• শনিবার ১৮ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৪ ১৪৩১

  • || ০৯ জ্বিলকদ ১৪৪৫

লিঙ্গবৈষম্য কমিয়েছে, নারীর উন্নয়নে আরও নিশ্চিত হতে বদ্ধপরিকর

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ১৭ জানুয়ারি ২০১৯  

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থায় বিভিন্ন দিক দিয়েই বাংলাদেশের অগ্রগতি হয়েছে এটা অস্বীকার করা যাবেনা। তবে বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যার পর থেকে বরাবরই দেশের প্রায় অর্ধেকের মতো জনসংখ্যার অংশ নারীরা সর্বক্ষেত্রেই লিঙ্গ বৈষম্যের স্বীকার হতো। তবে সেই বঙ্গবন্ধু কন্যার গত টানা দশ বছরের টানা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যে কোনো কাজে নারীদের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণে নিশ্চিতের বিষটিতে সরকারকে সদা তৎপর দেখা গেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘শেখ হাসিনার অনুপ্রেরণায় সরকারের এসব নীতিমালা বাস্তবায়নের প্রোগ্রাম বা প্রকল্পে বেসরকারি খাতের ভূমিকাও অনেক বেশি রয়েছে।’

আজ থেকে প্রায় ১৫ বছর আগেও নারী শিক্ষার কথাটি সমাজে কটু বাক্যে উড়িয়ে দেয়া হতো। কিন্তু বর্তমান সরকারের বিগত টানা ক্ষমতার সময়টিতে শিক্ষাক্ষেত্রেও নারীর অবস্থান হয়েছে দৃঢ়। পুরুষদের সাথে সমান তালে নারী হচ্ছে শিক্ষিত। দেশের মূল চালিকাশক্তিতের পরিণত হয়ে অর্থনীতি উন্নয়ন, শ্রমবাজার ও রাজনীতির উন্নয়নে স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রহণ বা সার্বিক সমতায়ন বা অন্যান্য সূচকের নারী বৈষম্য এরই মধ্যে কমে এসেছে বর্তমান সরকার প্রধানের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায়। পাশাপাশি নারী শিক্ষা অগ্রগতি আরও সহজতর করার জন্য নারীর জন্য চাকরি ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে কোটা সিস্টেম নারী-পুরুষের মধ্যে বৈষম্য কমাতে সাহায্য করছে।

সমাজ বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, একটা সময় বাল্যবস্থায়ই মেয়েরা শিক্ষা থেকে ঝড়ে পড়তো। কিন্তু সরকার বাল্যবিয়ে কমানো, নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ, শিক্ষা-স্বাস্থ্য ও দক্ষতার দিক দিয়ে মানোন্নয়নের ওপর বিশেষ নজর দিয়েছে। গ্রামীণ নারীদের উন্নয়নের জন্য করেছে বিভিন্ন কর্মদক্ষতার মানোন্নয়নের প্রশিক্ষণের ব্যাবস্থা। দিয়েছে অর্থ বরাদ্দও।

সম্প্রতি ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্ট-২০১৮ তে বলা হয়েছে, লিঙ্গবৈষম্য প্রতিবেদনে নারী-পুরুষের সমতার দিক দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় সব দেশের ওপরে স্থান পেয়েছে বাংলাদেশ। ছেলে ও মেয়ে শিশুদের বিদ্যালয়ে ভর্তি, মাধ্যমিকে ছেলে ও মেয়েদের সমতা এবং সরকারপ্রধান হিসেবে একজন নারীর অবস্থানকাল, জন্মের সময় ছেলে ও মেয়ে শিশুর সংখ্যাগত সমতা। অবশ্য শেষেরটির ক্ষেত্রে আমাদের কিছুই করার নেই। তাই বলা যায়, এ সূচকটি না আনা ভালো ছিল। এটা এ প্রতিবেদনের দুর্বল দিক বলে মনে করি।

১৪৯টি দেশের নারী-পুরুষের সমতায়নে চারটি মূল সূচক হলো- নারীর অর্থনৈতিক অংশগ্রহণ ও সুযোগ, শিক্ষায় অংশগ্রহণ, স্বাস্থ্য ও আয়ু এবং রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন। এর ভেতরে আবার ১৪টি উপসূচক আছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত এক যুগে নারী-পুরুষ সমতার ক্ষেত্রে বেশ ভালো উন্নতি হয়েছে বাংলাদেশের।

এক্ষেত্রে ২০০৬ সালে বিএনপির রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৯১তম। তবে আওয়ামী লীগ সরকার আসার পর সার্বিক বৈশ্বিক র‌্যাঙ্কিং অনুযায়ী, বাংলাদেশের অবস্থান ৪৮তম হয়েছে। নারী-পুরুষ সমতায় দক্ষিণ এশিয়ায় প্রতিবেশী দেশগুলো বাংলাদেশের চেয়ে অনেক পিছিয়ে আছে। বাংলাদেশের ঠিক পরে থাকা শ্রীলঙ্কার অবস্থান ১০০তম। নেপাল ১০৫, ভারত ১০৮, মালদ্বীপ ১১৩, ভুটান ১২২ ও পাকিস্তান ১৪৮তম অবস্থান পেয়েছে। সবার শেষে ১৮৯তম স্থানে রয়েছে ইয়েমেন। র‌্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষ পাঁচে রয়েছে- আইসল্যান্ড, নরওয়ে, সুইডেন, ফিনল্যান্ড ও নিকারাগুয়া।

নারী শিক্ষার দিক দিয়ে এবার ১১৬তম অবস্থান রয়েছে দেশ। এর মধ্যে সাক্ষরতার হারের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান ৯৯তম। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ছেলে ও মেয়েদের সমতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বে ১ নম্বর অবস্থান পেলেও উচ্চশিক্ষায় নারী-পুরুষের সমতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান ১২১তম। এরপর স্বাস্থ্য ও আয়ুর সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১১৭। এর উপসূচক আছে দুটি। ছেলে ও মেয়ে শিশু জন্মের সমতায় বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ১ নম্বরে। আর আমৃত্যু সুস্থ জীবনযাপনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান ১২৫তম।
স্বাস্থ্য ও আয়ুর ক্ষেত্রে ৮ ধাপ এগিয়ে ১১৭। রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের সূচকে বাংলাদেশ সবচেয়ে ভালো করেছে। এই সূচকে সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে পঞ্চম হয়েছে। অর্থাৎ পৃথিবীতে যেসব দেশে নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন সবচেয়ে বেশি হয়েছে, তাদের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।

জাতীয় সংসদে নারীর প্রতিনিধিত্বের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান ৮০তম এবং নারী মন্ত্রীর সংখ্যার দিক থেকে ১২৬তম। ব্যক্তিগতভাবে এগিয়ে যেতে নারীদের ইতিবাচক আগ্রহ ও অগ্রগতি থাকলেও কুসংস্কার, পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব ও বিভিন্ন ঝামেলা এড়াতে নারীদের এগিয়ে না আসা প্রভৃতি কারণে ও প্রয়োজনে বিশেষ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে বলে মানছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, লিঙ্গবৈষম্যেকে পেছনে ফেলে সরকার বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নারীদের অগ্রগতির জন্য বাজেট ও কাজ দুটোই বরাদ্দ দিচ্ছে সরকার। আর নারীদের উন্নয়ন সাধনের মাধ্যমে দেশ ও জাতির কাজ চালিয়ে নেয়ার জন্য জনগণের সচেতনতা ও সম্পৃক্ততা বা নারী সম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে সরকারের আরও যত্নশীল হতে হবে– জানাচ্ছেন গুণীমহল।