• শুক্রবার ০৩ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২০ ১৪৩১

  • || ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫

ব্যাংক খাতের সমস্যা সমাধানে দরকার রাজনৈতিক সদিচ্ছা

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ২৬ মে ২০১৯  

খেলাপি ঋণকে ব্যাংকিং খাতের প্রধান সমস্যা বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও বিশিষ্টজনরা। তাঁরা বলছেন, রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া ব্যাংকিং খাতের এ সমস্যা সমাধান সম্ভব নয়। এ খাত ঠিক করতে একটি অস্থায়ী ব্যাংকিং কমিশন গঠনেরও পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা। গতকাল শনিবার কালের কণ্ঠ আয়োজিত ‘কেমন বাজেট চাই’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় তাঁরা এসব মতামত দেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির জন্য চক্রবৃদ্ধি সুদহারকে দায়ী করেন।

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘ব্যাংকিং খাতে যে দুরবস্থা, ঋণখেলাপি—এগুলো কেন হলো? ঋণখেলাপি আজকের সৃষ্টি না। ব্যাংক খাতের জন্মলগ্ন থেকে ঋণখেলাপি হয়ে আসছে। একবার তো ব্যালান্স শিট ক্লিন করার চেষ্টা করা দরকার।’ তিনি আরো বলেন, ‘একের পর এক ঋণ চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। ঋণের সুদ ১০ শতংশ হলে হিসাব করা হয়েছে ১৬ শতাংশ করে। এগুলো যতটা পারা যায় বাড়িয়ে ধরা হয়েছে। চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ ধরা হয়েছে। চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ ধরা হলে কোনো ব্যবসায়ী সুদ দেবেন না। ১২, ১৪ ও ১৬ শতাংশ সুদ দিয়ে কোনো ইন্ডাস্ট্রি চলবে না। ১০ শতাংশ সুদও অনেক বেশি। এটি ৭-৮ শতাংশ হওয়া উচিত।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বর্তমানে ব্যাংকিং খাতের কী সমস্যা, কারা সমস্যা সৃষ্টি করছে, সমস্যার সমাধান কী, তা ভাবতে হবে। আমি মনে করি ব্যাংকিং খাতের সমস্যা সমাধানে রাজনৈতিক সদিচ্ছা লাগবে। এটা ছাড়া কোনোক্রমেই এ সমস্যা সমাধান করা যাবে না।’

২০০৭-০৮ সালের বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সংকটের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ওই সময় এটা সংক্রামক ব্যাধির মতো আর্থিক খাত থেকে শুরু করে সমস্ত অর্থনীতির মূল খাতেও ছড়িয়ে পড়েছিল। এর প্রচণ্ড ধাক্কা এখনো ইউরোপীয় দেশগুলোর অর্থনীতি কাটিয়ে উঠতে পারেনি।’ তিনি বলেন, ‘দেশের ব্যাংকিং খাতে যে গরম অবস্থা এখন আছে, সেটা কাটিতে উঠতে না পারলে ব্যবসা বলেন, ভ্যাট বলেন আর গার্মেন্ট বলেন, কিছুই হবে না। তাই দেশের স্বার্থে, অর্থনীতির স্বার্থে ব্যাংক ও আর্থিক খাত ঠিক করতে হবে।’

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক এ গভর্নর বলেন, ‘ব্যাংক ও আর্থিক খাত নার্ভের মতো। এটা ঠিক না থাকলে ভবিষ্যতে অর্থনীতিতে বড় ধাক্কা আসতে পারে।’ এ খাতকে সম্পূর্ণ পেশাদার খাত উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখানে কোনো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া ঠিক হবে না। তবে যেকোনো পরামর্শ আসতেই পারে। তবে তা সুনির্দিষ্ট হতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংককে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা দিতে হবে।

ব্যাংক ও আর্থিক খাত নিয়ে তিনি চিন্তিত উল্লেখ করে সালেহউদ্দিন বলেন, ‘ব্যাংকিং খাতের সমস্যা সমাধানে অস্থায়ী কমিশন গঠন করা যেতে পারে। সিঙ্গল এক্সপোজার লিমিট এবং ব্যাসেল-১, ২ ও ৩ সংক্রান্ত যে মানদণ্ড রয়েছে, সেসব বিষয়সহ অন্যান্য বিষয়ে সংশোধন, পরিবর্ধন ও পরিমার্জনে কাজ করার জন্যও কমিশন জরুরি হয়ে পড়েছে।’

ক্যাবের চেয়ারম্যান মো. গোলাম রহমান বলেন, আমানতকারীদের অর্থের সুরক্ষার ওপর ব্যাংকের সুশাসন নির্ভরশীল। বর্তমানে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ এক লাখ কোটি টাকা ছুঁই ছুঁই করছে। এর বাইরে ৪০ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ অবলোপন করা হয়েছে। সব মিলিয়ে খেলাপি ঋণের প্রকৃত পরিমাণ এক লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি। অন্যদিকে সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন ৪৫ হাজার কোটি টাকা। রিজার্ভের পরিমাণ ৪৭ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ পরিশোধিত মূলধন ও রিজার্ভ মিলে রয়েছে ৯৩ হাজার কোটি টাকার মতো। ফলে আমানতকারীরা তাদের সঞ্চিত অর্থের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত। একটি নতুন ব্যাংক সমস্যায় পড়েছিল। তারা আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দিতে পারেনি। অর্থাৎ আমানতকারীরা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বর্তমানে মূল্যস্ফীতির চেয়ে কম সুদ পাচ্ছে আমানতকারীরা। এতে আমানতকারীদের সঞ্চয়ের প্রকৃত মূল্য কমে গেছে। ফলে দীর্ঘ মেয়াদে সঞ্চয় নিরুৎসাহ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষায় কী ব্যবস্থা নেওয়া যায় সে বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন গোলাম রহমান। এ ছাড়া সম্প্রতি ঋণখেলাপিদের নানা সুবিধা ঘোষণা করে বাংলাদেশ ব্যাংক যে নীতিমালা জারি করেছে, তাতে খেলাপি হওয়ার প্রবণতা বাড়বে বলেও মন্তব্য করেন গোলাম রহমান।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাকিল রিজভী বলেন, ‘আমরা জানি কী জন্য ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়ে। উন্নত দেশে এটা অনেক কম। কারণ সেসব দেশে পুঁজিবাজারভিত্তিক মূলধনের জোগান হয়। পুঁজিবাজারনির্ভর অর্থনীতি তাদের। কিন্তু আমাদের ব্যাংকনির্ভর অর্থনীতি হওয়ায় খেলাপি বেশি। এখানে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের যে মিসম্যাচ রয়েছে, সেটা সমাধান করা প্রয়োজন।’