• শনিবার ১৮ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৪ ১৪৩১

  • || ০৯ জ্বিলকদ ১৪৪৫

ইটভাটায় জ্বলছে টায়ার, হুমকিতে পরিবেশ

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ৮ জুলাই ২০১৯  

রাজধানীসহ সারা দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেইটভাটা এসব ভাটায় ইট পোড়ানোর জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে কাঠ কয়লা, জ্বালানি কাঠ এবং পরিবেশের জন্য হুমকি হিসেবে চিহ্নিত গাড়ির টায়ার

রাজধানীর বিভিন্ন জায়গাতে বিক্রি হচ্ছে ব্যবহারের অনুপযোগী এসব টায়ার তা নাম মাত্র দামে কিনে  ভাটাগুলোতে ব্যবহার করছেন মালিকরা রাজধানীর সাভার এলাকার বেশকিছু ইটভাটায় খোঁজ নিয়ে এই তথ্য পাওয়া গেছে

রাজধানীর মোহাম্মদপুর, বসিলা, পুরান ঢাকার ধোলাইখাল, মিরপুর রোড, এয়ারপোর্ট সড়কের কিছু অংশ এবং কেরানীগঞ্জের জিঞ্জিরা এলাকায় টায়ার বেচাকেনার জন্য রয়েছে খুচরা পাইকারি দোকান সেখান থেকেই মণ এবং টন হিসেবে পাইকারি দরে টায়ার কিনে তা ভাটায় নিয়ে যান মালিকেরা

রাজধানীর বেড়িবাঁধের টায়ার ব্যবসায়ী নজরুল বলেন, ‘আমরা খুচরা টায়ার বিক্রি করে থাকি আমাদের এখান থেকে পাইকার ইটভাটা মালিকরা টায়ার কিনে থাকে আগে ভাটা মালিকরা বেশি আসত, তবে এখন পাইকারই বেশি আসে ভাটা মালিকরা টায়ার কেনে মূলত গাবতলী ধোলাইখালের পাইকারি বাজার থেকে

সরকারের পক্ষ থেকে টায়ার পোড়ানোতে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও কখনো পুলিশের নজর এড়িয়ে আবার কখনো পুলিশকে খুশি করে পরিবহন করা হচ্ছে পুরোনো টায়ার

বিশ্বব্যাংকের ২০১১ সালের এক প্রতিবেদন এবং ইউএনডিপির ২০১২ সালের আরেক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ইটভাটার সংখ্যা প্রায় সাত হাজার এতে কয়লা জ্বালানি কাঠ ব্যবহৃত হয় আর এই জ্বালানি থেকে বছরের দশমিক মেট্রিক টন গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণ হয়

তবে দেশের ভাটাগুলোতে কী পরিমাণ টায়ার পোড়ানো হয় তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি গাবতলী বেড়িবাঁধ এলাকার এক ব্যবসায়ী জানান, কিছুদিন আগেও ইটভাটাগুলোর জন্য গাবতলীসহ রাজধানীর বিভিন্ন জায়গা থেকে থেকে সরাসরি টায়ার কিনত কিন্তু পরিবেশের হুমকি এবং সরকারের সতর্ক অবস্থানের কারণে এখন পাইকারি এবং খুচরা বিক্রেতাদের সরাসরি টায়ার নেয়া বন্ধ করেছে

শীতের সময় বড় চালান কিনে তা সংরক্ষণ করে ভাটায় পোড়াচ্ছেন ভাটা মালিকরা আবার কখনো ঠিক প্রয়োজন মাফিক অল্প পরিমাণ কিনে তা পোড়ানো হচ্ছে ভাটা মালিকদের বাড়তি সতর্কতার জন্য কিছু লোকচক্ষুর আড়ালেই থেকে যাচ্ছে পরিবেশের এই ক্ষতি

বিষয়ে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের সভাপতি মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘আগে কাঠ কয়লা, জ্বালানি কাঠ বা টায়ার পুড়িয়ে ইট তৈরি করা হতো কিন্তু আইন অনুযায়ী এটি এখন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ

বর্তমানে প্রতিটি ইটভাটায় ১২৬ চুল্লি করার আইন করা হয়েছে ম্যানুয়াল ইটভাটা বন্ধ করে আধুনিক ইট ভাটা তৈরি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এতসব আইন এর পরেও বিভিন্ন জায়গায় কাঠ টায়ার পুড়িয়ে ইটভাটা চালানো হচ্ছে এখানে প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা রয়েছে ইটভাটা সংক্রান্ত যে মামলাগুলো এখনো চলমান রয়েছে সেগুলো চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি করলে সমস্যাগুলো থাকবে না মানুষের স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে সরকারের উচিত দ্রুত মামলাগুলোর নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করা

 

এই আইনজীবী বলেন, ‘টায়ার, কাঠ কয়লা, জ্বালানি কাঠ পোড়ানো আইনে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এসব পোড়ানোর ফলে বায়ু দূষিত হচ্ছে এতে করে স্বাস্থ্যের ঝুঁকি বাড়ছে আইন যেহেতু আছে সেহেতু আইনের প্রয়োগ করা দরকার

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন- বাপার সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন বলেন, ‘দেশের পরিবেশ বাঁচাতে মানবস্থ্যের কথা বিবেচনা করে ইট প্রস্তুত ভাটা স্থাপন সংশোধন করা হয়েছিল তবে আইনের যথাযোগ্য প্রয়োগ না হওয়ায় অবাধে চলছে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর জ্বালানি পোড়ানো সরকারের সদয় দৃষ্টিই পারে দেশ মানুষকে ইটভাটার বিষাক্ত ছোবল থেকে বাঁচাতে