• শনিবার ০৪ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২০ ১৪৩১

  • || ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫

গণঅভ্যুত্থানের ৫০ বছর

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ২৪ জানুয়ারি ২০১৯  

আজ ২৪ জানুয়ারি। গৌরবময় সেই ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের ৫০ বছর পূর্তি। ৬৯-এর আজকের এই দিনে আইয়ুবের লৌহ শাসনের ভিত কাঁপিয়ে বাংলার ছাত্রসমাজ গণঅভ্যুত্থান ঘটিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন এবং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ছাড়া এত বড় গণজাগরণ বাংলাদেশের ইতিহাসে ঘটেনি, যেমনটি ঊনসত্তরের ২৪ জানুয়ারির গণঅভ্যুত্থানের দিন দেখা গিয়েছিল। ওই বছরের ২০ জানুয়ারি আসাদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে যে আন্দোলন রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল, সেই আন্দোলনের সফল পরিণতি ২৪ জানুয়ারির গণঅভ্যুত্থান।’

পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শাসন, শোষণ ও বঞ্চনা থেকে বাঙালিকে মুক্ত করতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৬ সালে ঐতিহাসিক ৬ দফা ঘোষণা করেন। এরপর স্বাধিকার আন্দোলনের গতি তীব্রতর হলে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধুকে বন্দি করে। এর বিরুদ্ধে দেশব্যাপী ছাত্র-কৃষক-শ্রমিক-জনতার দুর্বার ও স্বতঃস্ম্ফূর্ত গণআন্দোলন শুরু হয়।

একপর্যায়ে সর্বদলীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ ১১ দফা দাবিতে ১৯৬৯ সালের ২৪ জানুয়ারি ঢাকায় হরতালের ডাক দেয়। এর আগে ২০ জানুয়ারি পুলিশের গুলিতে আসাদুজ্জামান আসাদ শহীদ হওয়ায় গোটা পূর্ববাংলা এমনিতেই বিক্ষুব্ধ ও উত্তপ্ত ছিল। ২৪ জানুয়ারির হরতাল চলাকালে এই বিক্ষোভই গণবিক্ষোভ ও গণআন্দোলনে রূপ নেয়। সচিবালয়ের সামনে আবদুল গণি রোডের শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশ গুলি চালায়। এতে বকশীবাজার নবকুমার ইনস্টিটিউটের নবম শ্রেণির মেধাবী ছাত্র মতিউর রহমান রাজপথের চার সঙ্গীর সঙ্গে শহীদ হন। মতিউরদের এই আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে সামরিক শাসক আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে ছাত্র-জনতার ঐক্যবদ্ধ গণআন্দোলন দুর্বার গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়। ডাকসুর তৎকালীন ভিপি ও ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক তোফায়েল আহমেদের নেতৃত্বে ছাত্রসমাজের পাশাপাশি রাজপথে নেমে আসে বিক্ষুব্ধ বাঙালি। গণঅভ্যুত্থানের মুখে সামরিক জান্তা আইয়ুব খান বঙ্গবন্ধুসহ রাজবন্দিদের মুক্তি দেওয়ার পাশাপাশি নিজেও পদত্যাগে বাধ্য হন।

গণআন্দোলনের এই সাফল্যের পথ ধরে সত্তরের নির্বাচনে বাঙালির ঐতিহাসিক বিজয়, বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে বাঙালির মুক্তির দিকনির্দেশনা, একাত্তরের ২৫ মার্চের গণহত্যার পর ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণা এবং মুক্তিকামী নিরস্ত্র বাঙালির সশস্ত্র জাতিতে পরিণত হয়ে ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধ শেষে ১৬ ডিসেম্বরের বিজয় লাভ। তাই এ দেশের মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসে ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান তাৎপর্যপূর্ণ এক মাইলফলক।

গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম নায়ক, সেই সময়ের ডাকসু ভিপি এবং সর্বদলীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক তোফায়েল আহমেদ। বর্তমানে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও বর্ষীয়ান জাতীয় এই নেতা সে সময়ের অগ্নিঝরা দিনগুলোর কথা স্মরণ করে বলেন; এই গণঅভ্যুত্থানের ফলে বঙ্গবন্ধুকে ফাঁসি দেওয়ার যে পরিকল্পনা আইয়ুব খান করেছিল তা বানচাল হয়ে যায়। ‘৬৯-এর ২২ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধুকে নিঃশর্তভাবে ফাঁসির মঞ্চ থেকে মুক্ত করে আইয়ুব খানের পতন ঘটানো হয়। ২৩ ফেব্রুয়ারি ১০ লক্ষাধিক লোকের বিশাল জনসমুদ্রে গণসংবর্ধনা দিয়ে বাঙালী জাতি কৃতজ্ঞ চিত্তে শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করেছিল। সেই সভায় দাঁড়িয়ে জনসমুদ্রের উদ্দেশ্যে আবেগজড়িত কণ্ঠে কৃতজ্ঞচিত্তে তিনি বলেছিলেন; ‘ভাইয়েরা আমার, তোমরা যারা রক্ত দিয়ে জীবন দিয়ে আমাকে কারাগার থেকে মুক্ত করেছো, যদি কোনদিন পারি নিজের রক্ত দিয়ে আমি সেই রক্তের ঋণ শোধ করে যাবো।’

কথা রেখেছেন বঙ্গবন্ধু, তিনি শুধু নিজে রক্ত দেননি, ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট সপরিবারে রক্ত দিয়ে বাঙালী জাতির রক্তের ঋণ তিনি শোধ করে গেছেন।