• রোববার ০৫ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২২ ১৪৩১

  • || ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জমজমাট জুয়ার আসর বসে গাজীপুরে

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ১৬ জানুয়ারি ২০১৯  

ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে প্রতিদিন জুয়ার আসর বসছে গাজীপুরে দলের জয়-পরাজয়ের ওপর টাকা বাজি ধরা হচ্ছে বাজির টাকার অঙ্ক সর্বনিম্ন এক হাজার টাকা থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত অনেক সময় এটি লাখ টাকা পর্যন্ত গিয়ে দাঁড়ায়

কেউ বাজি লাগে এই বলে দুই রান হবে, কেউ বলে আউট হবে বা চার রান হবে ইত্যাদি যার কথা মিলে যায় সে অন্য সবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে নেয় সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জুয়ার প্রভাব পারিবারিক এবং সামাজিক জীবনে পড়ছে পাশাপাশি সমাজে অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে

গাজীপুরে বিভিন্ন মুদি দোকানে স্থানীয় কিছু লোক ও বাসের ড্রাইভার, হেলপার, গাড়ির মেকারসহ এলাকার নেতাকর্মীরা বাজি খেলেন এসব দোকানে বসে থাকা লোকদের দূর থেকে দেখলে মনে হবে, সবাই নিপাট ক্রেতা কিন্তু তারা মূলত দোকানে বসে বসে বাজি খেলেন বাজির টাকার অঙ্ক খুব বড় নয় কিন্তু নেশাটা ভয়ঙ্কর

টঙ্গীর স্থানীয় কয়েকজন ক্রিকেট জুয়াড়ির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জুয়াড়িরা খেলা শুরুর আগে কয় উইকেটে কোন দল জিতবে, কোন খেলোয়াড়ের কত ওভার মেডেন হবে, কত ওভারে কত রান হবে, কোন খেলোয়াড় হাফ সেঞ্চুরি বা সেঞ্চুরি করবে এসব বিষয়ে বাজি ধরা হয় অনেক সময় প্রতি বলে বলেও বাজি ধরা হয় আর বাজির টাকা নগদে পরিশোধ করতে হয় সঙ্গে সঙ্গে না পারলে মোবাইল ফোন, স্বর্ণের বিভিন্ন অলঙ্কার, গাড়ি বা টাকা না থাকলে সুদে ঋণ দেয়ারও ব্যবস্থা আছে

ক্রিকেট জুয়ার আসর মহামারির মতো ছড়িয়ে পড়ছে পুরো গাজীপুরে টঙ্গীর মধুমিতা শেরে বাংলা রোড এলাকার প্রতিটি দোকানেই হয় ক্রিকেট জুয়ার আসর অনেক সময় এ জুয়া খেলাকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হয় দু’গ্রুপের সংর্ঘষ এতে দোকানপাট ভাংচুর ও আহতের ঘটনাও ঘটছে

খেলা শুরু হলেই নাছিরের দোকান, আনোয়ারের সেলুন দোকানে বসে কে কত টাকা করে বাজি ধরবে এখানে টাকা লেনদেন হয় বিকাশে যেদিন খেলা হয়, সেদিন তাদের দোকানের কার্যক্রম তেমন বেশি থাকে না কথা হয় সেলুন দোকান মালিক মো. আনোয়ারের সঙ্গে; তিনি বলেন, এটি জুয়া খেলা না ক্রিকেট খেলা হলে আমরাসহ প্রতিবেশী ব্যবসায়ীরা একটু মজা করে থাকি বাজির টাকার পরিমাণ সম্পর্কে জানতে চাইলে সেলুন দোকান মালিক জানান, আমরা অনেক সময় ৫শ’ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত বাজি ধরি

সরেজমিন টঙ্গীর গাজীবাড়ি এলাকায় গিয়ে চোখে পড়ল প্রকাশ্যে বিপিএল নিয়ে জুয়া খেলার দৃশ্য ফোনে রেট জেনে বাজি ধরছেন মো. আলামিন নামে একজন এ বিষয়ে তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিরক্ত করবেন না প্লিজ, মেজাজ খারাপ আছে, মাত্রই টাকা হারালাম বিপিএলে বাজির নেশায় লাখ টাকা হারিয়ে এ জুয়া খেলার ফাঁদ থেকে বের হয়ে এসেছেন আরিফ হোসেন (ছদ্মনাম) নামের আরেকজন

 ক্রিকেটের এ সর্বনাশা জুয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, টিভিতে ক্রিকেট খেলা চলার সময় টঙ্গীর পাড়া-মহল্লার আড্ডায়, সেলুন, ফ্লেক্সিলোড কিংবা চায়ের দোকানে অনেক লোক একসঙ্গে খেলা দেখে আসলে এর বেশিরভাগই জুয়ার আসর এ খেলায় ছাত্র, বেকার, ব্যবসায়ী সবাই জড়িত ১০০ টাকা থেকে শুরু হয়ে এক পর্যায়ে চলে হাজার হাজার টাকার জুয়া

ক্রিকেট জুয়ার ছড়াছড়ি সমাজের অভিজাত-শিক্ষিত শ্রেণী ছাড়িয়ে তরকারি বিক্রেতা, নাপিত, হোটেল কর্মচারী, ফল বিক্রেতা, বিভিন্ন পরিবহনের শ্রমিক (হেলপার ও কন্ডাক্টর) নির্মাণ শ্রমিকসহ বিভিন্ন পেশার লোকেরা জড়িয়ে পড়ছে বাদ পড়ছে না স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীরাও

ক্রিকেট জুয়ায় টাকা-পয়সা খুইয়ে আত্মহত্যার মর্মান্তিক খবরও শুনতে হয় কখনও কখনও অনেক সময় কিছু ক্রিকেট জুয়াড়ি জুয়ার টাকা যোগাতে গিয়ে চুরি ও ছিনতাইয়ের মতো বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডেও জড়িয়ে পড়ছে

র‌্যাব-১’র গাজীপুর পোড়াবাড়ী ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার লে. কমান্ডার আবদুল্লাহ আল-মামুনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এ বিষয়ে সঠিক তথ্য-প্রমাণ পেলে সঙ্গে সঙ্গে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে

এদিকে সর্বনাশা এ খেলাটি বন্ধ করতে ইতিমধ্যে নজরদারি শুরু করেছে পুলিশ গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার ড. মো. রুহুল আমিন সরকার বলেন, ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে একশ্রেণীর অসাধু লোক জুয়ার মতো খেলায় বাজি ধরছে তবে কোনো কোনো এলাকায় এ ধরনের খেলা হচ্ছে বা খেলছে তা সঠিক তথ্য পাচ্ছি না বিপিএল ম্যাচকে কেন্দ্র করে জুয়াড়িরা জুয়ায় যাতে না বসে, সেজন্য নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশনা রয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে নিয়মিত টহলও চলছে গাজীপুরে