• শুক্রবার ০৩ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২০ ১৪৩১

  • || ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫

সিজার ছাড়াই ৪২৮ শিশুকে পৃথিবীর আলো দেখালেন শিরীন

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ২৯ মে ২০১৯  

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের ক্যামেলিয়া ডানকান ফাউন্ডেশন হাসপাতালের সিনিয়র নার্স শিরীন এ পর্যন্ত ৪২৮টি শিশুর নরমাল ডেলিভারি করিয়েছেন। সিজার ছাড়া ডেলিভারি করানো তার কাছে নেশার মতো। প্রতিটি ডেলিভারি শেষ করেই নবজাতককে নিয়ে সেলফি তুলে ফেসবুকে পোস্ট দেন তিনি।

সানজান শিরীন বলেন, দেশে সিজারের মাধ্যমে শিশুর জন্মদানের হার বাড়ছে। এতে মা-শিশু দুজনের জীবনেই ঝুঁকি বাড়ছে। আমি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিত করতে সিজার ছাড়াই শিশুর জন্মে কাজ করতে চাই।

হবিগঞ্জের মেয়ে সানজান শিরীন বলেন, একজন মা ডেলিভারি আগে ৪৫ ভোল্ট ব্যাথায় কাতরান। কিন্তু আমি যখন তাকে ব্যাথা থেকে রিলিফ দিতে সাহায্য করি তখন তিনি শান্তি পান। সেই শান্তির হাসি আর নবজাতকের কান্না আমার মনে প্রশান্তি দেয়। তাই গর্ভবতী মায়েদের নরমাল ডেলিভারি করানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করি।

শিরীন আরো বলেন, নিরাপদ মাতৃত্বের জন্য নরমাল ডেলিভারির কোনো বিকল্প নেই। সিজারে বাচ্চা প্রসব করাতে গিয়ে মা অনেক ঝুঁকির মধ্যে থাকেন। সিজারে বাচ্চা হলে একজন নারী পুনরায় মা হতে গেলে ঝুঁকি থাকে ৯০.৭%। অনেক সময় ছুরি-কাঁচি লেগে শিশুর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ক্ষতি হয়। মায়েরাও ইনফেকশনে ভোগেন। অথচ নরমাল ডেলিভারি করানোর দুই ঘন্টার মধ্যে একজন মা স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারেন।

আট ভাইবোনের মধ্যে তৃতীয় শিরীন এইচএসসি পরীক্ষার পরই মেডিকেল অ্যাসিসটেন্ট ট্রেনিং স্কুলে ভর্তি হন। কোর্স শেষ করে ২০১৬ সালের মাঝামাঝি মৌলভীবাজারের একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে কাজ শুরু করেন। একই বছর ডিসেম্বরে মা মনি এনজিও’র এইচএস প্রজেক্টে প্যারামেডিক পোস্টে নিয়োগ পান তিনি। এরপর এফআইভিডিবিতে প্যারামেডিক পোস্টে সিলেটের জৈন্তাপুরেও কাজ করেন। বর্তমানে শ্রীমঙ্গলে ক্যামেলিয়া ডানকান ফাউন্ডেশন হাসপাতালে সিনিয়র নার্স হিসেবে কর্মরত আছেন শিরীন।

শিরীন বলেন, আমাদের জীবনটা যুদ্ধের। সব সময় সব জায়গায় যুদ্ধ করে টিকে থাকতে হয়। আমার ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম হয়নি। এখনো ভালো কাজ করতে যুদ্ধ করছি।

নরমাল ডেলিভারি করাতে গিয়ে বিচিত্র অভিজ্ঞতা হয়েছে শিরীনের। তিনি বলেন, হাসপাতালের উপরের তলায় আমরা থাকি। একদিন মাঝরাতে এক কলিগ টেনে নামাল। খুব গরিব রোগী, খারাপ অবস্থা, কিন্তু রেফার যাবে না। কারণ তাদের কাছে টাকা নেই। তখন রাত তিনটা বাজে। নিচে নামার সঙ্গে সঙ্গে রোগীর স্বামী আমার পা ধরে ফেললেন। তার এ আচরণে আমি অনেক অসহায় বোধ করছিলাম।

শিরীন বলেন, ডেলিভারি করলাম, যমজ বাচ্চা হলো। সেই খুশিতে ওই নারীর স্বামী আমাকে ২০ টাকা বকশিশ দিতে চাইলেন। ডেলিভারির পর খুব ক্ষুধা লাগে রোগীর। আমি রুমে গিয়ে ভাত-তরকারি এনে দিলাম। কারণ ওই রাতে কোনো দোকান খোলা ছিল না।