• শনিবার ১৮ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৪ ১৪৩১

  • || ০৯ জ্বিলকদ ১৪৪৫

৩টি ট্রেন নিয়ে এ বছরেই শুরু হচ্ছে মেট্রোরেলের যাত্রা

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ১৬ জানুয়ারি ২০১৯  

*যানজটের ভোগান্তি দূর হবে
* উত্তরা থেকে মতিঝিল আসতে সময় লাগবে ৩৭ মিনিট
* উত্তরা-আগারগাঁও পর্যন্ত প্রথম নির্মাণ

গত ২৫ বছরে রাজধানীর যোগাযোগ ব্যবস্থার দৃশ্যমান উন্নতি হয়নি। শত চেষ্টার মধ্যেও অবনতি হয়েছে, যা এখনও চলমান। প্রায় ১০ লাখ গাড়ির শহর ঢাকা। বাসে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ পাঁচ-সাত কিলোমিটার রাস্তা অতিক্রম করা যায়। যা গত ১০ বছর আগেও দ্বিগুণ ছিল। দিন দিন পরিস্থিতির অবনতির মধ্যে আশার আলো জাগিয়েছে মেট্রোরেল প্রকল্প। বলতে গেলে, যোগাযোগ ব্যবস্থায় সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেবে চলমান প্রকল্পটি। চোখের পলকে ছুটবে ট্রেন। উত্তরা থেকে মতিঝিল আসতে সময় লাগবে মাত্র ৩৭মিনিট। পাঁচ মিনিট অন্তর অন্তর ছাড়বে এসি ট্রেন। অথচ এখন যানজটের কারণে উত্তরা যেতে কত সময় লাগবে তা বলা মুশকিল। হয়ত এ রকম একটি বাস্তবতার কথা যানজটে বসে অনেকেই কল্পনা করতেন। আহা! যদি এমন হতো। অল্প সময়ে পাড়ি দেয়া সম্ভব হতো দূরের পথ। রাস্তায় কোন ভোগান্তি থাকবে না; যা এখন বাস্তবের পথ ধরে হাঁটছে...।

সম্পূর্ণ এলিভেটেড মেট্রোরেলে প্রতি ঘণ্টায় উভয়দিকে ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহনের সক্ষমতা থাকবে। উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত থাকবে ১৬টি স্টেশন। সাড়ে তিন মিনিট অন্তর অন্তর ট্রেন থামবে। থাকবে আধুনিক রেল স্টেশন। চলন্ত সিঁড়ি দিয়ে রাস্তা থেকে স্টেশনে প্রবেশ করা যাবে। ‘র‌্যাপিড পাস’ কার্ড দিয়ে ট্রেনের ভাড়া পরিশোধ করতে পারবেন যাত্রীরা। আবার টিকেট কেটে ভ্রমণেরও সুযোগ থাকবে। স্বয়ংক্রিয়ভাবে খুলবে প্ল্যাটফর্মের প্রবেশদ্বার। বিদ্যুতে চলবে দ্রুত গতিসম্পন্ন এ ট্রেন।

বর্তমান সময়ের সঙ্গে এ রকম চিন্তা মেলালে সত্যিই অবিশ্বাস্য মনে হয়। আসলে কি আমরা প্রযুক্তিনির্ভর, উন্নত ও বিশ্বমানের যোগাযোগ ব্যবস্থার সঙ্গে শামিল হতে যাচ্ছি। হ্যাঁ, সত্যি। এখন বলতেই হবে, এটি এখন আর কল্পনার কিছু নয়। কর্মযজ্ঞ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রকল্পের অগ্রগতি ছাড়িয়েছে ১২ ভাগ। তবে সুবিধা ভোগ করতে আরও কিছুদিন কষ্ট সইতে হবে। ২০১৯ সালের শেষের দিকে নগরবাসীর জন্য মেট্রোরেলের শুভ সূচনা হবে। ২০৩৫ সালের মধ্যেই নগরবাসী উপভোগ করবে মেট্রোরেল প্রকল্পের সকল সুবিধা।

কিন্তু কেমন হবে আসলে এই মেট্রোরেল। প্রতিদিনের কর্মব্যস্ত যাত্রাপথে সত্যিই কি একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারবে নগরবাসী। নগর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মেট্রোরেল মানেই উন্নত ও আধুনিক গণপরিবহন ব্যবস্থা। বিশ্বের ঘনবসতি শহরগুলো মেট্রোরেল ও পাতালরেল নির্মাণের মধ্য দিয়ে যোগাযোগ খাতে বিপ্লব এনেছে; যা রাজধানী ঢাকাতেও সম্ভব। এছাড়া উড়াল সড়ক বা অন্য কোন উপায়ে যানজট পরিস্থিতি থেকে মুক্ত হওয়া কঠিন বলেও মনে করেন তারা।

তারা বলছেন, যানজট এড়াতে মেট্রোরেলের বিকল্প নেই। প্রকল্পটিই হবে যানজট নিরসনে সবচেয়ে কার্যকর। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে রাজধানীর যানজটের বিড়ম্বনা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। পাশাপাশি স্ট্র্যাটেজিক ট্রান্সপোর্ট প্ল্যান (এসটিপি) অনুযায়ী প্রস্তাবিত সব মেট্রোরেল নির্মাণের প্রস্তাব বিশেষজ্ঞদের।

ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহন ॥ সত্যিই, এক অবিশ্বাস্য রকম বাস্তবতা চোখের সামনে দেখা যাবে। গত ২৫ বছরে রাজধানীর সড়কপথে যানবাহনের চাপ বাড়ছে। বর্তমানে বাসে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ পাঁচ থেকে সাত কিলোমিটার রাস্তা অতিক্রম করা যায়। অথচ বেশ কয়েকটি উড়াল সড়কের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। পাল্লা দিয়ে বেড়েছে পরিবহন। পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। প্রায় ১০ লাখ গাড়ির এই শহরের রাস্তা দিন দিন অচল হতে থাকবে; এমন ইঙ্গিত দিয়ে যাচ্ছেন নগর পরিকল্পনাবিদরা। চলমান এই সঙ্কট সমাধানের একমাত্র রাস্তা মেট্রোরেল। সামনের দিনগুলোতে এছাড়া পরিস্থিতি উন্নতির দৃশ্যমান কোন ব্যবস্থা নেই। অর্থাৎ ২০১৯ সাল থেকেই দেখা যাবে প্রতি চার মিনিট পর পর ১ হাজার ৮০০ যাত্রী নিয়ে ছুটছে মেট্রোরেল। ঘণ্টায় চলাচল করবেন প্রায় ৬০ হাজার যাত্রী।

চলন্ত সিঁড়ি দিয়ে প্ল্যাটফর্মে পৌঁছানো যাবে ॥ সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, রাস্তার মাঝ বরাবর উড়াল পথের (ভায়াডাক্ট) ওপর স্থাপিত ডবল রেললাইন থাকবে। ছয় মিটার চওড়া এই উড়ালপথে উভয়দিক থেকে ট্রেন চলাচল করতে পারবে। রাস্তার ওপর ঝুলন্ত স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম, দৈর্ঘ্য হবে ১৭০ মিটার। নিচতলায় হবে টিকেট কাউন্টার ও স্বয়ংক্রিয় প্রবেশদ্বার। চলন্ত সিঁড়ির মাধ্যমে যাত্রীরা প্ল্যাটফর্মে পৌঁছবেন। ইলেক্ট্রিক ট্রেন চলবে বিদ্যুতের সাহায্যে। প্রতি সাড়ে তিন মিনিট পর ট্রেন স্টেশনে থামবে। সরকারের ১০টি অগ্রাধিকার প্রকল্পের একটি মেট্রোরেল। প্রকল্পের অগ্রগতিকে নির্বিঘ্ন করতে মেট্রোরেল আইন প্রণয়ন করেছে সরকার। ভূমি অধিগ্রহণে বিশেষ বিধান রাখা হয়েছে আইনে।

২৮ জোড়া ট্রেন চলবে ॥ পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হবার পর মোট ২৮ জোড়া মেট্রোরেল চলাচল করবে রাজধানীতে। রাস্তার মাঝ বরাবর উপর দিয়ে উত্তরা থেকে শুরু হয়ে মিরপুর-ফার্মগেট হয়ে মতিঝিল পর্যন্ত যাবে এই মেট্রোরেল। প্রতি মেট্রোরেলে ৬টি কোচ থাকবে। প্রতি স্কয়ার মিটারে ৮ জনের হিসাবে ব্যস্ততম সময়ে ১ হাজার ৮০০ যাত্রী চলাচল করতে পারবেন। মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা লাগবে; যার ১৬ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকাই দেবে জাইকা। বাকি ৫ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা জোগাবে সরকার। এ বছর ডিসেম্বরে ৩টি ট্রেন নিয়েই মেট্রোরেলের যাত্রা শুরু হবে।