• বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৯ ১৪৩১

  • || ২২ শাওয়াল ১৪৪৫

বড় যুদ্ধ বেধে যেতে পারে

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ২৭ মে ২০১৯  

সেটা ছিল একটি সাজানো হামলার ঘটনা, যা লাখ লাখ বেসামরিক নাগরিককে এবং প্রায় ৬০ হাজার মার্কিন সেনাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছিল। ১৯৬৪ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট লিন্ডন জনসন কয়েকটি মার্কিন জাহাজের ওপর হামলার এই সাজানো ঘটনা ঘটিয়েছিলেন। এভাবে কৃত্রিম উপায়ে উত্তেজনা সৃষ্টি করে ওয়াশিংটন। এ সময় মার্কিন রণতরিগুলো উত্তর ভিয়েতনামের উপকূলে দেশটির সঙ্গে সামরিক সংঘাতে লিপ্ত হয়েছিল। যার পরিণতিতে এত মানুষের প্রাণ গিয়েছিল। এর চার বছর পর সিনেটর আলবার্ট গোর বৈদেশিক সম্পর্কবিষয়ক কমিটির একটি রুদ্ধদ্বার বৈঠকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছিলেন, ‘যদি এই দেশকে বিভ্রান্ত করা হয়...তাহলে এর ফল হবে ভয়ানক।’ তাঁর সন্দেহ সঠিক ছিল। টোনকিন উপসাগরে কোনো হামলার ঘটনাই ঘটেনি।

সম্প্রতি এমন কথা শোনা গেছে যে মার্কিন সরকার ইরানের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য সামরিক হামলা চালানোর জন্য মধ্যপ্রাচ্যে ১ লাখ ২০ হাজার মার্কিন সেনা পাঠানোর বিষয়ে আলোচনা করছে। মধ্যপ্রাচ্যে সেনা পাঠানোর পরামর্শ দিচ্ছেন ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন, যিনি ২০০৩ সালে ইরাক আক্রমণের জন্য প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশকে প্ররোচিত করেছিলেন। ট্রাম্প প্রশাসন বলছে, ইরান-সমর্থিত প্রক্সি গ্রুপগুলো ইরাক ও সিরিয়ায় মার্কিন বাহিনীর ওপর হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে ট্রাম্প প্রশাসনের এই দাবিকে নাকচ করে দিয়েছেন ব্রিটিশ মেজর জেনারেল ক্রিস্টোফার গিকা। তিনি উভয় দেশে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের ডেপুটি কমান্ডার। ওমান উপসাগরে সৌদি তেল ট্যাঙ্কারগুলোর ক্ষয়ক্ষতির জন্য কোনো সাক্ষ্যপ্রমাণ ছাড়াই ইরানকে দায়ী করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তাহলে কি ১৯৬৪ সালের মতো আরেকটি ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে?

ট্রাম্প দম্ভের সঙ্গে বলেছেন, ‘আসলে তিনিই বোল্টনকে উসকে দিয়েছেন।’ তবে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেছেন, ‘এখানে যুদ্ধ হবে না। চাথাম হাউসের একজন গবেষক সানাম ভাকিল আমাকে বলেছেন: “উভয় পক্ষই এখন অস্থির, উভয় পক্ষই পরস্পরকে হুমকি দিচ্ছে।” তবে আমিও মনে করি না যে যুক্তরাষ্ট্র ইরানে সরাসরি কোনো সামরিক অভিযান চালাবে। বোল্টন আমাকে এ ব্যাপারে আশ্বস্ত করেছেন এবং মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও নিজে বলেছেন যে যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধ চায় না।’ কিন্তু ট্রাম্পের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডে তা মনে হচ্ছে না। তিনি ড্রোন যুদ্ধবিমানের ব্যবহার বাড়িয়েছেন এবং সিরিয়ায় ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র বর্ষণ করেছেন। তিনি ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন তুলে নিয়েছেন এবং দেশটির ওপর উপর্যুপরি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন। সিনেটের একজন সিনিয়র সহযোগী আমাকে বলেছেন, বোল্টন হয়তো ট্রাম্পকে যুদ্ধ শুরু করার পরামর্শই দেবেন। কারণ, ডানপন্থীরা ইতিমধ্যে প্রচার করা শুরু করেছে যে ইরান ও আল-কায়েদার মধ্যে ব্যাপক যোগাযোগ রয়েছে।

ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বন্দ্বের পরিণতি নিয়ে শঙ্কার কারণ আছে। লন্ডনের সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ অ্যান্ড ডিপ্লোমেসির বিশেষজ্ঞ ড্যান প্লেশ যুক্তরাষ্ট্রের বিমান ও নৌবাহিনীর ইরানের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য হামলার বিষয়ে সতর্ক করেছেন। প্লেশ বলেছেন, ‘মার্কিন বাহিনীর শক্তি এখন ২০০৩ সালের চেয়ে অনেক বেশি। তারা এখন খুব দ্রুততার সঙ্গে সামরিক, রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক যেকোনো অবকাঠামো ধ্বংস করতে সক্ষম। কাজেই যুদ্ধের বিষয়টি উড়িয়ে দেওয়া যায় না।’ যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ওপর হামলা চালাচ্ছে—এটা দেখার ঝুঁকি আমরা নিতে পারি না। এ ধরনের কিছু করার আগে মার্কিন জনগণের উচিত ইরানের সঙ্গে কোনো ধরনের যুদ্ধে জড়িয়ে না পড়তে সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করা।

পর্যবেক্ষকেরা অবশ্য বলছেন, যে দ্রুত গতিতে ঘটনা গড়াচ্ছে, তাতে সামান্য কোনো উসকানি থেকে বড় ধরনের যুদ্ধ বেধে যেতে পারে। এই উসকানি শুধু ইরানের কাছ থেকে নয়, এ অঞ্চলের অন্যান্য দেশ থেকেও আসতে পারে।