• শনিবার ১৮ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৪ ১৪৩১

  • || ০৯ জ্বিলকদ ১৪৪৫

নিপা ভাইরাসের মৌসুম শুরু

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ৫ ডিসেম্বর ২০১৯  

শুরু হয়েছে নিপা ভাইরাসের মৌসুম। নিপা ভাইরাস সম্পর্কে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এই রোগের নির্দিষ্ট কোন চিকিৎসা নেই। উপসর্গ দেখে চিকিৎসা করাতে হয়। দেশে এ রোগে আক্রান্তদের মৃত্যুর হার শতকরা ৮৯ ভাগ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে সাধারণত ডিসেম্বর থেকে এপ্রিলের মধ্যে নিপা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। নিপা একটি ভাইরাসজনিত মারাত্মক রোগ, যা বাদুড় থেকে মানুষে সংক্রমিত হয়। আবার আক্রান্ত মানুষ থেকে মানুষেও সংক্রমিত হতে পারে।

বাদুড় খাওয়া কাঁচা খেজুরের রস খেয়ে ওই সময় নিপা ভাইরাস আক্রান্ত হয় অনেক মানুষ। এ বছর ইতোমধ্যে খেজুরের রস সংগ্রহের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। 

চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা জানান, প্রতিবছরই কিছু লোক নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত হলেও চিকিৎসকরা খেজুরের রস খাওয়ার ক্ষেত্রে সাবধান হওয়ার পরামর্শ দেয়া ছাড়া এ রোগ প্রতিরোধে কার্যকর কিছু করতে পারেননি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ভাইরাস ছড়ায় মূলত বাদুড়ের মাধ্যমে। শীতের সময় খেজুর গাছে বাঁধা রসের হাড়িতে বাদুড় মুখ দেয়। বাংলাদেশে এভাবেই রোগটি মানুষে ছড়ায় বলে চিকিৎসকদের ধারণা।

 এ রোগে আক্রান্তদের মস্তিষ্কে ভয়াবহ প্রদাহ দেখা দেয়। নিপা একটি ভাইরাসজনিত মারাত্মক রোগ, যা বাদুড় থেকে মানুষে সংক্রমিত হয়। এর প্রধান লক্ষ্মণগুলো হচ্ছে- জ্বরসহ মাথাব্যথা, খিঁচুনি, প্রলাপ বকা, অজ্ঞান হওয়াসহ কোনো কোনো ক্ষেত্রে   শ্বাসকষ্ট। চিকিৎসকরা জানান, বাংলাদেশে সাধারণত ডিসেম্বর থেকে এপ্রিলের মধ্যে নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। এই সময়টাতেই খেজুরের রস সংগ্রহ করা হয়। আর বাদুড় গাছে বাঁধা হাড়ি থেকে রস খাওয়ার চেষ্টা করে বলে ওই রসের সঙ্গে তাদের লালা মিশে যায়। আর সেই বাদুড় নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে থাকলে এবং সেই রস খেলে মানুষের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়তে পারে এ ভাইরাস। 

২০০১ সাল থেকে এ পর্যন্ত মেহেরপুর, নওগাঁ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, টাঙ্গাইল, ঠাকুরগাঁও, কুষ্টিয়া, মানিকগঞ্জ ও রংপুরে মানব দেহে নিপা ভাইরাস সংক্রমণের খবর পাওয়া গেছে। ২০০১ সালে দেশের উত্তর জনপদের সীমান্ত এলাকায় প্রথমবারের মতো নিপা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা যাওয়ার পর এ পর্যন্ত এ ভাইরাসে আক্রান্ত ১৫২ জনের মধ্যে ১১৩ জনেরই মৃত্যু হয়েছে। 

এর রোগে আক্রান্তদের মৃত্যুর হার শতকরা ৮৯ ভাগ। নিপা ভাইরাস এতোটাই  সংক্রামক যে, ২০০৪ সালে ফরিদপুরে এক পরিবারের একজন আক্রান্ত হওয়ার পর ওই পরিবারের চারজনের মৃত্যু হয়। এক রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর তার রিক্সাচালকও নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত হন। ২০১২ সালে এ রোগে ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছিলো। আর ২০১৫ সালে দেশের পঞ্চগড়, নীলফামারী, ফরিদপুর, মাগুরা, নওগাঁ ও রাজবাড়ীতে আক্রান্ত ৯ জনের মধ্যে ৬ জনেরই মৃত্যু ঘটে। 

আইইডিসিআর-এর সাবেক পরিচালক ডাঃ মাহমুদুর রহমান জানান, এ রোগটি অনেকটা ছোঁয়াচে হতে পারে। রোগীদের সংস্পর্শে যাওয়া ঠিক হবে না। কাঁচা খেজুরের রস এবং বাদুড় খাওয়া ফলমূলের অংশ বিশেষ না খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ডাঃ মাহমুদুর রহমান।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, বাদুরের পান করা খেঁজুরের কাঁচা রসে বা আংশিক আহার করার ফলে বাদুরের লালা বা মলমূত্র মিশে থাকে। বাদুরের পান করা খেঁজুরের রস পান করলে বা আংশিক আহার করা বা কামড়ানো ফল খেলে নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। 

বাদুরের আংশিক আহার করা ফল অথবা ঘাস গরু, ছাগল, শূকর খেলে তাদের শরীরে নিপা ভাইরাস প্রবেশ করতে পারে। বাদুরের লালা মলমূত্র মিশ্রিত কাঁচা খেঁজুরের রস পানে বাংলাদেশের কোনো  কোনো জেলায় নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এদের মধ্যে কোন কোন অঞ্চলে নিপা সংক্রমিত রোগীর সংস্পর্শে আসা ব্যক্তি নিপা  আক্রান্ত হয়েছে। সংক্রমিত রোগীর হাঁচি-কাশি-কফ-থুথু অর্থাৎ শ্বাসতন্ত্র এবং শরীরের সংক্রমিত নিঃসরণের মাধ্যমে নিপা একজন থেকে অন্যজনে সংক্রমিত হতে পারে।

যে কোন ফল খেতে হলে ভালভাবে ধুয়ে শুকনো অবস্থায় খেতে হবে। কাঁচা শাক-সবজি দিয়ে সালাদ খেতে হলে সেগুলোও ভাল করে ধুয়ে ও পরিষ্কার করে খেতে হবে। খেঁজুরের কাঁচা রস কোনো অবস্থাতেই পান যাবে না। সব অবস্থায় বাদুরের  লালা, মলমূত্র এগিয়ে চলতে হবে। খেঁজুরের গুড়, রান্না করা খেঁজুরের রসের পায়েস, রান্না করা শাক-সবজি নিরাপদ।