• বুধবার ০৮ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২৪ ১৪৩১

  • || ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫

হামাসের হামলা মোকাবেলায় কেন দেরি করেছিল ইসরায়েল?

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ১১ অক্টোবর ২০২৩  

হামাস ইসরায়েলের ভেতরে তাদের হামলা পরিকল্পনার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে খুব সম্ভবত এ পরিকল্পনা করার সময় ফোন ও ইন্টারনেটের ব্যবহার সম্পূর্ণ এড়িয়ে গেছে। গাজা থেকে হামাস যোদ্ধারা যখন সীমান্ত পেরিয়ে ইসরায়েলের ভূখণ্ডে প্রবেশ করে তাণ্ডব চালাচ্ছিল তখন কোথায় ছিল ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী- আইডিএফ? শনিবারের নজিরবিহীন হামলার পর কেউ কেউ এই প্রশ্ন তুলেছেন। যার উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছে বিবিসি।

এক ইসরায়েলি বিবিসি-কে বলেছেন, “আমাদের সেনাবাহিনী দ্রুত সাড়া দিতে সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছে।”

কেনো ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী হামাসের হামলার বিরুদ্ধে দ্রুত সাড়া দিতে ব্যর্থ হলো সেই প্রশ্নের উত্তর হয়তো সময়ই দেবে। তবে আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, হামাসের হামলার আকস্মিকতা, ব্যপকতা এবং গতি তাদের এতটাই হতবাক এবং অপ্রস্তুত করে ফেলেছিল যে তারা বুঝতে পারছিল না ঠিক কী ঘটনার মুখোমুখি তারা হয়েছে।

হামাসের শনিবারের হামলার সফলতায় এই আকস্মিকতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। হামাস দীর্ঘদিন ধরে এই হামলার পরিকল্পনা করেছে। অথচ ইসরায়েলের চৌকষ গোয়েন্দা বাহিনী তার বিন্দুবিসর্গ আঁচ করতে পারেনি।

কারণ, হামাস তাদের হামলা পরিকল্পনা করার সময় এর নিরাপত্তা খুব ভালোভাবে নিশ্চিত করেছে। খুব সম্ভবত এই পরিকল্পনার সময় তারা ফোন ও ইন্টারনেটের ব্যবহার সম্পূর্ণরূপে এড়িয়ে গেছে। আর হামলার সময় তারা অভূতপূর্ব ব্যপকতা ও গতি দেখিয়েছে।

হামাস শুরুতে মাত্র মিনিট ২০ এর মধ্যে প্রায় পাঁচ হাজার রকেট ছুড়ে প্রতিপক্ষকে হতবিহ্বল করে দিয়েছে। ওই হামলার আড়ালে তারা একই সময়ে সীমান্তে ইসরায়েলের নজরদারি যন্ত্রপাতির উপর ড্রোন হামলা চালিয়েছে। তারপর তারা সীমান্ত বেড়ায় ৮০টির বেশি জায়গায় বড় বিস্ফোরণ ঘটিয়ে মোটরসাইকেল ও গাড়িতে করে সীমান্ত পেরিয়ে ইসরায়েলে প্রবেশ করেছে।   

ধারণা করা হয়, হামাসের ৮০০ থেকে ১০০০ যোদ্ধা ওই দিন ইসরায়েলে প্রবেশ করেছিল। তাদের এই ব্যাপক ও দ্রুত আক্রমণের কৌশলই ইসরায়েলের অপ্রতিরোধ্য প্রতিরক্ষা বাহিনীর বিরুদ্ধে তাদের অন্তত কিছু সময়ের জন্য হলেও সাফল্য এনে দেয়।

শনিবার ইহুদিদের একটি ধর্মীয় উৎসব উপলক্ষ্যে ইসরায়েলে সরকারি ছুটি ছিল। যে কারণে নিরাপত্তা ব্যবস্থাতেও হয়তো খানিকটা ঢিলেঢালা ভাব দেখা গিয়েছিল। তারমধ্যেই হঠাৎ করে ব্যাপক আক্রমণে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র এবং কমান্ডারদের মাঝে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়।

হামাস যোদ্ধারা একই সঙ্গে ইসরায়েলের সেনা পোস্ট এবং বেসামরিক নাগরিকদের উপর হামলা চালায়। সেনা পোস্টগুলোতে তেমন কোনো প্রতিরোধ ব্যবস্থা ছিল না বলেই এখন মনে হচ্ছে। হামলার পর অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া ছবি ও ভিডিওতে ইসরায়েলের কয়েকটি ট্যাঙ্ক হামাস যোদ্ধাদের দখলে দেখা যায়। তাতেই বোঝা যায়, প্রবল আক্রমণের মুখে ইসরায়েলের সেনারা পোস্ট ছেড়ে পালিয়ে গেছে।

সীমান্তও দীর্ঘ সময় ধরে অরক্ষিত পড়ে ছিল। যে কারণে হামাস যোদ্ধারা সেখান দিয়ে ইসরায়েলে থেকে জিম্মিদের গাজায় ধরে নিয়ে যেতে পেরেছে। হামাস গাজায় প্রায় একশ ইসরায়েলি ‘যুদ্ধবন্দি’ থাকার দাবি করেছে।

গত কয়েক মাসে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী গাজার তুলনায় পশ্চিম তীরের দিকে বেশি মনযোগ দিয়েছিল। যে কারণেই নিরাপত্তা ব্যবস্থায় এক ধরনের শূন্যতা তৈরি হয়। ইসরায়েলের চলমান রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলাকেও হয়ত নিজেদের পক্ষে কাজে লাগিয়েছে হামাস। বিচারবিভাগের স্বাধীনতা খর্ব করে সম্প্রতি ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুর প্রস্তাবিত একটি বিলের বিরুদ্ধে সেদেশ বড় ধরনের বিক্ষোভ হচ্ছিল।

দক্ষতা, আধুনিকতা এবং সক্ষমতার বিচারে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থাকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ বিবেচনা করা হয়। এমনকি বিশ্বের অন্যতম সেরা বলেও তারা বিবেচিত। এটা ধারণা হয়তো তাদের মধ্যেও এক ধরনের আত্মঅহমিকা তৈরি করেছিল।

ফলের যুগের পর যুগ ধরে সব কিছু থেকে বঞ্চিত ফিলিস্তিনি প্রতিপক্ষকের সক্ষমতাকে তারা খাটো করে দেখেছিল।ইসরায়েলে হামাসের হামলাকে অনেকে যুক্তরাষ্ট্রে হওয়া ওয়ান/ইলেভেন হামলার সঙ্গে তুলনা করছে। যে হামলায় বিমানকে অস্ত্র বানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের টুইনটাওয়ার ধ্বংস করে দেওয়া হয়। এ ধরণের হামলাকে ‘কল্পনার অতীত’ বলে বর্ণনা করা হয়।   

শনিবার হামাসের হামলাও ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর জন্য ‘কল্পনার অতীত’ ছিল। তারা হয়তো ভাবতেও পারেনি শত্রুরা এতটা সুপরিকল্পিত হামলা চালাতে পারে। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর এই ব্যর্থতার কারণ খুঁজে বের করতে নিশ্চিতভাবেই দীর্ঘমেয়াদে তদন্ত হবে। তবে এখন পেছনে কি হয়েছে সেটা নিয়ে না ভেবে বরং সামনে কী করা যায় তা নিয়েই হয়ত তারা ভাবছে।