• মঙ্গলবার ২১ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৭ ১৪৩১

  • || ১২ জ্বিলকদ ১৪৪৫

সেনাবাহিনীর গাড়িতে ধাক্কা, ঢাবির সেই শিক্ষার্থী কারাগারে

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ৩১ মে ২০১৯  

মোটরসাইকেলে থেকে সেনাবাহিনীর গাড়িতে ধাক্কা দিয়ে বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিতে না পারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সেই শিক্ষার্থীকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। একই ঘটনায় দায়ের করা মামলার আরেক আসামি ওই শিক্ষার্থীর মামাকেও কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেওয়া হয়েছে। মামলায় তাদের বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাধাদানের অভিযোগ করা হয়েছে।
শুক্রবার (৩ মে) বিকেলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তার রিমান্ড আবেদন ও আসামিপক্ষের জামিন আবেদনের শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম দেবব্রত বিশ্বাস এ আদেশ দেন।
আসামিরা হলেন— ঢাবি ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেণির ও শহীদুল্লাহ হলের আবাসিক শিক্ষার্থী তানভীর আহমেদ ও তার মামা ফেরদৌসুল হক। তানভীর ৪০তম বিসিএসের পরীক্ষার্থী ছিলেন। আজ শুক্রবার এই বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা ছিল। এ ঘটনায় আটক হওয়ায় তানভীর ওই পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি।
শুক্রবার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহবাগ থানার পুলিশ পরিদর্শক আরিফুর রহমান সরদার আসামিদের আদালতে হাজির করে মামলার তদন্তের স্বার্থে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেন।
রিমান্ড আবেদন বলা হয়, আসামিরা বৃহস্পতিবার (২ মে) সন্ধ্যায় রাজধানীর বাংলামোটর এলাকায় মোটরসাইকেল চালিয়ে যাওয়ার সময় এক সৈনিক ড্রাইভারের গাড়ি ওভারটেক করেন। এরপর ওই সৈনিক ড্রাইভার মোটরসাইকেলের সামনে এসে দাঁড়ালে আসামিরা সাংবাদিক হিসাবে নিজেদের মিথ্যা পরিচয় দেন, অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং ওই সৈনিককের কলার চেপে ধরে মারধর করেন। ‘আজিজ সাহেব’কে বলে সৈনিককে চাকরিচ্যুত করারও হুমকি দেয় তারা।
রিমান্ড আবেদনে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, ওই সময় কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশ আসামিদের উগ্র মেজাজ দেখে ওই সৈনিককে উদ্ধার করেন এবং আসামিদের পুলিশ বক্স নিয়ে আসেন। ট্রফিক পুলিশ টহলরত পুলিশকে খবর দিলে তারা আসামিদের হেফাজতে নিয়ে যায়। আসামিরা প্রাথমিকভাবে ঘটনার বিষয় স্বীকার করলেও ওই আসামিদের সঠিক নাম-ঠিকানা যাচাই, প্রকৃত রহস্য উদঘাটন ও মারধরের কারণ জানতে রিমান্ডের প্রার্থনা জানান তদন্ত কর্মকর্তা।
অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী আসাদুজ্জামান (রাসেল) ও বাচ্চু দুই আসামির রিমান্ড আবেদনের বিরোধিতা করে জামিনের আবেদন করেন। শুনানিতে আইনজীবীরা বলেন, বৃহস্পতিবার তানভীর আহমেদ ও তার মামা মোটরসাইকেলে করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে যাচ্ছিলেন। পথে বাংলামোটর এলাকায় ওই সৈনিককের গাড়িতে মোটরসাইকেলের ধাক্কা লাগে। এরপর ওই সৈনিক গাড়ি থেকে নেমে এসে আসামিদের মারধর করেন। তারপরও তানভীর ওই সৈনিকের কাছে ক্ষমা চান, শুক্রবার বিসিএস পরীক্ষার কথা উল্লেখ করে তাতে অংশ নেওয়ার সুযোগ দিতে ছেড়ে দিতে অনুরোধ করেন।
শুনানিতে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা আরও বলেন, আসামিদের রিমান্ডের কোনো যৌক্তিকতা নেই। তাছাড়া ওই শিক্ষার্থীর ভবিষৎ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আসামিরা নির্দোষ। তাই রিমান্ড আবেদন নামঞ্জুর করে আসামিদের জামিনের প্রার্থনা জানান।
দুই পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক রিমান্ড ও জামিন নামঞ্জুর করে আসামিদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এর আগে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তানভীর ও তার মামা মোটরসাইকেলে করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে যাওয়ার সময় বাংলামোটর এলাকায় সেনাবাহিনীর একটি গাড়ির সঙ্গে মোটরসাইকেলটির ধাক্কা লাগে। এ ঘটনায় তানভীর ও ফেরদৌসুলকে আটক করে শাহবাগ থানায় নিয়ে মামলা দায়ের করা হয়।
এদিকে, এ ঘটনায় তানভীর বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় অংশ নিতে না পারায় ঢাবি শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ জানিয়েছেন। ঢাবি কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক আখতার হোসেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লিখেছেন, শাহবাগ থানা থেকে এলাম। ভূগোল বিভাগের তানভীর ভাইকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। মামলা হয়েছে সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার। ধাক্কা লাগলো সেনাবাহিনীর গাড়ির সঙ্গে, আর জেলে গেল ঢাবি শিক্ষার্থী। এসব অন্যায় মেনে নিয়ে থাকা যায় না। ঢাবি নিরব থাকতে পারে না।