্ত কোম্পানি আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, একজন ব্যক্তি ‘ওয়ান ম্যান কোম্পানি’ গঠন করতে পারবেন। এক্ষেত্রে একক ব্যক্তির কোম্পানি বলতে ওই ব্যক্তির মাধ্যমে গঠিত কোম্পানিকে বোঝানো হবে। কোম্পানি আইনের সংশোধনীতে এ নতুন ধারণা আনা হয়েছে, যা দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে এতদিন ছিল অনুপস্থিত। তবে বিশ্বের অনেক দেশে এ আইন আছে।

জানা গেছে, বর্তমান আইনে সর্বোচ্চ ৫০ জন সদস্য নিয়ে একটি লিমিটেড কোম্পানি গঠনের বিধান রয়েছে। তবে এ বিধান ওয়ান ম্যান কোম্পানি গঠনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না। কেবল একজন ব্যক্তি এ ধরনের একটি কোম্পানি গঠন করতে পারবেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্য সচিব মো. মফিজুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘কোম্পানি আইনটি ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু এখনও তারা ভেটিং সম্পন্ন করতে পারেনি। হয়তো একটু জটিল বিষয়, তারা সময় নিচ্ছে।’

এ বিষয়ে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সাবেক সভাপতি আবুল কাসেম খান বলেন, ‘অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধারা বেগবান করা এবং নতুন নতুন বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য নীতিমালার সংস্কার, ব্যবসা পরিচালনায় ব্যয় হ্রাস, মানবসম্পদ ও প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বৃদ্ধি এবং অবকাঠামো উন্নয়নের কোনো বিকল্প নেই।’

তিনি আরও বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে হলে ব্যবসা পরিচালনার সহজাত পরিবেশ তৈরির বিষয়টির ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। নতুন ব্যবসা শুরুর জন্য নিবন্ধন পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রক্রিয়াগত জটিলতা কমানো এবং বিভিন্ন ধরনের ফি ও চার্জ হ্রাস করতে হবে।

তার মতে, প্রস্তাবিত কোম্পানি আইন বাস্তবায়ন হলে অনেক নতুন কোম্পানি কর নেটওয়ার্কের আওতায় আসবে এবং সরকারের রাজস্ব আহরণ বেড়ে যাবে।