• শনিবার ১৮ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৪ ১৪৩১

  • || ০৯ জ্বিলকদ ১৪৪৫

প্রাণ ফিরে পাচ্ছে তুরাগ

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ১০ এপ্রিল ২০১৯  

মিরপুর বেড়িবাঁধে উঠে আশুলিয়ার দিকে যেতে রাস্তায় বসে থাকেন ভাসমান মাছ ব্যবসায়ীরা। অধিকাংশ ক্রেতার কাছেই তারা দাবি করেন, তাদের কাছে থাকা মাছগুলো তুরাগ থেকেই ধরা। কিন্তু সত্যিই মাছগুলো মারাত্মক দূষণের কবলে থাকা তুরাগের কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায় না।

তবে আশার কথা হচ্ছে, নানা উদ্যোগের কারণে তুরাগ ধীরে ধীরে প্রাণ ফিরে পেতে শুরু করেছে। বিআইডব্লিউটিএর উচ্ছেদ অভিযানের ফলে দখলে বন্ধ হওয়া নদটির চ্যানেলগুলো এক এক করে খুলছে। প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা বলছেন, খালের আকার ধারণ করা তুরাগ নদ আগের জৌলুস দেখাতে পারবে মে মাসের মধ্যেই। আর তা সম্ভব হচ্ছে চলমান উচ্ছেদ অভিযানের ফলে।

গতকাল মঙ্গলবারও তুরাগ নদ উদ্ধারে মিরপুর আশুলিয়া রোডের বিরুলিয়া ব্রিজ থেকে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়। বৃষ্টির মধ্যেও চলে নদের তীরভূমির অবৈধ দখল অপসারণ। স্থানীয়রা জানান, বিরুলিয়া ব্রিজ থেকে উত্তর পাশে চোখ মেললেই দেখা যেত ভরাট করা জমি। সেখানে টেক্স ইউরোপ বিডি নামের একটি প্রতিষ্ঠান ১৭৮ শতাংশ জমির ওপর তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানের অফিসও গড়ে উঠেছে নদ ভরাট করে।

গতকাল বিআইডব্লিউটিএর ভ্রাম্যমাণ আদালত সেই অফিস বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়। পাশাপাশি এক লাখ টাকাও জরিমানা করা হয় প্রতিষ্ঠানটিকে। তা ছাড়া অবৈধভাবে ভরাট করা জমি উদ্ধারের খরচও তাদের কাছ থেকে আদায় করবে বিআইডব্লিউটিএ। এর পর অভিযান চলে এসকে বিল্ডার্স, এমএম ট্রেডিং কোম্পানি, তুরাগ রিক্রিয়েশন ওয়ার্ল্ডসহ নদ দখল করে গড়ে ওঠা প্রতিষ্ঠানে। এ সময় বিনোদনকেন্দ্র তুরাগ রিক্রিয়েশন ওয়ার্ল্ডে থাকা একটি অবৈধ তিন তলা ভবন, এক তলা ভবন, বিনোদনের জন্য তৈরি কৃত্রিম ডাইনোসর গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এদিন অভিযান চলাকালে সাধারণ মানুষের মধ্যেও ছিল স্বতঃস্ফূর্ততা। নদের দুপাশেই অবৈধ স্থাপনার উচ্ছেদ দেখে এলাকাবাসীও খুশি।

বড় কাঁকর এলাকার বাসিন্দা মোসলেম বলেন, তার এখানে জমি ছিল। দখলদারদের ভয়ে আগেই জমি বিক্রি করে দিয়েছেন। ১০ বছর আগে জমিটি বিক্রি না করলে এখন বেশি দর পাওয়া যেত। ওই এলাকা ছাড়াও এদিন মিরপুর বেড়িবাঁধের সিন্নিরটেক থেকে গড়ান চটবাড়ী পর্যন্ত তুরাগের উভয় তীরে উচ্ছেদ কার্যক্রম চালানো হয়। সিন্নিরটেকে তিনটি বালির গদি অপসারণ, গড়ান চটবাড়ী এলাকায় নেভারল্যান্ডস ও সিঙ্গাপুর পার্কের দখল করা নদীতীরভূমিও উদ্ধার করা হয়। সেখানে অবৈধভাবে পার্ক নির্মাণের দায়ে নেভারল্যান্ডস পার্ককে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয় সম্প্রতি।

বিআইডব্লিউটিএ সূত্র জানায়, তুরাগ নদের অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ অভিযানের তৃতীয় পর্বের গতকাল ছিল প্রথম দিন। এদিন সাভার বিরুলিয়া এলাকায় বড় কাঁকর ও দেউন মৌজায় উচ্ছেদ চলে। অবমুক্ত করা হয় ২ একর জমি। উচ্ছেদ করা হয় দুটি একতলা পাকা বাড়ি, ১১টি আধাপাকা বাড়ি, ৪টি বাউন্ডারি ওয়াল, ১০টি টিনের ঘর ও ২টি পার্ক।

এ বিষয়ে ঢাকা নদীবন্দরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম পরিচালক আরিফ উদ্দিন জানান, গতকাল ২৯টি স্থাপনা উচ্ছেদ, এক লাখ টাকা জরিমানা ও ১ কোটি ১৮ লাখ ৮০ হাজার টাকার নিলাম হয়েছে। বিআইডব্লিউটিএ কর্মকর্তারা জানান, জলে ও স্থলে একযোগে অভিযান চলছে, যাতে করে আর কোনোভাবে নদ ভরাট বা দখল করতে না পারে। কিছুদিন আগে আমিন-মোমিন হাউজিংয়ের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে বিআইডব্লিউটিএ। বসিলা এলাকায় তুরাগ দখল ও ভরাট করে গড়ে তোলা হয়েছিল এ হাউজিং কোম্পানি।

আবারও দখলের আশঙ্কায় আমিন-মোমিনের ভরাট করা সব মাটি তুলে ফেলে তুরাগকে নতুন প্রাণ দিতে শুরু করেছে বিআইডব্লিউটিএ। দখল উচ্ছেদের পর খনন শুরুর মাস না পেরোতেই পানি ওঠা শুরু হয়েছে তুরাগের ওই চ্যানেলে। আশা করা হচ্ছে, আসন্ন বর্ষায় এ চ্যানেল দিয়ে নৌযান চলাচল করতে পারবে। এ চ্যানেলটিকে নৌ পর্যটনের একটি বিশেষ ক্ষেত্র হিসেবে গড়ে তুলতে মন্ত্রণালয় নির্দেশ দিয়েছে।