• শনিবার ১৮ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৪ ১৪৩১

  • || ০৯ জ্বিলকদ ১৪৪৫

রাতের ঢাকায় মিজানুরের মতো আরো তিন জনকে হত্যা করে তারা

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ২৭ জানুয়ারি ২০২০  

একদল ছিনতাইকারীর হাতে গত ৬ জানুয়ারি রাতে খুন হন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মিজানুর রহমান। মিজানুরের হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা স্বীকারোমূলক জবানবন্দিতে জানিয়েছে, রাতে ছিনতাইয়ের সময় মিজানুরের মতো আরো তিন জনকে হত্যা করেছে তারা।

গ্রেফতাররা হলো- নুরুল ইসলাম, আবদুল্লাহ বাবু ও মো. জালাল।

আসামিরা গত শুক্রবার ও রোববার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। 

সূত্র জানায়, গত ৬ জানুয়ারি দিবাগত রাত ২টায় কাওরান বাজার রেলক্রসিঙের কাছে ফ্লাইওভারের ওপর এক যুবকের লাশ পড়ে ছিল। হাতিরঝিল থানার পুলিশ ওই যুবকের লাশ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখে। পরে নিহত যুবকের নাম-পরিচয় সনাক্ত হয়। জানা যায়, তার নাম মিজানুর রহমান।

এ ঘটনায় মিজানুরের ছোট ভাই আরিফ হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।

হাতিরঝিল থানার ওসি মো. আবদুর রশীদ জানান, মিজানুরকে যারা খুন করেছে, তারা ভয়ংকর সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী চক্র। তিন আসামি আদালতের কাছে স্বীকার করেছে, মিজানুর রহমানকে খুন করার আগে তারা আরো তিনটি খুনের ঘটনা ঘটিয়েছেন। খুন তিনটি সংগঠিত হয়েছে রাজধানীর ভাটারা ও খিলক্ষেত এলাকায়। সেই তিনটি খুনের রহস্য উদঘাটিত হয়নি।

মিজানুরের পরিচয় সনাক্ত
মিজানুরের গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের সবিলপুরে। তিনি ঢাকার এশিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। পাশাপাশি চাকরি করতেন বনানীর গোল্ডেন টিউলিপ ফোর স্টার হোটেলে। 

মিজানুরের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তার বাবা আমির হোসেন গ্রামের বাড়িতে দোকানদারি করতেন। চাকরি করে মিজানুর নিজের লেখাপড়ার খরচ চালানোর পাশপাশি বাড়িতে পরিবারের জন্য টাকা পাঠাতেন। থাকতেন শেওড়া এলাকার একটি মেসে।

মিজানুরের ভাই মামলার বাদী আরিফ হোসেন বলেন, তার ভাই মিজানকে যারা খুন করেন, তারা মুঠোফোন নিয়ে গিয়েছিলেন, রেখে গিয়েছিলেন তার মানিব্যাগ। সেই মানিব্যাগে ছিল ভাইয়ের জাতীয় পরিচয়পত্র, বিশ্ববিদ্যালয় ও হোটেলের পরিচয়পত্র। পরে পুলিশ তাদের লক্ষ্মীপুর থানায় ফোন দেয়। এরপর ইউনিয়নের এক চৌকিদারের মাধ্যমে ভাই মিজানুরের মৃত্যু সংবাদ পান। ঢাকায় এসে তিনি তার ভাইয়ের লাশের পরিচয় নিশ্চিত করেন।

যেভাবে খুনের রহস্য উদঘাটন
হাতিরঝিল থানার ওসি এবং তদন্ত কর্মকর্তা হাতিরঝিল থানার এসআই খায়রুল আলম জানান, মিজানুর খুন হওয়ার সম্ভাব্য সবকটি কারণ সামনে রেখে তারা অনুসন্ধান শুরু করেন। তবে মিজানুরের মুঠোফোন খুনের রহস্য উদঘাটনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করেছে। সেই সূত্র ধরে নুরুল ইসলাম নামের সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালককে প্রথমে গ্রেফতার করা হয়। এরপর গ্রেফতার করা হয় মিজানুরের মোবাইল ফোন সংগ্রহকারী আবদুল্লাহ ও জালালকে।

 

যেভাবে খুন হন মিজানুর
মিজানের ভাই আরিফ জানান, তার ভাই সেদিন বনানীর হোটেলে কাজে যোগ দেন বেলা ২টায়। রাত ১১টার সময় কাজ শেষে হোটেল থেকে বেরিয়ে আসেন।

পুলিশ কর্মকর্তা খায়রুল বলেন, হোটেল থেকে কাজ শেষে নিজের বাসায় (শেওড়ায়) যাওয়ার জন্য বনানীর কাকলীতে অপেক্ষা করতে থাকেন। গভীর রাতে যানবাহন কমে যায়। তখন সিএনজিচালিত একটা অটোরিকশা সেখানে আসে। অটোরিকশার ভেতর দুজন যাত্রী বসা ছিল। তারা বলে, অটোরিকশা যাবে বিমানবন্দরে। তখন মিজান ওই অটোরিকশায় ওঠেন। চালক ছিলেন ছিনতাইকারী চক্রের সদস্য নুরুল ইসলাম। অটোরিকশাটি যখন কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সামনে আসে, তখন যাত্রীবেশী ছিনতাইকারী চক্রের দুই সদস্যের (নাজমুল ও শাহীন) একজন মিজানকে বলেন, বমি আসছে। মিজান যেন তাদের মাঝখানে বসেন। মিজান তখন মাঝখানে বসেন। 

‘নাজমুল ও শাহীন তখন মিজানকে বলেন, যা আছে তা যেন দিয়ে দেন। কিন্তু মিজান দুই ছিনতাইকারীর সঙ্গে ধস্তাধস্তি করেন। একপর্যায়ে দুই ছিনতাইকারী নাজমুল ও শাহীন মিজানের গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করেন। মিজান হত্যায় গ্রেফতার তিন আসামি তাদের কাছে এবং আদালতের কাছে এসব কথা স্বীকার করেছেন।’

হাতিরঝিল থানার ওসি আবদুর রশীদ বলেন, সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী চক্রের এই সদস্যরা মিজানকে খুন করার আগে আরো তিনটি খুনের ঘটনা ঘটিয়েছে। এই ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যরা যাত্রী সেজে অটোরিকশায় থাকে। নিরীহ লোকদের ওই অটোরিকশায় ওঠানোর পর তাদের মালামাল লুট করে নেয়। বাধা দিলে তাদের কাছে থাকা গামছা কিংবা মাফলার দিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে।