• সোমবার ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৬ ১৪৩১

  • || ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

সড়কে বিশৃঙ্খলার নেপথ্যে….

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ২১ মার্চ ২০১৯  

আমাদের সড়ক-মহাসড়কে অব্যবস্থাপনায় সড়কের শৃঙ্খলা মারাত্মকভাবে ভেঙে পড়েছে৷ সড়ক ব্যবহারকারী, চালক, মালিক, ট্রাফিক পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ, যে যার মতো করে সড়কে চলছে৷ প্রয়োজনীয় আইন ও বিধি বিধান থাকলেও কেউ তা মানছে না৷ রাজধানীর সড়ক এবং পরিবহন খাত যেন জিম্মি হয়ে আছে কিছু মুনাফা লোভী অসৎ বাস মালিকদের কাছে। দেশের ১৬ কোটি মানুষের জীবনযাত্রায় জড়িত পরিবহন খাত। যার মূল উদ্দেশ্য সেবার বিনিময়ে মুনাফা অর্জন। কিন্তু অর্থনীতির চালিকাশক্তির এ অন্যতম খাতটিকে নিজস্ব সম্পত্তি বানিয়ে নিয়েছে অসাধু একটি চক্র। গায়ে শ্রমিকের তকমা লাগিয়ে পেশির জোরে লুটে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। এসব সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ক্ষমতাসীন বা ক্ষমতার বাইরে থাকা রাজনৈতিক নেতারাও।

রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তারের কারণে পরিবহন সেক্টরে বিশৃঙ্খলা চলছে। সব রুটের চিত্র একই।  শ্রমিক ইউনিয়নগুলোতে প্রভাব বিস্তারেরও চেষ্টা করছে মালিক সমিতি। মালিক সমিতির সুপারিশ ছাড়া বিআরটিএ গাড়ির বুক দেয়া, গাড়ি ও চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স থেকে শুরু করে অনেক কিছুই করতে পারে না। এজন্য অলিখিত নির্দেশনা আছে। রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে দুর্ঘটনা ঘটলেও চালকদের কিছু হয় না বলে অভিযোগ রয়েছে। মালিক সমিতি বেশিরভাগ সময় দুর্ঘটনার পর পুলিশকে ম্যানেজ করে আদালতে দুর্বল চার্জশীট দেয়। ফলে অপরাধীরা ছাড়া পায়। জামিনে বের হয়। কিন্তু মালিকরা সবকিছু থেকে ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়।

পরিবহন সেক্টরের রাজনৈতিক নেতাদের কারণে সরকার এ খাতটি সামাল দিতে ব্যর্থ হচ্ছে বলে মনে করছেন অনেকে। সরকারি কোনো সিদ্ধান্ত বিপক্ষে গেলেই এ খাতকে জিম্মি করছেন তারা। এমনকি পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দিচ্ছেন। এ অবস্থায় পরিবহন খাতে নেয়া সরকারের কোনো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে পরিবহন শ্রমিকদের যথাযথ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে তুললে সড়ক দুর্ঘটনা কমানো সম্ভব হবে। প্রশিক্ষণের প্রধান অন্তরায় মালিক ও শ্রমিক-সংগঠনগুলো। বিশ্বের আর কোথাও এমন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ নেই। শ্রমিকেরা প্রশিক্ষিত হলে, তাদের বৈধ লাইসেন্স থাকলে সংগঠনগুলোর চাঁদাবাজি বন্ধ হয়ে যাবে এই ভয়ে সংগঠনের নেতারা প্রশিক্ষণের বিষয়ে আন্তরিক নন।

এছাড়া অধিক মুনাফা লাভের আশায় রাজধানীর লোকাল গাড়িগুলোর অধিকাংশের মালিকরা বাসগুলোকে শ্রমিকদের কাছে ‘কন্ট্রাক্ট’ দিয়ে রেখেছেন। ফলশ্রুতিতে একদিকে বাস মালিকের হাতে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ তুলে দেওয়ার চাপ অন্যদিকে চুক্তির অর্থ দেওয়ার পর অতিরিক্ত অর্থ উপার্জনের মাধ্যমে নিজের জীবিকা নির্বাহের চাপ নিয়েই গাড়ি চালাতে হয় বাস চালকদের। ফলে স্বাভাবিকভাবেই কম সময়ে বেশি যাত্রী পরিবহনের মাধ্যমে অধিক অর্থ উপার্জনের আশায় রাজপথে বেপরোয়াভাবে বাস চালায় তারা, একই রুটে চলমান অন্য বাস থেকে বেশি যাত্রী পরিবহন করতে শুরু হয় এক অসুস্থ প্রতিযোগিতা।  মালিকদের ব্যবসা যদি শ্রমিকদের হাতে তুলে দেওয়ার ‘কন্ট্রাক্ট’ প্রথা বন্ধ করা যায় তাহলে রাস্তার অসুস্থ প্রতিযোগিতা বন্ধ হয়ে যাবে বলে ধারণা করছেন অনেকে।