• শুক্রবার ০৩ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৯ ১৪৩১

  • || ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫

ঘরের মধ্যে উচ্চ ভোল্টেজের বৈদ্যুতিক খুঁটি!

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ২৮ মে ২০১৯  

ব্যক্তি মালিকানাধীন জমিতে বৈদ্যুতিক খুঁটি বসিয়ে বসতঘরের ওপর দিয়ে উচ্চ ভোল্টেজের তার (বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন) টেনে নেওয়ায় বরিশাল নগরের পলাশপুরে প্রায় ২০টির মতো পরিবার রয়েছে আতঙ্কে।

পাশাপাশি স্থানীয় একটি স্কুল ভবনের গা ঘেঁষে ৩৩ হাজার কেভি বিদ্যুৎ সঞ্চালনের ওই লাইনটি চলে যাওয়ায় আতঙ্কে সেখানকার শিক্ষকসহ শিক্ষার্থীরা।

যদিও উপায়ন্তর না পেয়ে দু’টি পরিবার তাদের ঘরের মধ্যেই সেই বৈদ্যুতিক খুঁটি রেখে বসবাস শুরু করছে। এরমধ্যে একটি খুঁটি তো নির্মাণাধীন দোতলা ভবনের মাঝ বরাবর ছাদের মধ্যেই রেখে দেওয়া হয়েছে। যদিও এগুলো কার্যত ঝুঁকিপূর্ণ বলেই দাবি ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডে (ওজোপাডিকো)। আর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ব্যক্তি মালিকানাধীন রেকর্ডীয় সম্পত্তিতে থাকা খুঁটি না সরানোয় বাধ্য হয়েই ঝুঁকির মধ্যেই বসবাস করতে হচ্ছে বলে দাবি স্থানীয়দের।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নগরের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের আওতাধীন পলাশপুর এলাকার ১ নম্বর গলির পাশেই ওজোপাডিকো-২ এর আওতাধীন একটি বিদ্যুতের সাবস্টেশন রয়েছে। যেখান থেকে বরিশাল নগরের সদররোডসহ বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়ে থাকে। যে স্টেশনের দক্ষিণ দিক থেকে সরাসরি ৩৩ হাজার কেভি বিদ্যুৎ সঞ্চালনের লাইন চলে গেছে নগরের বিভিন্ন স্থানে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, স্টেশনের দক্ষিণ দিকে সীমান প্রাচীর সংলগ্ন নির্মাণাধীন দোতলা একটি ভবনের ওপর দিয়ে ৩৩ হাজার কেভি বিদ্যুৎ সঞ্চালনের ওই লাইনটি চলে গেছে পোর্ট রোডের দিকে। স্টেশন থেকে এ করিম বাস্তহারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত এই উচ্চ ভোল্টেজের বৈদ্যুতিক লাইনটি বেশ কিছু আবাসিক ভবনের ওপর দিয়েই চলে গেছে।  এমন কি এ করিম বাস্তহারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নির্মাণাধীন ভবনের গা ঘেঁষেই রয়েছে এই তারের অবস্থান।নির্মাণাধীন দোতলা ভবনের মাঝ বরাবর বৈদ্যুতিক খুঁটি। ছবি: বাংলানিউজঅপরদিকে সঞ্চালন লাইন টানা দেওয়ার জন্য বৈদ্যুতিক খুঁটিগুলোর মধ্যে বিদ্যালয় ভবনের সঙ্গেই একটি খুঁটি থাকলেও স্টেশনের সঙ্গে থাকা দোতলা ভবনটির মাঝ বরাবরে রয়েছে খুঁটির অবস্থান। ভবন মালিক বাধ্য হয়েই খুঁটিকে ভবনের মাঝে রেখে চলছে নির্মাণ কাজ, তার পাশের একতলা টিনের ঘরের মধ্যে রয়েছে আরেকটি খুঁটি।

স্থানীয় বাসিন্দা আয়নাল বেপারী বলেন, এ বিদ্যুতের তার ও খুঁটির জন্য তিনিসহ স্থানীয় বাসিন্দা শাহজাহান, কালু শরীফ, মামুন, মাসুম, সালাম, হাসান, সুজন রশিদসহ প্রায় ২০টির মতো পরিবার আতঙ্কে রয়েছে। রাতের বেলায় ঘুমাতে গিয়ে যেন ঘুমাতে পারেন। বিশেষ করে ঝড়-বৃষ্টির রাতে বেশি ভয় হয়, যদি তার ছিঁড়ে পড়ে যায় কোনো ঘরের ওপর, তবে সেখানে মৃত্যু অনিবার্য।

স্থানীয় বাসিন্দা হাসান বলেন, বৃষ্টি হলে বা না হলেও অনেক সময় রাতের বেলা ঘুমাতে গিয়ে একটি শব্দ শুনতে পাই। যে শব্দ বিদ্যুতের এই তার থেকেই উৎপন্ন হয়। যা শুনলে যে কারো মনে হবে এই তার মাথার ওপর নিয়ে বসবাস করাটা কতোটা ভয়ের।

স্থানীয়রা বলছেন, মৌখিকভাবে বিদ্যুৎবিভাগের স্থানীয় দায়িত্বরতদের বিষয়টি দেখার জন্য বারবার বলা হয়েছে। কিন্তু বছরের পর বছর গেলেও কোনো ফয়দা হয়নি, এমনকি এই তারের কারণে ব্যক্তি মালিকানা সম্পত্তি হলেও কেউ বাড়িঘর করতে পারছেন না। যারাও করেছেন তাদের অনেককেই সরাতে না পেরে লোহাজাতীয় পদার্থ দিয়ে তৈরি খুঁটি ঘরের মধ্যে রেখে দিতে হচ্ছে। আমরা এখন এ থেকে পরিত্রাণ পেতে চাই।নির্মাণাধীন দোতলা ভবনের মাঝ বরাবর বৈদ্যুতিক খুঁটি। ছবি: বাংলানিউজব্যক্তি মালিকানা সম্পত্তির ওপর বৈদ্যুতির খুঁটি ও সঞ্চালন লাইন যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে ওজোপাডিকো-২ উপ-সহকারী প্রকৌশলি জাহিদ হোসেন বলেন, যখন সাব-স্টেশনটি নির্মাণ হয় আর ওই বৈদ্যুতিক সঞ্চালন লাইনের কাজ হয়। তখন সেখানে তেমন কোনো ঘরবাড়ি ছিল না। এখন বেশকিছু বসতঘর রয়েছে। তবে ভবন কিংবা টিনের ঘরের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের খুঁটি রেখে বসবাস করছেন। তারা এ কাজটি ঝুঁকিপূর্ণভাবে করেছেন। সাব-স্টেশনের দক্ষিণ দিকে খুঁটি ও টানা দেওয়ার তার ভবনের মধ্যে রেখেই নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে সহকারী প্রকৌশলী উৎপল চন্দ্র দে বলেন, খুঁটি সরানোর বিষয়ে এ পর্যন্ত কেউ আমাদের কাছে লিখিত দেয়নি। তবে ব্যক্তি মালিকানা জায়গা দিয়েও কিন্তু সঞ্চালন লাইন টানা হয়, সেক্ষেত্রে আমরা যারা খুঁটি আটকে ঝুঁকিপূর্ণভাবে ভবন ও ঘর তৈরি করেছেন তাদেরকে বিদ্যুৎবিভাগের পক্ষ থেকে নোটিশ দেওয়ার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি।