• মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৭ ১৪৩১

  • || ২০ শাওয়াল ১৪৪৫

হার না মানা স্বর্ণা

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ৯ এপ্রিল ২০১৯  

শারীরিক প্রতিবন্ধকতা দমাতে পারেনি স্বর্ণা রানী সরকারকে। দুই হাত মিলিয়ে কলম ঘুরিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) পরীক্ষা দিচ্ছেন এই শিক্ষার্থী। ঈশ্বরগঞ্জের ডিএস কামিল মাদ্রাসা পরীক্ষা কেন্দ্রে ইসলামিয়া টেকনিক্যাল অ্যান্ড বি এম কলেজ থেকে এইচএসসি (ভোকেশনাল) পরীক্ষা দিচ্ছেন স্বর্ণা রানী সরকার।

উপজেলার রাজিবপুর ইউনিয়নের চরপাড়া গ্রামের দুলাল চন্দ্র সরকারের মেয়ে স্বর্ণা রানী দুই ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট।

স্বর্ণা রানী সরকার জাগো নিউজকে বলেন, দারিদ্র্যের কারণে আমার বাবা গাজীপুর শহরের হারিনাল এলাকায় একটি ওয়ার্কশপের দোকানে কাজ নেন। সেখানে একটি ভাড়া বাসায় থাকতাম আমরা। তখন স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে আমি পঞ্চম শ্রেণিতে পড়তাম। একদিন চারতলা একটি ভবনের গা ঘেঁষে যাওয়া বিদ্যুতের তারে হাত লেগে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে নিচে পড়ে যাই। মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় দুটি হাতই কব্জি পর্যন্ত কেটে ফেলতে হয়।

তিনি জানান, দুর্ঘটনার পর তার মা স্বপ্না রানী সরকারের চেষ্টায় মনোবল ফিরে পান তিনি। কিছুদিন চেষ্টার পর তিনি কব্জি দিয়েই লিখতে শুরু করেন। পিএসসি (প্রাথমিক পরীক্ষা সমাপনী) ও জেএসসি (জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট) পরীক্ষায় ভালো ফল করেন। তারপর গাজীপুরের হরিনাল হাইস্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে জিপিএ ৩.৮৯ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। স্বর্ণা লেখাপড়া শেষ করে শিক্ষক হতে চান।

sorna02

স্বর্ণা রানীর মা স্বপ্না রানী সরকার বলেন, ছোটবেলায় দুর্ঘটনায় দুই হাতের কব্জি হারায় স্বর্ণা। ভালোভাবে লেখাপড়া করার ইচ্ছা তার। কলম ধরার সময় প্রথমে কষ্ট হত। এখন আর সমস্যা হয় না।

তিনি বলেন, অভাবের কারণে স্বর্ণা নিজের পড়ালেখার খরচ নিজেই বহন করে। বাড়িতে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত শিশুদের প্রাইভেট পড়িয়ে তার সামান্য টাকা দিয়েই এতদূর এসেছে।

ইসলামিয়া টেকনিক্যাল অ্যান্ড বি এম কলেজের অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলাম বলেন, স্বর্ণা একজন প্রতিবন্ধী হওয়া সত্ত্বেও নিয়মিত ক্লাসে অংশ নিয়েছে। আমরা প্রতিষ্ঠনের পক্ষ থেকে সব ধরণের সাহায্যের চেষ্টা করেছি।

ঈশ্বরগঞ্জ ডিএস কামিল মাদরাসা পরীক্ষা কেন্দ্রের সচিব মাওলানা শোয়াইব বলেন, স্বর্ণা সকলের জন্য অনুকরণীয়। নিজের দুটি হাত না থাকলেও পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছে সে। তার এই আগ্রহ ও চেষ্টাকে সকলের সাধুবাদ জানানো উচিত।