• বুধবার ১৫ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ১ ১৪৩১

  • || ০৬ জ্বিলকদ ১৪৪৫

সাভার মাদকের রাজ্য

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ২৯ এপ্রিল ২০২৪  

রাজধানীর উপকন্ঠ সাভার উপজেলায় প্রায় ২৭ লাখের অধিক লোকের বসবাস। মানুষের সাথে সাথে বেড়ে চলছে এ এলাকায় বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান। সেই সাথে অপরাধী চক্র তৎপর হয়ে উঠেছে আগের চেয়ে বহুগুণ। আর দিন দিন সাভার মাদকে সয়লাব হচ্ছে।

আইনশৃংখলা বাহিনী এ ব্যাপারে মাঝে মাঝে তৎপর থাকলেও কতিপয় পুলিশের সাথে মাদক ব্যবসায়ীদের সখ্যের কারণে মূল গডফাদাররা রয়ে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। ফলে মাদকের করাল গ্রাসে আজ ধ্বংসের পথে যুবসমাজ। স্কুল কলেজগামী ছাত্ররা আসক্ত হয়ে পড়ছে মাদকের এ মরণ নেশায়। বিপথগামী হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। মাদকের নেশায় আসক্ত হয়ে চুরি, ছিনতাই, খুনসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে অভিভাবকরা। মাদকের এ করাল গ্রাস থেকে যুবসমাজকে রক্ষায় সাভারবাসী প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিকট জোর দাবি জানিয়েছেন। অনুসন্ধানে জানা গেছে, সাভারের শতাধিক মাদকের স্পট রয়েছে। এসব স্পটে মাদকদ্রব্যের মধ্যে হেরোইন, ফেন্সিডিল, গাঁজা বেশি বিক্রি হচ্ছে। তবে যৌন উত্তেজক ‘ইয়াবা’ ট্যাবলেট সাভারে পাইকারী বিক্রি হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। আবার ইয়াবা ট্যাবলেটেরও রয়েছে বিভিন্ন কোড নম্বর। কোড নম্বর ভেদে ট্যাবলেটের দাম নির্ধারণ হয়। আবার কিছু কিছু এলাকায় মাদক ব্যবসায়ীরা অভিনব কায়দায় শার্টের কলার ও হাতলের ভাঁজে, মানিব্যাগে, জুতার ভেতরে, দিয়াশলাই ও সিগারেটেরে প্যাকেটের ভিতরে রেখে খুচরা এলাকায় ঘুরে ঘুরে ইয়াবা ট্যাবলেট বিক্রি করছে।

সাভারে শুধু মাদকেই শেষ নয়। এ মাদকের ছত্রছায়ায় গড়ে ওঠেছে অপরাধীর অভয়ারণ্য হিসেবে। ছিনতাই, চুরি, দেহব্যবসা, ভূমি দখলসহ নানারকম অপরাধের ঘটনা এ এলাকায় এখন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। স্থানীয়রা এদের যন্ত্রনায় অতিষ্ঠ হলেও প্রতিবাদ করতে সাহস পায় না। কেউ কেউ প্রতিবাদ করলে হামলা-মামলার শিকার হতে হচ্ছে। প্রশাসনের অনেকের সাথে গোপনে মাদক ব্যবসায়ীদের সখ্যের কারণে ভুক্তভোগীদের আরো ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। এদের সিন্ডিকেট এতই শক্তিশালী যে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এসব স্পটে হানা দেয়ার আগেই তারা পুলিশের উপস্থিতি টেরে পেয়ে যাচ্ছে। জানা যায়, এ সিন্ডিকেটগুলোর নেতৃত্ব দিয়ে আসছে এলাকার কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি। সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা যায়, মাদকের স্পটগুলো নিয়ন্ত্রণ করছে মাদক ব্যবসায়ী সোসাইটি এলাকার হারুন, স্বপন, রাজু, নয়াবাড়ির নাসিমা, শাহজাহান, জয়পারার রনি, ভান্ডারি। এর মাঝেই এসব এলাকায় পুলিশ ও র‌্যাব একাধিকবার অভিযান চালিয়ে কয়েক মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করলেও কয়েকদিনের মধ্যে আবার জামিনে ছাড়া পেয়ে ফের পূর্বের ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে।

সাভারের সাদাপুর পুরানবাড়ী এলাকার মৃত. সামসুদ্দিন খানের ছেলে চুন্নু খানের রয়েছে মাদকের একটি বিশাল সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটের সদস্যরা এলাকায় ঘুরে ঘুরে মাদক বিক্রি করে আসছে। তবে সে সবসময় প্রশাসনের ধরাছোঁয়ার বাহিরেই থেকে যাচ্ছে। তার সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্যরা হচ্ছে সাদাপুর এলাকার দেলুয়ার হোসেন দিলা, মোখলেছ খান, হেলাল, উজ্জল, সাহাদাত, ইব্রাহিমসহ আরও অনেকেই। তবে এদের মধ্যে উজ্জল ইয়াবাসহ পুলিশের হাতে আটক হওয়ার পর সম্প্রতি জামিনে বেরিয়ে পুনরায় মাদক ব্যবসার সাথে জড়িয়ে পরে। তবে দেলুয়ার হোসেন দিলা, মোখলেছ খান ও হেলালকে ঈদের আগে হেরোইনসহ আটক করার কথা জানিয়েছেন এএসআই আশরাফুল। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক সাদাপুর এলাকার একাধিক বাসিন্দা জানান, চুন্নু খানের মাদক সিন্ডিকেটে কারণে এলাকার যুবকরা বিপথে যাচ্ছে। নেশার টাকা জোগাড় করতে না পেরে চুরি ছিনতাই করছে। চুন্নু খান ও তার স্বজনদের ভয়ে এলাকায় কেউ মুখ খুলতেও সাহস পায় না

এলাকাবাসী, চুন্নু খানের মাদক সিন্ডিকেটের কবল থেকে যুবসমাজকে রক্ষায় প্রশাসনের ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবি জানিয়েছেন। সাভার পৌর এললাকার মজিদপুর ও ছোটবলিমেহের মহল্লায় র‌্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত মাদক সম্রাট মুন্নার স্ত্রী শিল্পী আক্তার, খলিল, ফিরোজ, ইদ্রিস। মিটন গ্রামের নুর আলম, দারোগ আলী, ব্যাংকলোনীর ফরহাদ, কাতলাপুর মহল্লায় স্বপন, কালু, হাদী, মোহাম্মদ আলী, আনন্দপুরের ফজলু, নামাগেন্ডায় রিপন, চাঁপাইন এলাকায় রকি, রাসেল। সিআরপি রোডে রফিক, জুয়েল বনপুকুর এলাকায় জুম্মত, পাগলা, নাহিদ, নিমেরটেক এলাকায় মোতালেব, ইমান আলী, বিপ্লব, মোখলেছ, সাভার পৌর ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি মাসুম দেওয়ানের অনুসারী মাহফুজুর রহমান নাহিদ নামে এক ছাত্রলীগ কর্মীর বিরুদ্ধে রয়েছে মাদক ব্যবসার অভিযোগ।

জোরপুল এলাকায় হাসান, ইয়াদ আলী, ইজু, হাফেজ। চাকুলিয়ার তানজিল, বনগ্রামের রশিদ। আমিনবাজার এলাকায় সোহেল, কালাচাঁন। সলমাসির ইয়ার আলী, ঝাউচরের বারেক। ভাটপাড়া এলাকার সিদ্দিক, আব্বাস, মিজান। বেদেপল্লীর মেজর, আলমগীর, ফারুক, বিবি, খোকন, শাহীন, এরশাদ, আফসার, সোহেল, সোহান, সৌকত। জামসিং এলাকার সাইফুল, বিল্লাল, গোপাল, রিপন, নান্নু। রেডিও কলোনী এলাকায় শান্তিবাবু। বিরুলিয়া এলাকার রসুল, আয়নাল, হাসনা, কালাম, সলিম, বাতেন, আনোয়ার। ছোট কালিয়াকৈরের হামিদ। ভবানীপুরের আল আমিন, তারেক। হেমায়েতপুরের দুদু, মনির, শামীম, মোতালেব। যাদুরচর এলাকার আনসু। রাজফুলবাড়িয়ার সোহেল, পারভেজ। পানপাড়ার যাদব, আক্তার, শামীম।

এসব এলাকায় র‌্যাব একাধিকবার অভিযান চালিয়ে মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার করলেও কয়েকদিনের মধ্যে আবার জামিনে ছাড়া পেয়ে ফের পূর্বের ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছে তারা। অনেকেই অভিযোগ করেন, এ সকল স্পট থেকে থানা পুলিশ মাসোয়ারা পেয়ে থাকেন। ফলে পুলিশ নিরব ভূমিকা পালন করছে। তবে সাভারবাসী দ্রুত মাদকের এ বিস্তার রোধে প্রশাসনের ঊর্দ্ধতন মহলের নিকট জোর দাবি জানান। তারা বলেন, মাদকের এ করাল গ্রাসে আমাদের যুব সমাজ দিন দিন ধ্বংসের পথে। সাভারবাসী এ অবস্থা থেকে দ্রুত পরিত্রাণ চায়। সাভার মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মো. শাহজামাল বলেন, মাদক ব্যবসায়ী যেই হোক কাউকেই ছাড় দিচ্ছি না। আমাদের নিয়মিত মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।